• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

রাজনীতি

খালেদা জিয়ার মুক্তি

বিদেশে বিএনপির নালিশের বিষয়ে সতর্ক আ.লীগ

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ২৪ আগস্ট ২০১৯

বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে প্রভাবশালী দেশের কাছে দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ তুলে ধরার দিকে বিশেষ নজর রাখছে আওয়ামী লীগ। খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে বিদ্যমান পরিস্থিতি বিদেশে তুলে ধরার বিষয়ে আওয়ামী লীগ উদ্বিগ্ন না হলেও দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায় এ নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণও চলছে। বিদেশিদের কাছে অভিযোগ করে সরকারকে চাপে ফেলে তাকে মুক্ত করা যাবে না বলে মনে করে আওয়ামী লীগ। যদিও চেয়ারপারসনের ‘মুক্তির উপায় খুঁজতে’ নতুন করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাওয়ার বিষয়ে বিএনপির শীর্ষ কয়েক নেতার বক্তব্যের পর থেকে এর কড়া সমালোচনা করছে ক্ষমতাসীন দল।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের মতে, খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে ‘কঠোর’ থেকে ফের বেশ ‘আন্তরিক’ অবস্থানে সরকার। প্যারোলে মুক্তি নিয়ে আগামী সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসের সুবিধাজনক সময়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে নতুন করে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশিদের কাছে বিএনপির কোনো কোনো নেতা মুক্তির বিষয়ে নালিশ করলে প্যারোল আলোচনা থেমে যেতে পারে। বক্তব্যে দলের চেয়ারপারসনের জামিন বা মুক্তির দাবি জানালেও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ আদৌ তার মুক্তি চান কি না- এমন প্রশ্নও তোলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি ও দলটির নেতৃত্বের জোট কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট সরকারবিরোধী শক্ত কোনো আন্দোলন কর্মসূচি পালনের দিকেও আপাতত যেতে পারছে না। দলটির চেয়ারপারসন কারাবন্দি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিদেশে থাকা ও শীর্ষ নেতৃত্বে কোন্দলের কারণে জোরালো কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারছে না বলে মনে করেন তারা। সরকারের আট মাস পূর্ণ হতে চললেও শক্ত কোনো কর্মসূচি বিএনপি ঘোষণা করতে পারেনি সাংগঠনিক দুর্বলতা ও নেতৃত্বে সমস্যার কারণে। এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করছে বিএনপি। তবে বিএনপির দাবি, ‘আদালতে ন্যায্য বিচার না পাওয়ায়’ বিদেশিদের কাছে পরিস্থিতি তুলে ধরা হবে।

আওয়ামী লীগের নেতাদের মতে, দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়ে ১৮ মাস ধরে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া। তাকে কারামুক্ত করতে গত বছরও বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো কোনো দেশের কাছে ঢাকায় অবস্থিত দূতাবাসের মাধ্যমে অভিযোগ করে দলটি। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগে এ চেষ্টা করেন তারা। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগেও তা করবে বলে দলটির পক্ষে বলা হয়েছে। অভিযোগ করলেও গত বছর বা কোনো সময়ই খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সরকারকে কোনো দেশের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হয়নি। তাকে জেল দিয়েছেন আদালত। একমাত্র আদালতই তাকে মুক্তি দিতে পারে এবং কোনো আন্দোলন ও বিদেশিদের কাছে নালিশ করে তাকে মুক্ত করা যাবে না বলেও মনে করেন ক্ষমতাসীনরা।

সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকারের শুরু থেকে দেশ-বিদেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বস্তিতে আছে দলটি। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এখন অনেকটাই নির্ভার। কয়েকটি দেশ একাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘অনিয়ম’ নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর যে চাপ তৈরি হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তা কেটে যায় নতুন সরকারের শুরুতেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসার পাশাপাশি সেসব দেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দেয়। নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের অভিযোগ বিদেশিদের কাছে যেমন জোরালো হয়নি, খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্বের বিষয়ে অভিযোগও তাদের কাছে গুরুত্ব পাবে না বলে মনে করে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে গত সোমবার বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলন, রাজপথ ও আদালতে আইনি লড়াইয়ে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন বিদেশি দূতাবাসে নালিশ করে বেড়াচ্ছে। দলটি কান্নাকাটি করছে। বিএনপি ভুল রাজনীতি করে দেশের মানুষের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। তাই বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে গিয়ে নালিশ করা ছাড়া তারা আর কোনো উপায় পাচ্ছে না। এখন নাকি জাতিসংঘে যাবে দলটি। এ সবই প্রমাণ করে রাজনীতিতে দলটি কতটা দেউলিয়া হয়ে গেছে।’

আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতা জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিদেশিদের কাছে নতুন করে বিএনপির অভিযোগ তুলে ধরার সিদ্ধান্তের বিষয়টি দেশের জনগণের কাছে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরবে আওয়ামী লীগ। বিদেশিদের কাছে অভিযোগের মধ্য দিয়ে দেশের ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার’ বিষয়টিও আওয়ামী লীগ তুলে ধরবে। তবে বিএনপির নেতাদের দাবি, দেশের ‘বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতা’ তাদের এ পথে হাঁটতে বাধ্য করছে। কারো কাছে নালিশ নয়, মানবাধিকারের অংশ হিসেবেই বিদেশিদের কাছে দলীয় প্রধানের বিষয়টি উত্থাপন করবেন তারা। বিদেশিদের কাছে অভিযোগ বা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা নয়- মানবাধিকার রক্ষায় যে কেউ অন্যের কাছে যেতে পারেন বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads