• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

রাজনীতি

জাপার তাওয়া গরম

বিরোধী দলের নেতার পদ নিয়ে রওশনের পাল্টা চিঠি

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রাজপথে কঠোর কোনো কর্মসূচি নেই। নেই রাজনৈতিক উত্তাপও। রাজনৈতিক অঙ্গন বলতে গেলে এখন শীতল। তবে এ সময়ে এরশাদের জাতীয় পার্টির তাওয়া গরম। দলীয় দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে দলটিতে। ঘরের বিবাদের ঢেউ লেগেছে সংসদে। যদিও সংসদে বিরোধী দলে থাকা দলটি গত অর্ধযুগে জনস্বার্থ রক্ষায় রাজপথে কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি।   

পার্টির চেয়ারম্যানের চেয়ার নিয়ে টানাটানির মধ্যেই নতুন বিবাদ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়ে। লড়াইয়ে লিপ্ত দুই শীর্ষ নেতার অনুসারীরা আগে আড়ালে-আবডালে থাকলেও এখন প্রকাশ্যে আসছেন। পার্টিতে প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মতো বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের (জি এম কাদের) বিরুদ্ধেও একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের কর্মকাণ্ডে হতাশ হচ্ছেন পার্টির মাঠপর্যায়ের নেতারা। এদিকে জি এম কাদেরকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা করতে জাতীয় পার্টির প্যাডে পাঠানো চিঠি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন দলটির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের অনুসারীরা। জি এম কাদেরের চিঠির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা গ্রহণ না করার অনুরোধ করা হয়েছে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে। গতকাল বুধবার বিকালে স্পিকারের কার্যালয়ে এ চিঠি পৌঁছে দেওয়া হয়। এর আগে দুপুর ১২টায় রাজধানীর গুলশানে রওশনের বাড়িতে বৈঠক করে রওশনপন্থিরা। আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে ছিলেন জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর তিন সদস্য এবং তিন এমপি-ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু ও ফখরুল ইমাম। জি এম কাদেরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত হলেও রওশনের বাড়িতে এ বৈঠকে যোগ দেন পার্টির ভাইস-চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও  ঢাকা দক্ষিণ কমিটির সভাপতি শফিকুল ইসলাম সেন্টু।

পরে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় পার্টির পার্লামেন্টারি কমিটির কোনো বৈঠক ছাড়া স্পিকারকে দেওয়া জি এম কাদেরের চিঠিটির কোনো দাম নেই। চুন্নু বলেন, জি এম কাদের পার্লামেন্টারি কমিটির কোনো বৈঠক না করেই লুকিয়ে এই চিঠি দিয়ে থাকলে আমি ও আমরা সে বিষয়ে কিছু জানি না। আমি তো এক নগণ্য এমপি। আমাকে তো কোনো নোটিশ বা ফোন দেওয়া হয়নি। যে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে শুনছি, সেটি প্রপার না।

তিনি জানিয়েছেন, আগামী ৮ সেপ্টেম্বর পার্টির পার্লামেন্টারি সভা ডাকা হয়েছে। তাতে এমপিরা সিদ্ধন্ত নেবেন বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন। 

গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়েছেন জি এম কাদের। তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন, দলটির প্রেসিডিয়ামের সভায় তাকে সর্বসম্মতিক্রমে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে নির্বাচিত করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তাই তাকে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্পিকারের কাছে। চিঠির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে-প্রেসিডিয়ামের সভার রেজুলেশন এবং ১৫ জন এমপির সমর্থনপত্র। দলটির এমপির সংখ্যা ২৫ জন।

এদিকে সার্বিক বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় জি এম কাদের বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা মনোনয়ন প্রশ্নে জোর করে কিছু করা হয়নি। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চিঠি দেওয়া হয়েছে। পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠক না করায় বিতর্ক উঠেছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এরশাদ সাহেব যখন বেঁচে ছিলেন তিনিও কিন্তু এভাবে বিরোধীদলীয় নেতা হয়েছিলেন। আমাকে বিরোধীদলীয় উপনেতা করেছিলেন। পরে আমাকে সরিয়ে রওশন এরশাদকে উপনেতা করা হয়, তখনো কিন্তু পার্লামেন্টারি পার্টির কোনো মিটিং করা হয়নি।

দলীয় এমপিদের কেউ কেউ চিঠির বিষয়ে জানেন না-এ প্রসঙ্গে কাদের বলেন, আমরা ফোনে সংসদ সদস্যদের জিজ্ঞেস করেছি। তারা সম্মতি দিয়েছেন। লিখিত দিতে বলা হলে ১৫ জন সম্মতিপত্র দিয়েছে। ২৫ জনের মধ্যে ১৫ জন সম্মতি দিলে আর কিছু লাগে না। তাই অন্যদের বলা হয়নি। এখন আরো অনেকে সমর্থনপত্র দিতে চাচ্ছে। প্রয়োজন নেই বলে নেওয়া হচ্ছে না।

পার্লামেন্টারি পার্টির সভা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্য কেউ পার্লামেন্টারি পার্টির সভা ডাকতে পারে না। ডাকতে হলে আমিই ডাকব।

জাপার দুই শীর্ষ নেতার লড়াই, পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সিনিয়র নেতাদের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান এবং পার্টির অতীত চরিত্র পর্যালোচনা করে খোদ নেতাকর্মীরাই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কারণ তাদের চোখে এই আলামত দল ভাঙনের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads