• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
আত্মতৃপ্তিতে গা ছাড়া তৃণমূল আওয়ামী লীগ

ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতি

আত্মতৃপ্তিতে গা ছাড়া তৃণমূল আওয়ামী লীগ

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ১১ জুলাই ২০১৯

টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অনেকে ‘আত্মতৃপ্তিতে’ ভুগছেন। ক্ষমতাসীন দলের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রাজনীতির মাঠে ‘দুর্বল ও কোণঠাসা হওয়ায়’ ও তাদের রাজনৈতিক তৎপরতা না থাকায় গা ছাড়া ভাব দেখা দিয়েছে তৃণমূলে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর তৃণমূলের গা ছাড়া ভাব আরো বেড়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকারের দৃশ্যমান অবকাঠামোগত নানা উন্নয়ন ও রাজনীতির মাঠ একচ্ছত্রভাবে নিজেদের দখলে থাকার কারণেও ‘ঝিমুনি ভাব’ নেতাকর্মীদের মধ্যে ভর করেছে।

দলীয় কর্মসূচি পালন ও উদযাপন করে সংগঠনকে আরো জনমুখী করার উদ্যোগ অনেক নেতাকর্মীর মধ্যেই নেই। মাঠে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর জোরালো উপস্থিতি না থাকায় দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নের বদলে অনেকেই ব্যস্ত তদবির, কোন্দল ও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে। কেন্দ্রে নিয়মিতভাবে ১৪ দলের জোটের সঙ্গে বৈঠকসহ কোনো কোনো কর্মসূচি থাকলেও তৃণমূলে জোটগত কার্যক্রমও তেমন নেই। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে সতর্ক করা হলেও তৃণমূলের অনেকের মধ্যে ‘আত্মতৃপ্তির’ ভাব কাটছে না বলে দলের শীর্ষ পর্যায়ের সূত্র বাংলাদেশের খবরকে জানায়।

সরকারি দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অনেক আদেশ-নির্দেশও গত কয়েক বছর ধরে তৃণমূলে উপেক্ষিত হচ্ছে। আদেশ-নির্দেশ না মানা নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো দলীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। ফলে নেতাকর্মীর মধ্যে এক ধরনের ঢিলেঢালাভাব চলে এসেছে। তৃণমূলের অনেকে দেশের প্রচলিত আইন ও দলীয় গঠনতন্ত্র মানতেও যেন নারাজ।

চলতি বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই সারা দেশের তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ে সম্মেলন শেষ করার নির্দেশ দেয় আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে গত সপ্তাহের মধ্যে দলের নতুন সদস্য সংগ্রহ ও পুরনোদের নবায়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি এবং দলের নিজস্ব কার্যালয়ের ঠিকানা স্থায়ী কি না— এসব তথ্য তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানাতে বলা হয়। অনেক এলাকা থেকেই তথ্যগুলো দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানানো হয়নি।

জেলা ও উপজেলায় নিজস্ব কার্যালয় নির্মাণে কয়েক বছর আগে দেওয়া দলের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি আজও। দলে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কেন্দ্রের নির্দেশও উপেক্ষিত দীর্ঘদিন ধরে। ত্যাগী ও প্রবীণ নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরিতে কেন্দ্রীয় নির্দেশ পালন করেনি তৃণমূল। সর্বস্তরের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার চিঠি তৃণমূলে গেলেও গা করেনি অধিকাংশ সাংগঠনিক ইউনিট। কেন্দ্র থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত দলীয় নেতাদের তথ্য চেয়েও পায়নি আওয়ামী লীগ। চলতি বছর পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থীদের বিরোধিতাকারীদের নাম চাওয়া হয় তৃণমূলের কাছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো তা কেন্দ্রে জমা হয়নি।

দলীয় সূত্রমতে, মেয়াদ পার হওয়া কমিটি দিয়ে চলছে টানা দশ বছরের বেশি সময় ধরে সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ তৃণমূল। অনেক জেলা ও উপজেলায় সম্মেলন হচ্ছে না নিয়মিত। অনেক জেলার কমিটির নির্ধারিত সময় পার তো হয়েছেই, সঙ্গে এক যুগেরও বেশি কেটে গেছে। ফলে এসব এলাকায় দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে প্রত্যাশিত গতি নেই। কোথাও কোথাও সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়েও পড়েছে। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে আশ্বাস পেলেও অনেক এলাকার নেতাকর্মীরা নির্ধারিত সময়ে নতুন কমিটি পাননি। তবে নতুন কমিটি না থাকলেও সাংগঠনিক পরিচয় কাজে লাগিয়ে অনেকেই ‘সুযোগ-সুবিধা’ বাগাতে ব্যস্ত আছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তূপ জমা হচ্ছে।

নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগেই তৃণমূলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল ও সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনে বিভিন্ন নির্দেশের পাশাপাশি দলের নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরুর বিষয়েও প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এবার সদস্য সংগ্রহ অভিযানে গতি বাড়াতে শুরু থেকেই সচেষ্ট কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। গত দুবারের মতো যেন হঠাৎ অভিযান গতিহীন হয়ে না পড়ে, এ বিষয়েও সতর্ক দল। সবশেষ ২০১৭ সালে সাড়ম্বরে দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও পরের বছর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের জোয়ারে তা অনেকটাই স্তিমিত হয়ে যায়। ওই অভিযানের মধ্য দিয়ে নতুন ভোটারসহ দুই কোটি নতুন সদস্য করার টার্গেট ছিল আওয়ামী লীগের। এর আগে ২০১০ সালে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও ওই বছরও তা বেশিদিন চলেনি। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে, নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিয়ে প্রতি তিন বছর অন্তর দলের সদস্যপদ নবায়ন করতে হয়। আর নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানও সময় সময় করা হয়।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলওয়ার হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে আরো শক্তিশালী ও গতিশীল করার লক্ষ্যে দল কঠোর অবস্থানে রয়েছে। কারণ দলের তৃণমূল পর্যায়ে অনেক স্থানেই দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন হয় না। ইতোমধ্যে জেলাগুলোকে সম্মেলন করার তাগিদ দিলেও তা করেনি। বরং তারা কালক্ষেপণ করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দলের পক্ষ থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাই জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে এগুলো শেষ করা হবে।’

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, এবার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে’ সংকটাপন্ন জেলা ও উপজেলাগুলোতে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি করার ঘোষণা দেওয়ায় তৃণমূলে চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। কারণ, এর মধ্যে তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দিয়ে আটটি বিভাগীয় টিম গঠন করে দেন। তৃণমূল কমিটি গঠনের লক্ষ্যে অনেক জেলায় বর্ধিত সভাও শেষ করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রবীণদের যথাযথ মর্যাদা ঠিক রেখে আর নতুন ও ত্যাগী তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে তৃণমূল কমিটি গঠন করা হবে বলে আশাবাদী তৃণমূল।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে, জেলা, মহানগর, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটির নেতাদের নিয়ে জাতীয় কাউন্সিল গঠন হবে। ২০১৬ সালের অক্টোবরের জাতীয় কাউন্সিলের আগে অধিকাংশ জেলা, মহানগর ও উপজেলা কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি করা হয়। তবে অনেক জেলা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। আরেকটি জাতীয় সম্মেলনের আগে তাই মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া কমিটিগুলোর কাউন্সিল করতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads