• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

রাজনীতি

জাতীয় ইস্যুতে মাঠে নামবে সরকারবিরোধীরা

পৃথক মঞ্চে থাকছে শ্রমবাজার, জিএসপি রোহিঙ্গাসহ চুক্তি বাতিলের দাবি

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ০৯ অক্টোবর ২০১৯

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো দেশের স্বার্থবিরোধী হয়েছে বলে মনে করে সরকারবিরোধীরা। ইতোমধ্যে চুক্তিগুলোর বিরোধিতা করে বাম দল, নাগরিক ঐক্যসহ কয়েকটি সংগঠন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এখন তারা রাজপথে কঠোর কর্মসূচির কথা ভাবছে। এদিকে পৃথকভাবে দলীয় নেতারা চুক্তি বাতিলের দাবি জানালেও এখন পর্যান্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীর পাশাপাশি শরিক দলগুলো এই ইস্যুতে কর্মসূচি দিতে চাপ দিচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে চুক্তির খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করে চুক্তির বিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানোর পাশাপাশি নতুন কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে ভাবছে বিএনপি। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি ছাড়াও মধ্যপ্রচ্যের শ্রমবাজার, জিএসপি সুবিধা বাতিল, রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়গুলো এ কর্মসূচিতে থাকবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মধ্য সারির প্রভাবশালী এক নেতা জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ ভারতের সঙ্গে হওয়া চুক্তির বিরোধিতা করে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে। এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে বুয়েটে একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে। দলের নেতাকর্মী ও শরিকরা এই ইস্যুতে বিএনপির চুপ থাকাটা পছন্দ করছে না। সংগত কারণে এই ইস্যুতে কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।

এর আগে গত শনিবার নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। চুক্তিতে অন্য বিষয়গুলো নিয়ে তেমন আলোচনা না হলেও বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত তিস্তার পানি পাওয়ার কোনো সুরাহা না হওয়ায় দেশবাসী হতাশ। অন্যদিকে ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি ত্রিপুরার একটি শহরে সরিয়ে নেওয়ার সমঝোতার জন্য হতাশার মাত্রা বেড়েছে। চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে বিএনপিতে হতাশা ক্ষোভ থাকলেও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তারা কিছু বলেনি। শুধু প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ভারতের সঙ্গে ‘দেশবিরোধী’ চুক্তি করে সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহরসহ সব দেশবিরোধী চুক্তির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে ওইসব চুক্তি বাতিলের দাবি জানান তিনি।

আর নিজের ফেসবুকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নিজের অভিমত তুলে ধরে বলেন, নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সফলতা আসেনি। দুতরফা বৈঠকে একতরফা চুক্তি, তরল গ্যাস, চট্টগ্রাম মংলা বন্দর, ফেনী নদীর পানিও যাবে ভারতের ত্রিপুরার সাব্রুম শহরে। কথা ছিল মৃতপ্রায় তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে আসবেন, উল্টো পানি দিয়ে আসলেন। শুধু কি পানি? তরল গ্যাস, একাধারে চট্টগ্রাম আর মোংলা সমুদ্রবন্দর, গভীর সমুদ্রের গ্যাস ব্লক, করিডোরসহ অজানা আরো অনেক অনেক কিছু। বিনিময়ে এ দেশের ১৭ কোটি মানুষ কী পেলাম আমরা? ১৭ কোটি মানুষের জন্য ১টি মাত্র ঠাকুর পুরস্কার। দেশের মানুষের ন্যায্য প্রাপ্যটুকুও দরকষে আদায়ে ব্যর্থ নতজানু সরকার।

অনানুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির আরো কয়েকজন নেতাও এ নিয়ে কথা বলছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী আজ রাষ্ট্রীয় অবস্থান ব্যাখ্যা করার পরই বিএনপি দলীয় আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ও কর্মসূচি দিতে চায় বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দলের সিনিয়র নেতা ও কূটনীতিক উইং নিজেদের মধ্যে কথা বলার পাশাপাশি শরিক দলও এ বিষয়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলছে। কথা হয়েছে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গেও। এর ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সম্পাদিত চুক্তিসমূহ দেশের ‘স্বার্থবিরোধী’ অভিহিত করে তা বাতিলের দাবি নিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

এ বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ভারত, মিয়ানমার, চীনসহ ভিনদেশের সঙ্গে সমালোচনামূলক সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে। যে দেশের যে চাহিদা আওয়ামী লীগ সরকার তা-ই পূরণ করছে। সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ইস্যুতে দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সিকিমের পথে হাঁটবে কি না প্রশ্ন এসেছে।

তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় দেশবিরোধী কাজগুলো হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার হাত দিয়ে। তাও ইচ্ছাকৃতভাবে। এ পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে একটা বড় ধরনের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য খুব শিগগিরই কর্মসূচি দেওয়া হবে।

একই বিষয়ে বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির সব তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। শুধু ভারত সফরের ব্যর্থতাই নয়, কূটনৈতিভাবে সরকার কোনো ক্ষেত্রে সফল হতে পারেনি। সব কিছু খুঁটিনাটি জাতির সামনে দালিলিক প্রমাণসহ উপস্থাপন করতে চায় বিএনপি। এর মধ্যে মধ্যপ্রচ্যের শ্রমবাজার, জিএসপি সুবিধা বাতিল, রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়গুলো থাকবে। পৃথক মঞ্চ থেকে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ দলীয় দাবি-দাওয়ার কথা বলবে বিএনপি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads