• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
যুবলীগে শুদ্ধি অভিযান শুরু

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি

যুবলীগে শুদ্ধি অভিযান শুরু

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের একাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীও চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন। যে কারণে তালিকাভুক্ত এসব নেতাদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। পাশাপাশি নিজস্ব ট্রাইব্যুনালেও এসব নেতাদের বিচার হবে বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের দুটি কমিটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ ঢাকা মহানগরের একাধিক নেতা যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারে এমন আভাস পাওয়া গেছে। সম্রাটসহ ঢাকা মহানগর যুবলীগের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে বেপরোয়া চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা বিষয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় অ্যাকশনে যাচ্ছে দলের হাইকমান্ড।

গতকাল বুধবার ‘ক্যাসিনো’ চালানোর মামলায় যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর গুলশানের নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল মো. সারওয়ার-বিন-কাশেম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। জানা গেছে, রাজধানীর কাকরাইলে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের ভবন নির্মাণ থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী গত বছর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন যুবলীগের ওপর। এই চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠে যুবলীগ দক্ষিণের এক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধেও। প্রধানমন্ত্রী তখনি ওই নেতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশও দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে তখন তিনি দেশের বাইরে  চলে যান। এরপর রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রভাবশালী মহল দেনদরবার করেন তার জন্য। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তার ওপর এখনো চাপ রয়েছে। তিনি কিছুটা দমে গেলেও সহযোগীরা এখনো বেপরোয়া। দক্ষিণেরই সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চলাফেরা এবং মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে।

একইভাবে যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের অন্তত ১০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে। সংগঠনটির ঐতিহ্য ধরে রাখতে যুবলীগের এসব নেতাদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চান নেতারাও। এই শুদ্ধি অভিযানের তালিকায় কেন্দ্রীয় যুবলীগের তিন এবং ঢাকা দক্ষিণ এবং উত্তর মিলিয়ে আরো সাত নেতার নাম রয়েছে। এদের সাংগঠনিক ব্যবস্থা হিসেবে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে। সেখানেই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান যুবলীগের শীর্ষ একাধিক নেতা।

যুবলীগ সিনিয়র নেতারা বলেন, যেসব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিচার হবে যুবলীগের নিজস্ব ট্রাইব্যুনালে। বিচার প্রক্রিয়া শুরুর জন্য এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এবিষয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী জানান, যুবলীগের ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে সংগঠনের ট্রাইব্যুনালে ডাকা হচ্ছে। এ ছাড়া কমিটিতে থাকা নিম্ন পর্যায়ের আরো কয়েকজন যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধেও নানা রকম অভিযোগ রয়েছে। তাদেরও ট্রাইব্যুনালে ডাকা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশীদ বলেন, এই ট্রাইব্যুনাল চালু আছে অনেক আগে থেকেই। ওই ট্রাইব্যুনালের প্রধান হলেন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। আর প্রেসিডিয়াম সদস্যরা হলেন এর মেম্বার। যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই ট্রাইব্যুনাল বসে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় একাধিক সিনিয়র সদস্য জানান, গত শনিবার আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কামটির বৈঠকে ছাত্রলীগ থেকে শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি যুবলীগে শুদ্ধি অভিযানের কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, তিনি কয়েকজন নেতার নাম ধরে তাদের অপকর্মের কথাও তুলে ধরেন। সে বৈঠকে কিছু ছবিও দেখান। তিনি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনও আংশিক তুলে ধরেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন নেতা জানান, শেখ হাসিনা যুবলীগের কয়েকজন নেতার নাম ধরে বলেন, ওরা শোভন-রাব্বানীর চেয়েও খারাপ। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

শীর্ষ নেতারা বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যাওয়ার আগে গণবভবনে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশীদকে যুবলীগ দক্ষিণের কমিটি ভেঙে দিতে বলেছিলেন। কাকরাইলে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের ভবন নির্মাণ থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী তখন ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। এই চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠে যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটের বিরুদ্ধে।

তবে যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি আঞ্জুমানের কাছ থেকে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক তদন্ত হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র উঁচিয়ে চলার অভিযোগের তদন্ত চলছে। তার এলাকার কিছু যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এগুলো কারা করে আমার জানা নেই।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহলে অভিযোগ রয়েছে, যুবলীগের কিছু নেতার এখন আয়ের প্রধান উৎস ক্যাসিনো ব্যবসা। রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকার একটি ভবনেই আছে এরকম তিনটি ক্যাসিনো। ঢাকায় তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে অন্তত ৫০টি ক্যাসিনো। জুয়া খেলার জন্যই এসব ক্যাসিনো গড়ে তোলা হয়েছে। এই জুয়ার ব্যবসা করে কেউ কেউ ফুলেফেঁপে উঠছেন। তারা আবার দেশের বাইরেও ক্যাসিনোতে জুয়া খেলতে যান। ক্যাসিনোগুলোর মূল নিয়ন্ত্রণ ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের শীর্ষ কয়েক নেতার হাতে। কেন্দ্রীয় যুবলীগের অন্তত দুজন নেতাও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

অপরদিকে কেন্দ্রীয় এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বাড়ি ও জমি দখলের। রাজধানীর মিরপুর এলাকায় সে এই কাজে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তিনি গত সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নেরও চেষ্টা করেছিলেন। আর সায়েদাবাদের বাস টার্মিনাল, শিক্ষাভবনসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন কয়েকজন যুবলীগ নেতা। এ ব্যাপারে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশীদ বলেন, সম্রাটের বিরুদ্ধে আঞ্জুমানের অভিযোগ নিয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছিলাম ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য। তবে আঞ্জুমানের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ নেই বলে লিখিত দেওয়া হলে আমরা আর এগোতে পারিনি। তবে আমরা বেশ কয়েকজনের বিচার করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছি। যুবলীগ দক্ষিণের কমিটি ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী গণবভনে এক অনুষ্ঠানে যুবলীগ দক্ষিণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সত্য। তবে তখন তিনি কমিটি ভেঙে দিতে বলেছেন কি না, আমার তা জানা নেই। কারণ আমি একটু দূরে ছিলাম।

তিনি আরো বলেন, যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যেসব অভিযোগ আসছে তা আমরা সংরক্ষণ করছি। আমরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রধানমন্ত্রী আমাদের কিছু না জানালেও আমরা ব্যবস্থা নেব। আর সেই ব্যবস্থা হবে আমাদের নিজস্ব ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে। এ বিষয়ে ইসমাইল হোসেন সম্রাট বলেন, আমরা শুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানাই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যা বলবেন তাই হবে।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads