• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

রাজনীতি

৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

‘খালেদা ও গণতন্ত্রের মুক্তিই বড় চ্যালেঞ্জ’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯৭৮ সালের এই দিনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের অন্যতম বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলটির। তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা বিএনপি এমনই এক সময়ে ৪২ বছরে পা রাখছে, যখন দলটির জন্য বলতে গেলে কোনো কিছুই অনুকূলে নেই। একাদশ নির্বাচনের চরম অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফলের পর নেতা-কর্মীরা হতাশাগ্রস্ত। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও রয়েছেন কারাগারে। যার বন্দিজীবন কেবলই দীর্ঘায়িত হচ্ছে। শিগগিরই তিনি মুক্তি পাবেন কি না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। দলের দ্বিতীয় প্রধান নেতা তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। তার নির্দেশেই চলছে দল। তবে তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করতে বাধ্য হওয়ায় দলকে খানিকটা হলেও বেগ পোহাতে হচ্ছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বিএনপিতে নেতৃত্বের কোনো সংকট নেই। হতাশাগ্রস্ত নেতা-কর্মীদের মধ্যে নতুন করে স্বপ্ন জাগিয়ে তুলছেন তারা। বেগম জিয়াকে মুক্ত করে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ফিরিয়ে আনাই তাদের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির আগামীদিনের চ্যালেঞ্জ দুটি। একটি হলো বেগম জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করা, আরেকটি হচ্ছে দেশে আবারো গণতন্ত্র, আইনের শাসন ফিরিয়ে আনা।

তিনি বলেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করছে বলেই তিনি মুক্তি পাচ্ছেন না। বিএনপি বেগম জিয়াকে মুক্ত করে আনতে আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে, রাজপথেও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।

চার দশক আগে চারদিকে হতাশা, ক্ষোভ, না পাওয়ার বেদনা এবং শাসকযন্ত্রের প্রতি অতিষ্ঠ জনগণের মধ্যে স্বস্তি ও আশার সঞ্চার করে পথচলা শুরু হয় বিএনপির। দীর্ঘ এই পথ পরিক্রমায় দলটি যেমন তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়েছে, তেমনি বহুবার সীমাহীন প্রতিকূল পরিস্থিতিও মোকাবেলা করেছে।

২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত এক-এগারোর সরকারের আমল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১২ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি বেশ কঠিন সময় পার করছে। জরুরি সরকারের সময় দলটির ওপর যে মামলা, হামলা, জেল, জুলুম শুরু হয়েছিল তার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। দলটির তথ্য অনুযায়ী সহস্রাধিক নেতা-কর্মী হত্যা, গুম, খুনের শিকার হয়েছেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সাড়ে ১৮ মাস ধরে কারাবন্দি রয়েছেন। শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতা-কর্মীরা মামলায় জর্জরিত। এ রকম নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে সংগঠনকে গতিশীল রেখে নতুন আশায় পথ চলছে বিএনপি।

একাদশ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের পর বিএনপি আন্দোলনমুখী না হয়ে আবারো দল পুনর্গঠনের কাজে নেমেছে। আগামী ডিসেম্বরে অথবা নতুন বছরের শুরুতেই সপ্তম কাউন্সিল অনুষ্ঠানের চিন্তা করা হচ্ছে। তার আগে সাংগঠনিক জেলাগুলোতে নতুন কমিটি দেওয়া হচ্ছে। অঙ্গসংগঠনগুলো ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আবারো প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনটি বিভাগে দলটি সমাবেশ করেছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে বাকি বিভাগেও সমাবেশ হবে বলে জানা গেছে।

দলটির নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, চেয়ারপারসনকে মুক্ত করে দ্রুত আরেকটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে বাধ্য করাই তাদের টার্গেট। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে বিএনপি যে বৃহত্তর ঐক্য গঠন করেছে, তা নিয়েই তারা অগ্রসর হবেন। 

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বিএনপি আবারো সুসংগঠিত হচ্ছে। চরম প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দলটির সাংগঠনিক শক্তি আগের মতোই আছে। জনপ্রিয়তাও বেড়েছে। নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন হলে বিএনপিই বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হবে। তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই। গণতন্ত্র নেই। বেগম জিয়াকে মুক্ত করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রামই তারা চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রতিষ্ঠার পটভূমি ও পথ পরিক্রমা : শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠার আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠন করেছিলেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে এলে জিয়া বিএনপি গঠন করে এর সঙ্গে জাগদলকে একীভূত করেন। রাষ্ট্রপতি জিয়া এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন এবং প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন বিএনপির প্রথম মহাসচিব।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য এবং জনগণের মধ্যে স্বনির্ভরতার স্বপ্ন জাগিয়ে তোলাই ছিল জিয়াউর রহমানের মূলমন্ত্র। এর ফলে প্রতিষ্ঠার অল্প সময়ের মধ্যেই অভূতপূর্ব সাফল্য এসে ধরা দেয়। জিয়াউর রহমান স্বল্প সময়ের অক্লান্ত কর্মের মধ্য দিয়ে যেন ছড়িয়ে পড়েন পুরো বাংলাদেশে। জনগণ তাকে গ্রহণ করে তৎকালীন সময়ের বিকল্প এক রাজনীতিবিদ হিসেবে। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে ইসলামী মূল্যবোধের মিশ্রণ তার দলকে আরো জনপ্রিয় করে তোলে। তার ঘোষিত ১৯ দফা দল ও সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে এক ‘রাজনৈতিক দর্শন’ হিসেবেই আখ্যায়িত করা হয়। ১৯৮১ সালের ৩০ মে বিপথগামী কিছু সেনাসদস্যের হাতে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবরণের কিছু পর স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে উত্থান ঘটে বেগম খালেদা জিয়ার। সেই সময় থেকে বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনিই।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশিবার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল বিএনপি। ১৯৯০-এর গণতন্ত্রায়ণের পর ২০০১ সাল পর্যন্ত দেশে মোট চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি তিনটিতেই জয়লাভ করে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ১৪২টি আসন লাভ করে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনেও বিএনপি জয়লাভ করে। তবে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করে আন্দোলনমুখী হওয়ায় ৪৫ দিনের মাথায় বিএনপি সরকার একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে পুনরায় নির্বাচন করার জন্য ক্ষমতা তুলে দেয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ চারদল প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়লাভ করে। তবে এক-এগারোর সরকারের দুই বছর পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে দলটির ভরাডুবি হয়। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনের নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি তারা। 

দীর্ঘ ১২ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতারা বলছেন, রাজনীতিতে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। এ পথে হেরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কৌশল পরিবর্তন করেই পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। বিএনপিও এখন সেই কৌশল নিয়েছে। 

দলীয় কর্মসূচি : প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে কেন্দ্রীয়ভাবে দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ ভোরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন ও সকাল ১০টায় শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে। বিকাল ৩টায় রাজধানীর রমনাস্থ ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা হবে। আগামীকাল এ উপলক্ষে রাজধানীতে র্যালি বের করবে বিএনপি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads