• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে ১৪ দলে ভিন্নমত

ফাইল ছবি

রাজনীতি

ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে ১৪ দলে ভিন্নমত

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ১৬ অক্টোবর ২০১৯

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চুক্তিগুলোকে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের বেশির ভাগই ‘ইতিবাচক ও দেশের স্বার্থে করা’ বলে বিবেচনা করছে। তবে কয়েকটি দলের নেতাকর্মীদের এ বিষয়ে ভিন্নমত আছে। চুক্তিগুলোতে ‘ভারতীয় স্বার্থ বেশি প্রাধান্য পেয়েছে’ ও চুক্তিগুলো ‘একপক্ষীয়’ হয়েছে বলেও কোনো কোনো দল মনে করছে। তারা কোনো কোনো চুক্তির সমালোচনাও করছে। ভারতের কাছ থেকে বহুল প্রত্যাশিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি না পাওয়া ও তিস্তা নিয়ে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় অসন্তোষও প্রকাশ করছে দলগুলো। ১৪ দলীয় জোটের সবশেষ বৈঠকেও চুক্তির বিষয়গুলো আলোচনায় এলে কোনো কোনো দল ভিন্নমত প্রকাশ করে বলে বৈঠকে উপস্থিত সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রমতে, বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চার দিনের সফরে সাতটি চুক্তি ও তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব চুক্তি হয়েছে, এ বিষয়ে ১৪ দলের অন্তর্ভুক্ত সব দল তাদের বক্তব্য আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো জানায়নি। গত ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জোটের সবশেষ বৈঠক শেষেও এসব বিষয়ে জোটের মূল্যায়ন গণমাধ্যমকে জানানো হয়নি। বিভিন্ন দল ও সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ১৪ দলের কোনো কোনো নেতা এসব বিষয়ে ইতোমধ্যে বক্তব্য রেখেছেন। তাদের বক্তব্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নমত প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিগুলোর বিষয়ে আগামী ২২ অক্টোবর ঢাকায় গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করছে কেন্দ্রীয় ১৪ দল। ওই অনুষ্ঠান থেকে সব দলের অবস্থান ও বক্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যেতে পারে বলে ১৪ দলীয় সূত্র বাংলাদেশের খবরকে জানায়।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সবশেষ ভারত সফরকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে আবারো ভারত বিরোধিতা প্রকাশ্যে জোরালোভাবে নিয়ে আসার অপচেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াত। আওয়ামী লীগ ও সরকার ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বহাল রাখছে। একই সঙ্গে মানুষের মধ্যে আবার ভারতবিরোধী মনোভাব উসকে দেওয়ার যে চেষ্টা করছে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো, ১৪ দলের কেউ সেদিকে খেয়াল রেখে বক্তব্য দিচ্ছেন কি না, আওয়ামী লীগ সেদিকে নজরে রাখছে। জোটের শরিক চীনঘেঁষা কোনো কোনো দলের মৃদু ভারতবিরোধিতা আসলে তাদের রাজনৈতিক কৌশল মাত্র। তবে চুক্তিগুলো নিয়ে বিরোধীপক্ষের নানা অপপ্রচারের জবাব আওয়ামী লীগ থেকে বারবার দেওয়া হলেও জোটের বেশ কয়েকটি দলের নেতা এ বিষয়ে একেবারে নিশ্চুপ আছেন।

জোটের অন্যতম শরিক, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘ভারতকে বুঝতে হবে, কিছু পেতে গেলে অবশ্যই তাদের কিছু দিতেও হয়। এটা যদি তারা না বোঝে, তাহলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আজকে যে উচ্চতায় পৌঁছেছে, সেই সম্পর্ক স্বাভাবিকভাবেই বাধাগ্রস্ত হবে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা অনেক বেশি সংবেদনশীলতা দেখাচ্ছি। ভারত সেটা এখনো পর্যন্ত দেখাতে পারছে না। এটাও ঠিক, ফেনী নদীর পানি ও এলপিজি গ্যাস নিয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বিএনপি-জামায়াতের কোনো লাভ হবে না।’

১৪ দলীয় জোটের শরিক জাসদের (আম্বিয়া) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান মনে করেন, ‘ভারতের সঙ্গে করা চুক্তি ভারতের পক্ষে একপক্ষীয় হয়েছে বলে আলোচনা হচ্ছে। তিস্তার পানি বণ্টনের চুক্তিও হয়নি। ফলে মানুষের মধ্যে কিছুটা আলোচনা-সমালোচনা আছে।’

তবে ভারতের সঙ্গে করা সরকারের চুক্তির মধ্যে কোনটি দেশের স্বার্থবিরোধী, সেটা সুনির্দিষ্ট করে প্রমাণ করার জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন জোটের আরেক শরিক জাসদের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে ভারতের সঙ্গে সই হওয়া চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক নিয়ে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিরোধিতাকারীদের খোলা চ্যালেঞ্জ করছে জাসদ। কারো কাছে যদি বাংলাদেশের স্বার্থ লঙ্ঘিত হয়েছে, এমন তথ্য-উপাত্ত থাকে, তা প্রকাশ করার জন্য খোলা চ্যালেঞ্জ প্রদান করছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও সরকার দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, স্বার্থ সমুন্নত ও অক্ষত রেখেই মর্যাদা, সমতা, বিশ্বাস এবং আস্থার ভিত্তিতেই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সমস্যাগুলোকে একে একে সমাধান করে যাচ্ছে। একটি বিশেষ মহল ভারত বিরোধিতার বস্তাপচা রাজনীতির কৌশল হিসেবে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে।’

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফর নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। তার ভারত সফরে দেশের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ করে রাজনীতিতে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ‘দেশের স্বার্থহানিকর সব চুক্তি’ করেছে বলে দাবি করছে রাজনীতির মাঠে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি। সরকারের সমালোচনা করে দলটি বলছে, ‘এসব চুক্তি নিজ দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে শক্তিমান প্রতিবেশীকে খুশি করে ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখার সাময়িক ও ব্যর্থ চেষ্টা মাত্র।’ বিএনপি বরাবরের মতোই ‘অন্ধ ভারতবিরোধিতা’ থেকে এসব সমালোচনা করছে বলে দাবি করছে আওয়ামী লীগ।

ক্ষমতাসীন দল মনে করছে, দল ও সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে সিদ্ধান্ত ও চুক্তিগুলো নিয়ে বারবার ব্যাখ্যা দেওয়ার পরও বিরোধীপক্ষ নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ভারতবিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠী ও শক্তিগুলো এসব ইস্যুকে কেন্দ্র করে মাঠে নেমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে কোনো ষড়যন্ত্র করছে কি না-এমন আশঙ্কার কথাও বলছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারো কেন ভারতবিরোধিতা-এই প্রশ্নে ক্ষমতাসীন দলগুলোর পাশাপাশি বিশ্লেষকরাও বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরছেন।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে হওয়া চুক্তিগুলোর সমালোচনা করে বুয়েটের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় ও ভিন্নমত প্রকাশ করায় নিহত হওয়াকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ বাহারুল আলমকে দল থেকে গত ৯ অক্টোবর সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads