• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

রাজনীতি

বিএনপির আনন্দ র্যালিতে নেতাকর্মীর ঢল

বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গতকাল সারা দেশে আনন্দ র্যালি করেছে বিএনপি। চট্টগ্রাম, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে র্যালিতে নিজদলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘাত, সংঘর্ষের কারণে ম্লান হয়েছে আনন্দ।

এদিকে রাজধানীর র্যালিতে দলীয় নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছিল। পল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আনন্দ র্যালিকে কেন্দ্র  করে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, সেজন্য তৎপর ছিল পুলিশ।

নয়াপল্টন থেকে র্যালি শুরুর আগে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে আমাদের ত্যাগ স্বীকার করে স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছে, ২৬ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। নেতাকর্মীদের প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আবার দেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চায়, কিন্তু আমরা কি বাকশাল মেনে নেব? কোনোদিনও তা হতে দেব না।

বিকাল ৩টায় নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে এই আনন্দ র্যালি নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে শান্তিনগর মোড়ে এসে শেষ হয়। দলীয় ও জাতীয় পতাকা, রং-বেরঙের ব্যানার-ফেস্টুন, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতিকৃতিসহ নানা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী এই র্যালিতে অংশ নেন। র্যালিতে মশারি টাঙিয়ে মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা ডেঙ্গু প্রতিরোধ তথা এডিস মশা প্রতিরোধে জনসচেতনতার বিষয়টি তুলে ধরেন। দীর্ঘদিন পর ঢাকায় বিএনপির র্যালি দেখতে রাস্তার দুই ধারে দাঁড়ানো পথচারীদের করতালি দিতে দেখা গেছে। ঢাকা মহানগর বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, মুক্তিযোদ্ধা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, জাসাস, কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব), ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে ফকিরাপুল থেকে নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁ পর্যন্ত গোটা এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। নেতাকর্মীরা দলীয় পতাকা ও লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে এই র্যালিতে অংশ নেন। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড় বড় প্রতিকৃতি হাতে ‘শুভ শুভ শুভদিন, বিএনপির জন্মদিন’, ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও সালাম’, ‘এক জিয়া লোকান্তরে, লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে’, ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, স্লোগান দেন কর্মী-সমর্থকরা। শোভাযাত্রার সম্মুখভাগ যখন নাইটিঙ্গেল মোড়ে তখন মিছিলের শেষ ভাগ ছিল ফকিরাপুল বাজার পর্যন্ত। র্যালি শুরুর আগে পুরো নয়াপল্টন সড়কে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। বিশেষ করে ছাত্রদলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিপুল কর্মী অনুসারী নিয়ে শোডাউন দেয়।

দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ। র্যালিতে অন্যদের মধ্যে বিএনপির আব্দুল্লাহ আল নোমান, বরকতউল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায়, জয়নুল আবদিন ফারুক, মশিউর রহমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আব্দুল হাই, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, মো. শরীফুল আলম, শামা ওবায়েদ, মাহবুবের রহমান শামীম, মীর সরফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আবদুস সালাম আজাদ, শামীমুর রহমান, আবদুল আউয়াল খান, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন, রফিক সিকদার, নিপুন রায় চৌধুরী, ইশরাক হোসেন, খন্দকার মারুফ হোসেন, মশিউর রহমান বিপ্লব, শামসুল আলম তোফা, নবী উল্লাহ নবী, হাবিবুর রশিদ হাবিব, তানভীর আহমেদ রবীন, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, সাদেক খান, ড্যাবের অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, মোস্তাফিজুর রহমান, গোলাম সরোয়ার, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, যুবদলের সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, হাসান উদ্দিন সরকার, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, জেবা খান, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মো. মাইনুল ইসলাম, সালাউদ্দিন ভুঁইয়া শিশির, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, জিয়া পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল্লাহিল মাসুদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা র্যালিতে অংশ নেন।

র্যালি উদ্বোধনের আগে ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে বাংলাদেশের সমস্ত মানুষকে জাগ্রত করতে হবে। বিএনপির দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। কারণ বিএনপি তৈরি করেছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি এই দলের প্রতিষ্ঠাতা। সমস্ত দেশপ্রেমিক মানুষকে এক করে এই দল তিনি তৈরি করেছিলেন। ৪০ বছরে বিএনপি পাঁচবার জনগণের ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেছে। বিএনপি দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৯ বছর আপসহীন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আবার গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনেছে।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এই র্যালিতে উপস্থিত হয়েছি। আমাদের চেয়ারপারসন তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আমাদের সঙ্গে নেই, তিনি কারাগারে বন্দি। আমাদের মনে রক্তক্ষরণ, অন্যায়ভাবে তারা নেত্রীকে কারাগারে রেখেছে। সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের নেত্রীকে কারাগারে রেখে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে অলিখিত বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা। আজকে সরকারের সব খেলা শেষ। তারা আমাদেরকে দুর্বল করতে চেয়েছিল, আমরা দুর্বল নই। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া জেল থেকে এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আগের চেয়ে আমরা শক্তিশালী, জনগণ আমাদের পেছনে আছে। আজকে র্যালি প্রমাণ করেছে, দেশের জনগণ দেশনেত্রীর সঙ্গে আছে, বিএনপির সঙ্গে আছে।

মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকার আর আমাদের স্তব্ধ করে রাখতে পারবে না। অনেকে প্রশ্ন করেন, দেশনেত্রীর মুক্তি আন্দোলন কখন শুরু হবে? আমি বলতে চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। এই আন্দোলন আর কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।

চট্টগ্রামে যুবদলের দুই পক্ষে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চট্টগ্রামে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে যুবদলের দুই পক্ষে ধাওয়া ও পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বিকাল ৫টার দিকে নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে জড়ানো যুবদলের দুই পক্ষের একটি মহানগর যুবদল মোশারফ হোসেন দিপ্তির অনুসারী এবং অন্যটি স্থানীয় এনায়েত বাজার ওয়ার্ড যুবদল নেতা শামসুল হকের অনুসারী। এদিকে মেহেরপুরেও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads