• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
খালেদা সংসদে যেতে রাজি হলে বাধা নেই আ.লীগের!

ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতি

খালেদা সংসদে যেতে রাজি হলে বাধা নেই আ.লীগের!

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ০৪ মে ২০১৯

বিএনপির কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজি হলে পুনর্নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিজয়ী হয়ে যেন জাতীয় সংসদে যেতে পারেন, এ ‘কৌশল’ সামনে রেখেই দলটির মহাসচিব নির্বাচিত হয়েও শপথ নেননি। বগুড়া-৬ সংসদীয় আসনে অনুষ্ঠেয় পুনর্নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে প্রার্থী করতে চান বিএনপির শীর্ষ নেতাদের একটি অংশ, এমন জোর প্রচারণা চলছে রাজনীতিতে। খালেদা জিয়া আইনি প্রক্রিয়ায় কারাগারের বাইরে এসে নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে তাতে আওয়ামী লীগের বাধা দেওয়ার কিছু নেই বলে জানান ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারকরা। তাকে সংসদে পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা বিএনপি বাস্তবায়ন করতে চাইলে আওয়ামী লীগের তাতে আপত্তির কোনো সুযোগ নেই বলেও মনে করে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব।

সূত্র জানায়, বিএনপি মহাসচিবের শপথ না নেওয়া বগুড়া-৬ সংসদীয় আসনে পুনর্নির্বাচন হলে খালেদা জিয়াকে প্রার্থী করতে আগ্রহী দলের শীর্ষ কয়েক নেতা। তিনি সংসদে যোগ দিলে সংখ্যায় কম হলেও সংসদীয় রাজনীতিতে বিএনপির আগের শক্তিশালী অবস্থান পুনরুদ্ধার করা সম্ভব বলে মনে করেন তারা। দাবি অনুযায়ী নির্দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত না হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি ও এর নেতত্বের জোট। ফলে দলটি সংসদ ও মাঠের রাজনীতিতে দিনে দিনে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। সংখ্যায় কম হলেও মাঠের রাজনীতির পাশাপাশি একাদশ সংসদেও খালেদার নেতৃত্বে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করেন তারা। সংসদে গিয়ে তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিকে জোরালো করতে চান।

দলের সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়ার পর সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন, তা নিয়ে বিএনপির মধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা ও তদবির। তবে সংরক্ষিত আসনে প্রার্থীকে মনোনয়ন ও পুনর্নির্বাচনের আগেই বিএনপির মূল চিন্তা দলীয় প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কারাগার থেকে মুক্তি। সব মিলিয়ে মুক্তির ব্যাপারে ক্ষমতাসীনরা এখন আগের চেয়ে অনেক নমনীয় বলেও তারা আঁচ করছেন।

আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া পুনর্নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে রাজি হলে তা হবে নিতান্তই বিএনপির বা দলীয় সিদ্ধান্ত। তবে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় আওয়ামী লীগও তীক্ষ নজর রাখছে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের কৌশল ও দলটির কয়েক নেতার পরিকল্পনার দিকে। রাজনীতিতে অনেক সময়ই অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে থাকে বা ঘটে আসছে। সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার তোড়জোড়ের বিষয়টিকেও ক্ষমতাসীন দলটি ইতিবাচকভাবে দেখছে। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারবিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে উন্নত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করতে চায় সরকার। এর অংশ হিসেবে বিএনপির শপথ নেওয়া পাঁচ সংসদ সদস্যকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব সংসদে যোগ না-দেওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘সংসদে মাথাছাড়া ধড় পাঠিয়ে কোনো লাভ হবে না।’ বগুড়ার আসনটিতে পুনর্নির্বাচনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাউকে সংসদে যোগ দেওয়ার আহ্বানও জানান নাসিম। আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ মনে করেন, ‘বিএনপির মহাসচিবের শপথ না-নেওয়া দলীয় কৌশল নয়, অপকৌশল। দলটি এখন রাজনৈতিক অপকৌশল করে নিজেদের ভাঙনের জন্য অপেক্ষা করছে।’

বিএনপির সূত্রমতে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলটি থেকে নির্বাচিত ছয় সংসদ সদস্যের মধ্যে পাঁচজনের শপথ নেওয়া আর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শপথ না-নেওয়ার পর দলটির কৌশল নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। পাঁচজন কেন শপথ নিলেন আর মহাসচিব কেন নেননি, এসব নিয়ে এখনো অন্ধকারে দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারাও। তবে বগুড়ার একটি সংসদীয় আসনে পুনর্নির্বাচনে দলের চেয়ারপারসনকে প্রার্থী করতে আগ্রহী দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশ, এমন পরিকল্পনার কথা অনেক নেতাই ইতোমধ্যে জেনেছেন। এ বিষয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন। তবে খালেদা পুনর্নির্বাচনে নিজে অংশ নিতে রাজি হবেন কি না, এ বিষয়ে বিএনপির অনেক নেতা নিশ্চিত নন। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের কোনো কোনো নেতা বিষয়টিকে ‘সরকারের সঙ্গে দলের একাংশের গোপন সমঝোতা’ বলেও সন্দেহ করছেন।

দলীয় সিদ্ধান্ত হলেও বিএনপির মহাসচিব কেন শপথ নেননি, তা নিজেই জানাবেন বলে গতকাল শুক্রবার আশা করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘এটা আমার কাছেও খটকা লাগল। দলের সিদ্ধান্তে বাকি সবাই সংসদে গেলেন, তিনি তো মহাসচিব, তিনি কেন গেলেন না? তিনি কেন সিদ্ধান্ত নিলেন না? আমরা তার সিদ্ধান্ত জানতে পারব, তিনি ব্যাখ্যা করলে। আশা করি, তার উত্তরে তিনি আমাদের সন্তুষ্ট করতে পারবেন।’

তথ্যমতে, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। তিনি তিনটি আসন থেকে প্রার্থী হতে চাইলেও তা পারেননি। তার বগুড়া-৬ আসনে শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বগুড়ার আসনে তিনি জয়ীও হন। মির্জা ফখরুল নির্বাচিত হয়েও শেষ পর্যন্ত ‘কৌশলগত কারণে’ শপথ নেননি বলে দাবি করছেন তিনি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি শপথ না নেওয়ায় আসনটি শূন্য ঘোষিত হয়।

সংবিধান অনুযায়ী, কোনো সংসদের প্রথম বৈঠক থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচিতের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ৩০ জানুয়ারি সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে। এ হিসাবে গত ২৯ এপ্রিল সংসদ অধিবেশনের ৯০ দিন শেষ হয়। শপথ না-নেওয়ায় বগুড়া-৬ আসনে এখন পুনর্নির্বাচন হবে বলে জানায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads