• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
আ.লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তনের আভাস

ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতি

আ.লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তনের আভাস

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ০৫ অক্টোবর ২০১৯

চলতি বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা দলীয় পদ থেকে বাদ পড়তে পারেন। কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নতুন মুখকে ঠাঁই করে দিয়ে চমক দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। পদ পেয়েও নিষ্ক্রিয় থাকা, নানা কারণে বিতর্কিত, চাঁদাবাজদের প্রশ্রয়দাতা ও অভিযুক্তরা বাদ পড়ার বিষয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়েও আলোচনা চলছে।

সভাপতি ছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য যে কোনো পদে আগামীতে পরিবর্তন আসতে পারে, এমন আভাস ইতোমধ্যে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে দেওয়া হয়েছে। আগামী ২০২০ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে এ দলের নেতৃত্বের সরকার। এর আগে বিতর্কিতদের সরিয়ে দিয়ে আগামী বছরের প্রথমদিন থেকে উদ্যমী, পরিশ্রমী, সৎ এবং প্রবীণ ও নবীন নেতৃত্বের সমন্বয়ে দল পথ চলতে চায় বলে বাংলাদেশের খবরকে জানায় সরকারি দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র।

সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের যে কারো বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে আরো কঠোর অবস্থানে থাকার বার্তা দেওয়ার পর থেকে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বেশ কয়েকজনের মধ্যে বাদ পড়ার আতঙ্ক বেড়েছে। সভাপতি হিসেবে শুধু দলেই শেখ হাসিনার বিকল্প নেই, এমন নয়। রাষ্ট্র পরিচালনায়ও তার মতো দক্ষ, দূরদর্শী ও প্রাজ্ঞ নেতা দেশে নেই বলে মনে করেন নীতিনির্ধারকরা। বঙ্গবন্ধুর তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগকে চায় দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমর্থকরা। আগামী জাতীয় সম্মেলনে দলের সভাপতি ছাড়া তাই অন্যান্য যে কোনো পদে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা।

দলীয় সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েক নেতা কারণে ও অকারণে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলায় ব্যস্ত। তারা টিভিতে ও পত্রিকায় নিজের ছবি ও বক্তব্য প্রচারে যত আগ্রহী, দলের সাংগঠনিক কাজে গতি ফেরাতে ও নানাভাবে কার্যক্রম এগিয়ে নিতে তত আগ্রহী নন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত প্রায় এগার বছর ধরে দলের নেতৃত্বের সরকার দেশের নানা খাতে উন্নতির স্বাক্ষর রাখলেও দলীয় কার্যক্রম সেভাবে গোছালো রাখতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্তরা। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের শুধু কথায় ব্যস্ত থাকা কয়েক নেতার জন্য গত তিন বছরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দলীয় কার্যক্রম একেবারে ঝিমিয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আগামী সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়ার গুঞ্জন আছে।

উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা গত তিন বছরের মধ্যে তৃণমূলে কমিটি না হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দায়িত্বশীল নেতাদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেন তিনি। নেতারা জেলা সফর করেন কিন্তু কাজ করেন না বলেও ভর্ৎসনা করেন দলীয় প্রধান। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজনের দক্ষতায় প্রধানমন্ত্রী সন্তুষ্ট। তারা সরকার ও দল- দুই জায়গাতেই দক্ষতা ও পরিশ্রমের স্বাক্ষর রাখছেন। তাদের মধ্যে যারা শুধু দলীয় পদে আছেন, আগামী সম্মেলনের পর তাদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ মন্ত্রিসভায়ও ঠাঁই পেতে পারেন। দল পরিচালনায় তাদের বর্তমান কার্যক্রম বিবেচনা করে দলের শীর্ষ পদও দেওয়া হবে সম্মেলনের সময়।

তথ্যমতে, চলতি বছরের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের সময় সভাপতি শেখ হাসিনা দলের শীর্ষপদে ব্যাপক পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছেন দলকে যথাসম্ভব বিতর্কমুক্ত করে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে। আগামী সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুনদের অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিকল্পনাও চলছে দলটিতে। এ কারণেও কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়তে পারেন বেশ কয়েকজন। এর জন্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত তদারকি করছে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার গঠিত আটটি বিভাগীয় টিম।

সূত্র জানায়, আগামী কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ‘শুদ্ধি অভিযানের’ পক্ষে আওয়ামী লীগ। সরকারি দলের সঙ্গে যুক্ত ও দলের নাম ভাঙিয়ে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি করছেন যারা, তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তারের পাশাপাশি মূল দল এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন থেকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে দুভাবে অভিযান চলতে থাকবে। এর মধ্য দিয়ে বিতর্কিত, চাঁদাবাজ, অভিযুক্ত ও নানাভাবে অবৈধ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিয়ে দলকে ‘বিতর্কমুক্ত’ করা যাবে। আসন্ন সম্মেলন ঘিরে প্রভাবশালী উপদলগুলোর তৎপরতা রোধ করতে সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযান ভূমিকা রাখবে বলেও আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি। আগামী ডিসেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় সম্মেলন হওয়া পর্যন্ত অভিযান চালু রেখে এবং এর মধ্যে তৃণমূলের কমিটি নির্বাচন করে নতুন কমিটি নিয়ে নতুন বছরে পা রাখার পরিকল্পনা করছে সরকারি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে ‘শুদ্ধ অভিযান’ শুরু হয়েছে। দলে রাজনীতিবিদদের জায়গা করে দিতে ও দুর্বৃত্তদের হাত থেকে দলকে মুক্ত করতে চান আওয়ামী লীগ প্রধান। দলকে সম্ভাবনাময় ও প্রতিশ্রুতিশীল রাজনীতিকদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে চান তিনি। চলমান শুদ্ধি অভিযানের মধ্য দিয়ে দলে যারা শুদ্ধ নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন, তাদের স্থান করে দেওয়া হবে। জাতীয় সম্মেলনের আগে তাই এ অভিযানের বিষয়ে আরো কঠোর হয়ে উঠেছেন প্রধানমন্ত্রী। শুদ্ধি অভিযান নিয়ে তার অনড় অবস্থানের পেছনের অন্যতম কারণ দলের জাতীয় সম্মেলন।

দলীয় সূত্র জানায়, শুধু কেন্দ্রীয় কমিটিই নয়, দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কয়েক নেতাও পদ হারানোর ভয় ও আতঙ্কে আছেন। আবার শুধু দলীয় পদ থেকে বাদ পড়া নয়; চাঁদাবাজি ও অনিয়মের অভিযোগে সাংগঠনিক ব্যবস্থার মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি কেউ কেউ গ্রেপ্তার আতঙ্কেও আছেন। টানা প্রায় ১১ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত, এমন কয়েকজনকেও গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে দলে গুঞ্জন আছে। বিতর্কিত কারো পাশে আইনি লড়াইয়ের জন্য দলীয়ভাবে না দাঁড়াতে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনাও দেওয়া আছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads