• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
শুদ্ধি অভিযান নিয়ে আ.লীগে সংশয়

আওয়ামী লীগের লোগো

রাজনীতি

শুদ্ধি অভিযান নিয়ে আ.লীগে সংশয়

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ১২ জুন ২০১৯

আওয়ামী লীগে ঠাঁই নেওয়া অনুপ্রবেশকারী ও বহিরাগতদের চিহ্নিত করে দল থেকে বাদ দেওয়ার শুদ্ধি অভিযান শুরুর আগেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে নানা সংশয় দেখা দিয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা যেভাবে বলা হচ্ছে, বাস্তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হয় কি-না, এ বিষয়ে সন্দিহান তৃণমূলের অনেকে। অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে দলের দাপুটে ও প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে। বহিরাগতদের দলে ভিড়িয়ে তারা নিজেদের অনুসারী ও দলবলের সংখ্যা ভারী করে নানা ফায়দা লুটছেন। এসব নেতা অভিযান চলাকালে নানা কায়দাকানুন করে সুবিধাভোগী ও অনুপ্রবেশকারীদের দলে রাখার চেষ্টা করবেন বলেও তৃণমূলের সন্দেহ।

তৃণমূলের অভিযোগ, অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন দলের যেসব কেন্দ্রীয় নেতা, তাদের মধ্যে কয়েকজনের হাত ধরেও জামায়াত-বিএনপি নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব নেতা চাপে পড়ে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলেও তাদেরকে দল থেকে বের করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপের পক্ষে থাকবেন বলে মনে করেন না তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। দলের টিকেটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের ছত্রছায়ায় অনুপ্রবেশকারীরাই দেশের বিভিন্ন এলাকায় মুখ্য ভূমিকা রাখছেন। তাদের প্রভাবে কোণঠাসা ত্যাগী নেতাকর্মীরা। নব্য আওয়ামী লীগারদের অপকর্মের কারণে শুধু তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই নন, দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও ‘বিস্মিত’ হতে হচ্ছে।

জানা যায়, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল সম্প্রতি বিদেশে থাকার সুযোগে তার সংসদীয় এলাকার যুবলীগ নেতা রাশেদুজ্জামান জুয়েল মণ্ডলকে এক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। একে ‘ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা’ দাবি করে ওই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দলের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা অনুপ্রবেশকারীরাই তাকে গ্রেপ্তারের ষড়যন্ত্র সাজায়। বিষয়টি স্বীকার করে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘ওমরায় যাওয়ার একদিনের মাথায় ঘটনাটি ঘটে। জুয়েল মণ্ডল রাজনীতিতে অত্যন্ত স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন কর্মী। মামলাটি সাজানো নাটক। জামায়াত-বিএনপির একটি চক্র দলে প্রবেশ করেছে, এমনকি প্রশাসনেও আছে। তারা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য নানা অন্যায়-অপরাধ করে বেড়াচ্ছেন।’

আওয়ামী লীগ সূত্রের ধারণা, গত দশ বছরে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে সারা দেশে জামায়াত, শিবির, বিএনপি ও অন্যান্য দলের কমপক্ষে ৬০ হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক আওয়ামী লীগে যোগ দেন। অনেকে অতীতের পরিচয় গোপন করছেন, আবার অনেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে দলে ভিড়েছেন বলেও অভিযোগ আছে। অতীতের নানা মামলা থেকে রেহাই পেতেও অনেকে এখন সরকারি দলের ছায়ায় আছেন। দলে যোগ দিয়েই তারা তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও কমিটির পদ দখল করেন। তৃণমূল আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন জামায়াত-বিএনপি থেকে আসা নেতাকর্মীরা।

দলীয় সূত্র জানায়, অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে জোরালো শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। অভিযানের লক্ষ্যে সারা দেশে সাংগঠনিক সফরের জন্য দলের গঠিত আটটি বিভাগীয় টিম শিগগির পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করবে। আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে দলে ঠাঁই নেওয়া বহিরাগত ও নানা অপকর্মে জড়িতদের চিহ্নিত করে দল থেকে বের করে দেওয়ার পাশাপাশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে শুদ্ধি অভিযানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের দলীয় পদ থেকে সরিয়ে জনপ্রিয়, ত্যাগী ও সৎ নেতাদের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। আগামী জাতীয় সম্মেলনের আগপর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সারা দেশে দলকে চাঙা ও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে সরকারি দল।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, দলের আটটি বিভাগীয় টিমের লক্ষ্য- সারা দেশের বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন করা, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন এবং বিএনপি ও জামায়াতসহ অন্যান্য দল থেকে দলে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া অনেক নেতার বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে দলটি। কারো কারো বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দৃশ্যমান না হলেও কোনো না কোনোভাবে শাস্তির আওতায় আসবেন অনুপ্রবেশকারীরা। তৃণমূল পর্যায় থেকে দলের নেতাকর্মীদের তথ্যভান্ডার তৈরিতেও কাজ চলছে। দলের আগামী জাতীয় সম্মেলনের আগেই অভিযান শেষ করার পরিকল্পনা করছেন নেতারা। আওয়ামী লীগ সভাপতি, বঙ্গবন্ধুতনয়া ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী দলকে চাঙা করতে চলতি বছরের অক্টোবরেই জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে। অক্টোবরে শেষ হচ্ছে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ।

সূত্র জানায়, আ.লীগের রাজনীতিতে গত কয়েক বছর ধরে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন অনুপ্রবেশকারীরা। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল প্রকট হয়ে দেখা দেয়। বেশিরভাগ উপজেলাতেই নৌকার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেন দলের নেতাকর্মীরা। নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী অনেক নেতার বিরুদ্ধে নানাভাবে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ ওঠে।

সম্প্রতি ফেনীতে মাদরাসাশিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির নাম উঠে আসে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন আরো কয়েকজনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা থাকা নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়। এর আগে নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুনের ঘটনায়ও আওয়ামী লীগ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে বলে দলটির অনেকে মনে করেন। দেশের আরো কয়েকটি এলাকায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির জেরে সংঘর্ষের খবর উঠে আসে গণমাধ্যমে। এসব ঘটনা সরকার ও আওয়ামী লীগকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। তাই দলে শুদ্ধি অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads