• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

রাজনীতি

ছাত্রলীগের ‘পোস্টার’ বিতর্ক থামছে না

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৪ আগস্ট ২০১৯

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগের নামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের পোস্টার নিয়ে ওঠা বিতর্ক থামছে না। প্রবল সমালোচনার মুখে গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠানের নির্ধারিত দিনে এর আয়োজন না হলেও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজনকে ঘিরে বিতর্ক চলছেই। ছাত্রলীগের মতো ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের উদ্যোগে কোনো অনুষ্ঠানের পোস্টারে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছবি না থাকা এবং আওয়ামী লীগের আদর্শবিরোধীদের অতিথি করার খবরে সংগঠনটির সাবেক ও বর্তমান নেতৃত্বের অনেকেই সমালোচনামুখর। বিতর্কের মুখে পোস্টার ও অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব অস্বীকার করলেও কারা পোস্টার ছাপিয়েছেন ও অনুষ্ঠানের আসলে আয়োজক কারা, এ নিয়ে রহস্য থেকেই যাচ্ছে।

জানা যায়, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর এবারের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে ২২ আগস্ট ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ‘পবিত্র কোরআন খতম, হামদ-নাত পরিবেশনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজনের’ কথা ছিল। এ বিষয়ে একটি পোস্টার গত সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়ালে সাঁটানো হয়। পোস্টারের কোথাও বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করা হয়নি। শোক দিবসের আয়োজনের পোস্টারে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনার ছবি না দেখে ক্ষুব্ধ হন ছাত্রলীগের অনেকে। রাজনৈতিক মহলেও এ নিয়ে আলোচনা ও

সমালোচনা চলছে। ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের মধ্যে অনেকে মনে করেন, পোস্টারের ধরনটি  ‘মৌলবাদী সংগঠনের আদলে’ করা হয়েছে। তারা দীর্ঘদিনের রেওয়াজ ভেঙে ‘জামায়াত-শিবির স্টাইলে’ কর্মসূচি দেওয়া, পোস্টার ছাপানো ও বিতর্কিত ব্যক্তিকে অতিথি করার অভিযোগ তোলেন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

বিতর্ক উসকে ওঠে ছাত্রলীগের নামে আয়োজনের পোস্টারে হামদ-নাত পরিবেশনকারী হিসেবে মুহিব খানের নাম দেখে। ধর্মপন্থি সংগঠনের কারো কারো কাছে মুহিব খানের উপাধি ‘জাগ্রত কবি’ হলেও তিনি উগ্রপন্থি হিসেবে বিতর্কিত। জাতির পিতা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ও জাতীয় সংগীত নিয়ে উগ্র চিন্তার গানও আছে তার। তিনি জামায়াত ও হেফাজতের অনুষ্ঠানে প্রায়ই অতিথি হন। মুহিবসহ পোস্টারে আরো যাদের নাম আছে হামদ-নাত পরিবেশনকারী হিসেবে, তারা কেউই আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের রাজনৈতিক আদর্শের অনুসারী নন। তারা আওয়ামীবিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত। মুহিব খানের বাবা বিএনপির টিকিটে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খান।

বিতর্কিত ওই আয়োজনের পোস্টারে সভাপতি হিসেবে নাম ছাপা হয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও প্রধান অতিথি হিসেবে নাম ছাপা হয় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর। পোস্টারটিতে লেখা, ‘পবিত্র কুরআন খতম ও দোয়া মাহফিল।’ পোস্টারে লেখা আছে, বৃহস্পতিবারের আয়োজন হওয়ার কথা ছাত্রলীগের উদ্যোগে। বিশ্ববিদ্যালর ক্যাম্পাসের দেয়াল থেকে পোস্টারটি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকসহ ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমে, যা নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিতর্ক ওঠার পর ছাত্রলীগ বলছে, এর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। অনুষ্ঠান আয়োজনও বাতিল করা হয়। যদিও অনুষ্ঠানসংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে ওই অনুষ্ঠান ও পোস্টারের সঙ্গে ছাত্রলীগের সম্পৃক্তার তথ্য পাওয়া গেছে।

গত সোমবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ওই অনুষ্ঠান ও পোস্টারের সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ওই অনুষ্ঠান ও পোস্টারের ব্যাপারে জ্ঞাত নন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের সাবেক তিনজন নেতা এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনকে বলা যায় ছাত্রলীগের দ্বিতীয় অস্থায়ী কার্যালয়। দিন-রাত সেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পদচারণ থাকে। সেখানে কীভাবে বিতর্কিত পোস্টার সাঁটানো হয়? ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের এত নেতাকর্মীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এ পোস্টার ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।’

জানা যায়, ইসলামপন্থিদের নিয়ে ছাত্রলীগের নামে দোয়া মাহফিলের আয়োজনের জন্য ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তন ভাড়ার আবেদন করা হয় মাহমুদ হাসান নামে একজনের নামে। তিনি কে, ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না, এ বিষয়ে  কেউ নিশ্চিত করতে পারছেন না। মিলনায়তন ভাড়ার জন্য আবেদন করার সময় মাহমুদ হাসান যে মুঠোফোন নম্বর দেন কর্তৃপক্ষকে, সেই নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়। বিতর্ক ওঠার পর থেকে নম্বরটি বন্ধ বলে জানা যায়। তাই অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তার সঙ্গে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শেখ আবদুল্লাহর কথোপকথনের একটি রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির অনুমতি নিয়েই অতিথি তালিকা ও পোস্টার ছাপানো হয়েছে বলে মাহমুদকে দাবি করতে শোনা যায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads