• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
মেয়াদোর্ত্তীর্ণ কমিটিতে গতিশীলতা নেই

ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতি

আ.লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন কবে

মেয়াদোর্ত্তীর্ণ কমিটিতে গতিশীলতা নেই

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ১৭ জুন ২০১৯

আওয়ামী লীগের ২২তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলেও খবর নেই দলটির সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলনের। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ পার হয়ে গেলেও ওই কমিটি দিয়েই চলছে সংগঠনগুলো। দুই বছর মেয়াদের কমিটির প্রায় চার বছর হলেও নতুন কমিটি পায়নি ক্ষমতাসীন দলের চারটি সহযোগী সংগঠন। অধিকাংশ সহযোগী সংগঠনের অবস্থা প্রায় একই। মেয়াদোর্ত্তীণ কমিটির কারণে এসব সংগঠনে গতিশীলতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন নেতৃত্বও উঠে আসছে না বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের দাবি, বিভিন্ন পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠান যথাসময়ে করা সম্ভব হয়নি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের বিধ্বংসী রাজনীতি ও বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়াসহ একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া মিলিয়ে পারিপার্শ্বিক ব্যস্ততার কারণে সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। নতুন কমিটি নির্বাচন ঝুলে যাওয়ায় সংগঠনগুলোর ভেতরে এক ধরনের অচলায়তন বা অচলাবস্থার সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করছেন না কেন্দ্রীয় নেতারা। চলতি বছরের অক্টোবরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলনের আয়োজন সম্ভব হবে কি না, এ বিষয়ে সন্দিহান কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অনেকে।

দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে সংগঠনগুলোর কমিটির জন্য শীর্ষ নেতৃত্বের পরিকল্পনা আছে। ইতোমধ্যে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর মধ্যে যাদের মেয়াদ পার হয়ে গেছে, সেগুলোর কেন্দ্রীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলটির নীতিনির্ধারণী মহল চাইছে, জাতীয় সম্মেলনের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন শেষ করতে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও একই ধরনের কথা বলেন। তাদের দাবি, তারা সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত আছেন ও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। তবু দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকেরই প্রশ্ন, সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন কবে?

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘এ বছরের মধ্যে আমরা দলের জাতীয় সম্মেলন করার। সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের সহযোগী সংগঠনগুলোরও কমিটি করা হবে। সেটা এ সময়ের মধ্যে যতটা সময় পাই, এর মধ্যে করার চেষ্টা হবে। এ বছর না হলে আগামী বছরের প্রথম দিকে করা হবে।’

আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর মেয়াদ দুই বছর। কিন্তু চার বছর হয়ে গেলেও নতুন কমিটি পায়নি দলের চারটি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। দলের গঠনতন্ত্রের ২৫ (২)-এর (ক) ধারা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের স্বীকৃত সহযোগী সংগঠনের সংখ্যা সাতটি। সেগুলো হলো- মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, যুব মহিলা লীগ ও তাঁতী লীগ। সাতটি সহযোগী সংগঠনের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে ২০১২ সালের ১১ জুলাই। একই বছরের ১৪ জুলাই সম্মেলন হয় আওয়ামী যুবলীগের। ওই বছরের ১৯ জুলাই হয় কৃষক লীগের সম্মেলন। আর ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর মধ্যে জাতীয় শ্রমিক লীগের সবশেষ সম্মেলন হয় ২০১২ সালের ১৭ জুলাই।

অন্যদিকে আগামী অক্টোবর মাসে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের জোরালো প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। আগামী ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে এ দলের নেতৃত্বের সরকার। এর আগেই দলকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে তৃণমূলে সাংগঠনিক সফর শুরু করেছেন দলের দায়িত্ব পাওয়া কেন্দ্রীয় নেতারা। সদ্য শেষ হওয়া পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে থেকেই জেলায় জেলায় চলছে দলটির সাংগঠনিক সফর। এর মধ্য দিয়ে নেতারা তুলে আনছেন তৃণমূলে সংগঠনের প্রকৃত চিত্র।

দলের সাংগঠনিক আটটি টিমে ভাগ হয়ে তৃণমূলের নেতাদের কথা শুনছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সমাধান করছেন দীর্ঘদিনের কোন্দলের। পাশাপাশি দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়া জেলাগুলোতে সম্মেলন করে নতুন কমিটি দেওয়ার প্রস্তুতিও চলছে। তবে টাকা-পয়সার বিনিময়ে এসব কমিটিতে যেন বিএনপি-জামায়াত থেকে দলে অনুপ্রবেশকারীরা সুযোগ না পান, সেজন্য সতর্কতা অবলম্বন করছে কি না দল, এমন প্রশ্নও আছে তৃণমূলে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ের নেতারা ইউনিয়ন পর্যায়ে যাচ্ছেন কি না, কর্মী ও পরামর্শক বৈঠক করছেন কি না, সংসদ সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কি না— এসব তথ্য সংগ্রহের মধ্য দিয়ে আমরা এমন একটি জায়গায় যাচ্ছি, যেন সারা দেশে দলের চিত্র আমাদের সামনে থাকে। আমরা এসব তথ্য দপ্তরে দিচ্ছি, নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) এগুলো পর্যালোচনা করছেন।’

কেন্দ্রীয় নেতাদের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছরই শেষ হচ্ছে আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ। আগামী ২৩ অক্টোবর দলটির তিন বছরমেয়াদি কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। আগামী সম্মেলনের মাধ্যমে সরকার ও দল আলাদা করার ভাবনা বাস্তবে প্রয়োগ করতে গেলে যারা দলে সুযোগ পাবেন না, তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে পরে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হতে পারে। আলোচিত ও প্রবীণ নেতাদের মধ্যে যারা এবারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাননি, আওয়ামী লীগ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে পারেন তারা। দল পরিচালনায় তাদের বর্তমান কার্যক্রম বিবেচনা করে পরে দলের শীর্ষ পদ দেওয়া হতে পারে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads