• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

রাজনীতি

তুষের আগুনে পুড়ছে জাপা

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ১৭ অক্টোবর ২০১৯

জোট ও ভোটের রাজনীতিতে বরাবরই ফ্যাক্টর ছিলেন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সেনাশাসক প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বিভিন্ন সময় সরকার গঠনে জাপাকে রাজনীতির বাজারে চড়া দামে খরিদ করত বৃহত্তম দলগুলো। কালের আবর্তে দুর্বল জাপার কদর এখন কমে গেছে। প্রভাব নেই রাজনৈতিক অঙ্গনে। দলের দশা বেহাল। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জ্বলছে তুষের আগুনের মতো। খোদ পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে এরশাদবিহীন জাপার গন্তব্য কোথায়? দলটি কি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে নাকি ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে লেজুড়ভিত্তিক চলবে? যদিও পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের আশা তার নেতৃত্বেই জাতীয় পার্টি নিজের পায়ে দাঁড়াবে। জনস্বার্থ নিয়ে তারা এককভাবে রাজপথে লড়বে।

এদিকে দলটির শীর্ষ ও সিনিয়র নেতারা কষছেন নতুন অঙ্ক। চাউর আছে এরশাদের উত্তসূরি রওশন এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদই পিতার নির্বাচনী আসনের মতো পার্টির চেয়ারের দাবি জানাতে পারেন। তাতে রওশন এরশাদসহ তার অনুসারী সিনিয়র অনেক নেতাই সমর্থন দিতে পারেন বলে জানা গেছে। তবে সে চিত্র মিলবে ডিসেম্বরে পার্টির জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে। এ নিয়ে তলে তলে কাজ করছেন রওশনপন্থিরা। সাবেক মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ অনেকেই আছেন চুপচাপ।

অন্যদিকে বসে নেই জি এম কাদেরকেন্দ্রিক জাপার একটি অংশ। তারা জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান রেখেই পার্টিতে রওশন বলয়কে দুর্বল করতে চায়। পার্টির চেয়ারম্যানের চেয়ার, সংসদের উপনেতা, সদ্য অনুষ্ঠিত রংপুরের উপনির্বাচনসহ গুচ্ছ ইস্যুতে কাদের ও রওশানের মধ্যে যে বিরোধ চলছিল তার দৃশ্যত সুরাহা হয়েছে। সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য থেকে একে-অপরকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ছাড় দিয়েছেন। কিন্তু নিজ নিজ টার্গেট থেকে সরেনি কেউ-ই। দুই পক্ষই সীমা রেখা টেনেছেন কাউন্সিল ঘিরে।

জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম মেম্বার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের খবররের কাছে দলটির ভেতর-বাইরের চিত্র বর্ণনা করেছেন। তার মতে, জাতীয় পার্টি আর এখন তৃণমূল নেতাকর্মী এমনকি সাধারণ মানুষের কাছে আগের মর্যাদায় নেই। এই পার্টির প্রধান অলঙ্কার ছিলেন এরশাদ। পার্টির পুঁজি ছিল সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। তার বিদায়ে দলের নেতারা, পরিবারের সদস্যরা যেমন বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে তেমনি কর্মীরাও পার্টি বিমুখ হয়েছেন।

এরশাদকে চৌকস রাজনীতিবিদ আখ্যা দিয়ে ওই নেতা বলেন, ক্ষমতাসীন বলেন আর বিরোধী পক্ষ বলেন-কারো কাছেই এই পার্টির বর্তমান শীর্ষ নেতার রাজনৈতিক দাম এরশাদের মতো নেই। এরশাদের ধারের কাছে যাওয়ার মতো সক্ষমতা জি এম কাদের বা রওশন এরশাদের মধ্যে নেই।

পার্টির অতীত থেকে জানা গেছে, ভোটের রাজনীতিতে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের মিত্র হিসেবে ছিলেন জেনারেল এরশাদ এবং তার দল জাতীয় পার্টি। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে সরাসরি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকেই অংশ নিয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং সর্বশেষ গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে জাতীয় পার্টি ২২টি আসন নিয়ে বিরোধী দলের আসনে বসেছে।

এর আগে জেনারেল এরশাদ ১৯৯৮ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে যোগ দিয়ে কিছুকাল পরেই আবার জোট ত্যাগ করেন। ২০১৭ মহাজোট থেকে বেরিয়ে এরশাদ নিজেই সম্মিলিত জাতীয় জোট (সংক্ষেপে ইউএনএ) তাতে ডানপন্থি ও মধ্য ডানপন্থি ৫৮টি দল শরিক হয়। ২০১৮ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি সমাবেশও করেন। কিন্তু সে জোটের হদিস নেই। গত নির্বাচনে একটি আসনও শরিকদের দিতে পারেনি। ফলে ছোট হয়ে গেছে জাপা।

এক প্রশ্নে জেনারেল এরশাদকে দুই দলের দিক থেকেই কাছে টানার চেষ্টার কথা স্বীকার করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। তবে তিনি বলেছেন, গত কয়েকটি নির্বাচন থেকেই জাতীয় পার্টির প্রভাব কমে এসেছে। তিনি বলেন, এটা তো অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, পার্লামেন্টে সংখ্যার ব্যাপার একটা আছে। সেখানে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভোটের নিয়ন্ত্রণ তারা করতেন, সে কারণে তার দলের সমর্থন সংসদীয় ব্যবস্থায় খুব জরুরি ছিল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads