• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
কারা প্রকোষ্ঠে আর কত ঈদ

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি

কারা প্রকোষ্ঠে আর কত ঈদ

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ১১ আগস্ট ২০১৯

বিএনপি নেতারা 'ঈদের আগেই' তাদের নেত্রীর কারামুক্তির আশা করেছিলেন; কিন্তু ১৭ বছরের সাজা নিয়ে আরো একটি ঈদ কারাগারেই কাটাবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। চিকিৎসার জন্য তিনি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে আছেন।

তাই সেখানেই এবারের ঈদ উদযাপন করবেন তিনি। এর আগে, কারাগারে পাঁচবার ঈদ করতে হয়েছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। তিন যুগের বেশি সময় রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়াকে মোট ছয়টি ঈদ কারা হেফাজতে কাটাতে হলো।

গত পাঁচ ঈদেই কারাগারের সামনে শোডাউন করেন বিএনপি নেতারা। গত এক বছরে মুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেননি বন্দি খালেদা জিয়া, তাই সিদ্ধান্তের বাইরে পদক্ষেপ নিতে পারেনি পরিবারও।

গত ১৮ মাস ধরে বন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এর মধ্যে ১৩ মাসের বেশি সময় ধরে তাকে রাখা হয় ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারে। সেখানে তিনিই একমাত্র বন্দি ছিলেন। গত এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অবশ্য বিশেষ বিবেচনায় দীর্ঘদিনের গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমকে তার সঙ্গে রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

দুর্নীতি ছাড়াও রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, ভূয়া জন্মদিন পালনের মতো অভিযোগে মোট ৩৭টি মামলা রয়েছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে নিম্ন আদালতে ৩৭টিতেই জামিন মিলেছে। তবে উচ্চ আদালতে আটকে আছে দুই মামলা। তাই খালেদার কারামুক্তি ঘটছে না বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শাইরুল কবির খান বাংলাদেশের খবরকে জানান, গত ৪ জুন অনুষ্ঠিত ঈদুল ফিতরের দিন খালেদা জিয়া ছোট ছেলের স্ত্রীসহ স্বজনরা রান্না করা খাবার নিয়ে হাসপাতালে যান। কিন্তুত কারাবিধি ও আনুষ্ঠানিকতা শেষে খালেদা জিয়াকে সে খাবার খেতে হয়েছে ১৭ ঘণ্টা পরে। এবারও পরিবারের সদস্যরা যাবেন কোরবানির গোশতসহ ঈদ আয়োজনের খাবার নিয়ে। গতবারের মতো এবারও যেতে পারেন খালেদা জিয়ার বোন সেলিনা ইসলাম ও তার স্বামী রফিকুল ইসলাম, ভাই সাঈদ ইস্কান্দারের স্ত্রী, তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বড় বোন, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর শ্বাশুড়ি, ভাই শামীম ইস্কান্দারের ছেলে অভিক ইস্কান্দার।

কারাগারে নেয়ার আগেই খালেদা জিয়া বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। কারাবন্দি হওয়ার পর বেড়ে ডায়াবেটিস। নিয়ন্ত্রণে আসছে না। তার ডান-বাম দুই হাতের শোল্ডার অবশ হয়ে গেছে। চোখের সমস্যাও আছে। কিছু না খেতে পেরে দুর্বল হয়ে পড়েছেন তিনি। ব্যক্তিগত কাজেও দুইজনের সহযোগীতা নিতে হয় বলে দাবি বিএনপি মহাসচিবের। বিএনপিপন্থী চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়ে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করে নামমাত্র কর্মসূচিও দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বছরজুড়েই কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দলীয় প্রধানের মুক্তির জন্য কঠোর কর্মসূচির জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিলেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। পুলিশি নির্যাতন, গুম-খুনসহ বিভিন্ন নেতিবাচক দিকগুলো বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় নেতারা অনুকূল পরিবেশ খুঁজছিলেন। ব্যাটে-বলে গরমিল হওয়ায় মাঠ গরমের মতো কর্মসূচি দিতে চান না নীতিনির্ধারকেরা। তবে ঈদ এলেই নড়েচড়ে বসেন দলটির নীতি নির্ধারকেরা। তারা দাবি করতে থাকে ঈদের আগেই দলীয় প্রধানকে মুক্তি দিতে হবে। ঈদের দিন কারাগারে কিংবাস কারা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রিত হাসপাতাল গেটে অবস্থান নেয় দলের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা। তারা দলীয় প্রধানের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি প্রত্যাশা করে কারা কৃর্তপক্ষের কাছে।

কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, কারাবিধিতে তাদের (দলীয় নেতাকর্মী) দাবি পূরণ হওয়ার নয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পাল্টা অভিযোগ করে সাংবাদিকদের জানান, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার স্বাক্ষাতের অনুমতি না দেওয়া জেলকোডের লঙ্ঘন। পাল্টাপাল্টি অভিযোগের ঘণ্টা কয়েক অবস্থানের পর চলে আসেন নেতারা। গত পাঁচ ঈদে এ চিত্র দেখছে দেশবাসী। এবারও একই চিত্র দেখতে হচ্ছে বিএনপিসহ দেশবাসীকে।

এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রশ্নে ঘুরেফিরে দুটি দিক আলোচনায় আসে। একটি প্যারোলে মুক্তি অন্যটি আইনী লড়াইয়ে। সরকারের আইনমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, প্যারোলে মুক্তি চাইলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্টরা।

বিএনপির অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মানসিকতা ও দূঢ়তার দিক বিবেচনা করে এখনো তাকে প্যারোলে কথা কোনো নেতাই বলার সাহস রাখেননি। বিষয়টি নিতান্তই খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের। তাই এ বিষয়ে সিদ্ধান নেওয়ার এখতিয়ার দলীয় নেতাদের নেই।

অপরদিকে, বিএনপির আইনজীবীরা আইনী লড়াই করে গেলেও তাদের মন্তব্য খালেদা জিয়া মামলাগুলো রাজনৈতিক। তার মুক্তি আইনী লড়াইয়ে হবে না বলে অনেক আগেই জানিয়েছেন সাবেক আইনন্ত্রী দলের সিনিয়র নীতিনির্ধারক ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ। গত শুক্রবারও আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বিএনপির মতো দল যে আন্দোলন করার যোগ্যতা রাখে সেই আন্দোলন যতদিন পর্যন্ত না করবে, ততক্ষণ শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবে না। তাই স্ব স্ব অবস্থান থেকে প্রস্তুত হন। আর যদি দল আন্দোলনের ডাক না দেয় তাহলে আমাদের-আপনাদের সবাইকে মাঠে নামতে হবে।

১৯৮১ সালের ৩০ মে স্বামী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপির হাল ধরেন খালেদা জিয়া। ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হয়েছেন তিনি । প্রতিবারই ঈদে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন আয়োজন করে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলার রায় হওয়ার পর আদালত থেকেই তাকে নাজিমউদ্দিন রোডের ওই কারাগারে নেওয়া হয়। এর আগে, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের পর জাতীয় সংসদ ভবনে স্থাপিত উপ কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছিল।

২০০৭ সালের ১৪ অক্টোবর উদযাপিত হয় পবিত্র ঈদুল ফিতর। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর ঈদুল আজহার ঈদও ওই সাবজেলে উদযাপন করেন তিনি। ওই কারাগারে ৩৭২ দিন কাটানোর পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের মুক্তি পান।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads