• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
রাজনীতির মাঠে ‘স্পেস’ অভাব

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি

অভিযোগ ১৪ দলের

রাজনীতির মাঠে ‘স্পেস’ অভাব

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ২৬ জুন ২০১৯

রাজনীতির মাঠে ‘গণতান্ত্রিক স্পেস’ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন ১৪ দলের শরিক নেতারা। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের এ জোটের নেতাদের অভিযোগের তীর আওয়ামী লীগেরই বিরুদ্ধে। ‘গণতান্ত্রিক স্পেস’ বা মাঠের রাজনীতিতে সব দলের জন্য সমান সুযোগ না থাকায় ১৪ দলের শরিক কোনো কোনো দল ‘সাংগঠনিকভাবে দাঁড়াতেও পারছে না’ বলে মনে করেন দলগুলোর নেতারা। বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে দলগুলো আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন। সদ্য শেষ হওয়া পাঁচ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও কোনো কোনো শরিক দল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ‘নেতিবাচক আচরণে তিক্ত অভিজ্ঞতার’ মুখোমুখি হন বলে দাবি তাদের।

১৪ দলীয় জোট সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকে কানো কোনো শরিক দলের নেতা মাঠে ‘গণতান্ত্রিক সুযোগের’ অভাবের কথা দলীয় কর্মসূচিতে দেওয়া বক্তব্যে ইঙ্গিত করে আসছেন। এখন কেউ কেউ বিষয়টি জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যেও উপস্থাপন করছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে জোটের তিনটি শরিক দল ‘নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ’ও তুলে ধরেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে গঠিত নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই না পাওয়ার পর থেকে শরিকরা নানা বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করে আসছে। তবে মন্ত্রিসভায় স্থান না পেলেও প্রকাশ্যে সরকারের একেবারোই সমালোচনামুখর নয় কয়েকটি দল। ভবিষ্যতে মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা তৈরি হয় কি না, সেদিকেই তাকিয়ে আছে দলগুলো। যদিও পরবর্তী সময়ে মন্ত্রিসভায় যুক্ত হওয়ার আশা করা হলেও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের বক্তৃতা-বিবৃতিতে তেমন সম্ভাবনা দেখছেন না কেউ কেউ।

১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন গত ১৯ জুন জাতীয় সংসদে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলের শরিকদের নিজ পায়ে দাঁড়াতে বলেছেন। কিন্তু গণতান্ত্রিক স্পেস না থাকলে কেউ সংগঠন, আন্দোলন ও ভোট নিয়ে এগোতে পারে না।’

এ সময় তিনি নির্বাচন ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বলেন, ‘রোগ এখন উপজেলা নির্বাচন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। পাঁচ দফা উপজেলা নির্বাচনে তার দল, এমনকি আওয়ামী লীগের নিজ দলের প্রার্থীদের অভিজ্ঞতা করুণ। নির্বাচন কমিশন (ইসি), প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং তাদের যোগসাজশ রয়েছে। এর ফলে নির্বাচন ও সামগ্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘টানা ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকলেও রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় শহর ছাড়া ১৪ দলের শরিক কয়েকটি দলের তেমন সাংগঠনিক অস্তিত্ব নেই। দলগুলোর নানা সুযোগ থাকা ও সরকারে থাকার সুবাদেও প্রত্যাশিত সাংগঠনিক অবস্থান গড়ে তুলতে পারেনি। কোনো দলের সাংগঠনিক ভিত্তি অন্য দল মজবুত করে দিতে পারে না, দলগুলোর নিজেকেই তা করতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘১৪ দলের শরিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো নিজের সাংগঠনিক অবস্থার দিকে আরো বেশি নজর দিয়ে সাংগঠনিক অবস্থা শক্ত করতে পারলে মিত্র হওয়ায় আওয়ামী লীগেরই লাভ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আওয়ামী লীগ চায়, দলগুলো সাংগঠনিকভাবে যেন দাঁড়াতে পারে আরো শক্ত হয়ে।’

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর মহাজোট ও ১৪ দলের শরিকদের সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসার প্রস্তাব দেয় সরকারি দল। উন্নত গণতান্ত্রিক বিভিন্ন রাষ্ট্রের সংসদে বিরোধী দলগুলো সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করে যে ভূমিকা পালন করে থাকে, তেমন বিরোধী দলের ভূমিকায় শরিক দলগুলোকে দেখতে চায় আওয়ামী লীগ। বিরোধী দলে থাকলে ১৪ দলের শরিকরা নিজ দলের সাংগঠনিক অবস্থার দিকে আরো বেশি নজর দিতে পারবে বলেও মনে করেন ক্ষমতাসীনরা। তা ছাড়া প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতৃত্বের ঐক্যফ্রন্ট মাত্র আটটি আসন নিয়ে সংসদে বিরোধী দলে হতে পারেনি। ঐক্যফ্রন্টের তুলনায় আওয়ামী লীগের শরিকদের আসন কয়েকগুণ বেশি। এসব কারণে শরিকদের অনেকটা দূরে রাখছে আওয়ামী লীগ।

তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অভাবনীয় বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ ‘একলা চলো নীতি’ অনুসরণ করছে বলে অভিযোগ ১৪ দলের শরিকদের। দলগুলোর প্রতি আগের মতো আওয়ামী লীগের আর ‘আগ্রহ’ নেই বলেও অভিযোগ কোনো কোনো নেতার। একই প্রতীকে ভোট করার পর তাদের বিরোধী দলে পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। সরকারের চাওয়ামতো বিরোধী দলে গেলে ‘আদর্শিক এ জোটের ঐক্য অটুট থাকবে না’ বলেও তারা যুক্তি দেখাচ্ছেন।

উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আলাদা অংশ নেওয়াকেও ‘একলা চলো নীতি’ হিসেবে বিবেচনা করে জোটের মিত্ররা। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, ভোটের মাঠের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্ট উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় মহাজোট ও ১৪ দল জোটগতভাবে অংশ নিলে নির্বাচন একেবারেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হয়ে পড়ত, যা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব কিছুতেই চায় না। ঐক্যফ্রন্টের অনুপস্থিতিতে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে জোটের শরিক দলগুলোকে আলাদা অংশ নেওয়ার পরামর্শ দেয় আওয়ামী লীগ। বেশিরভাগ উপজেলায় দলগুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রম না থাকায় প্রার্থী দিতে পারেনি। কোনো কোনো উপজেলায় শরিক দলগুলোর সাংগঠনিক অবস্থা চাঙ্গা হলেও সেখানেও নির্বাচন নিয়ে তাদের তেমন উৎসাহ ছিল না। মাঠে নামলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে তাদের সংঘাত হতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে প্রার্থী দেয়নি। কয়েকটি উপজেলায় প্রার্থী দিলে সেখানে শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সংঘাতে জড়ানোর অভিযোগও আছে কোনো কোনো দলের।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads