• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক বহিষ্কার

ফাইল ছবি

রাজনীতি

যুবলীগ থেকে ওমর ফারুককে অব্যাহতি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২০ অক্টোবর ২০১৯

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের চেয়ারম্যান পদ থেকে ওমর ফারুক চৌধুরীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

রোববার গণভবনে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিনিধি দলের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পাশাপাশি আগামী ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত যুবলীগের সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে আহ্বায়কের দায়িত্ব পেয়েছে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য চয়ন ইসলাম। সদস্য সচিব হয়েছে সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ। সংগঠনটির সদস্য হওয়ার নতুন বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ বছর। আগামী সম্মেলন পর্যন্ত প্রস্ততি কমিটি যুবলীগের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে অনুষ্ঠিত যুবলীগের বৈঠকেও যোগ দেননি প্রভাবশালী এ নেতা। নীরব পতন ঘটল তার। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞা থাকায় সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীসহ সভাপতিমণ্ডলীর অপর তিনজন সদস্যও বৈঠকে উপস্থিত হতে পারেননি। যুবলীগের

 সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, শেখ ফজলুর রহমান মারুফ এবং শেখ আতিয়ার রহমান দীপুও সংগঠনের গতকালের গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন মহলে ছড়িয়ে পড়ে ওমর ফারুক চৌধুরীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অবৈধ ক্যাসিনোবিরোধী

অভিযান শুরু হলে নাম আসা যুবলীগের বিতর্কিত ও দুর্নীতিতে জড়িত বলে অভিযুক্ত নেতারা বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারবেন কী পারবেন না, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংগঠনটির এ বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারিত হওয়ার পর থেকেই এমন আলোচনা ছিল।

সূত্র জানায়, আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি

বাসভবন গণভবনে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে তিনি চলমান সংকট নিরসনসহ ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। গত বুধবার সন্ধ্যার পর যুবলীগের কয়েকজন নেতা তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে ২০ অক্টোবর বিকালে বৈঠকের জন্য সময় দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ।

গতকাল গণভবনে প্রবেশের জন্য যুবলীগের পক্ষ থেকে যে তালিকা সরবরাহ করা হয়েছে, তাতে চেয়ারম্যান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাওন, মারুফ ও দীপুর নামের পাশে ক্রসচিহ্ন ছিল। তবে বৈঠকে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদসহ ৩৬ জন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অংশ নিতে তারা গতকাল বিকাল ৪টার পর থেকেই একে একে গণভবনে প্রবেশ করতে থাকেন।

সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে ছাড়াই কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুবলীগ। এমনকি নতুন কমিটিতেও আর ঠাঁই পাচ্ছেন না ওমর ফারুকসহ অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত বলে অভিযুক্তরা। সংগঠনের সার্বিক পরিস্থিতি ও সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস (সম্মেলন) সামনে রেখে চেয়ারম্যানকে ছাড়াই গত ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছে যুবলীগের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের বৈঠক।

গত ১৮ অক্টোবর রাজধানীর বনানীতে শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে গণভবনে যুবলীগের রোববারের বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, ‘গণভবনে যুবলীগের বৈঠকে কাকে ডাকবেন বা ডাকবেন না তা প্রধানমন্ত্রীর বিষয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যুবলীগ নিয়ে গণভবনে বৈঠক ডেকেছেন। সেখানে যাদের বলা হয়েছে, তারাই শুধু মিটিংয়ে যাবেন। বৈঠকে যুবলীগের চেয়ারম্যানকে কেনো ডাকা হয়নি, কোন বয়স পর্যন্ত যুবলীগ করা যাবে, সেসব আলোচনা রোববারই (২০ অক্টোবর) করা হবে।’

রাজধানীতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ক্যাসিনোতে অভিযান চালানোর পর র‍্যাব ও পুলিশের বিরুদ্ধে প্রথমে প্রশ্ন তোলেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। প্রথমে তিনি প্রশ্ন তোলেন, এত দিন অবৈধভাবে চলা ক্যাসিনো বা জুয়ার বিরুদ্ধে কেন অভিযান চালানো হয়নি। তবে এর কয়েক দিন পরই সুর নরম করেন তিনি। অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানোর পেছনে যুবলীগের অনেকে জড়িত থাকার যে অভিযোগ উঠেছে, সংগঠনের সভাপতি হিসেবে এটি তার ব্যর্থতা বলে তিনি মনে করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাকেই ধরবে, তাকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও জানান তিনি।

যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার আগে তামাকের বিকল্প ‘টেন্ডু পাতা’ থেকে শুরু করে তৈরি পোশাকের ব্যবসা করেছেন ওমর ফারুক। বিড়ি শ্রমিক লীগ, জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন, আওয়ামী লীগ করেও লম্বা সময় ছিলেন পেছনের কাতারে। ১৯৪৮ সালে জন্ম নেওয়া ওমর ফারুক সত্তরের দশকে চট্টগ্রাম জেলা বিড়ি শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তবে যুবলীগ তাকে নিয়ে গেছে শীর্ষে। যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার পর শোধ করেছেন পুরনো ব্যর্থতার দেনা। ২০০৩ সালে যুবলীগের সভাপতিণ্ডলীর সদস্য হন তিনি। এর আগের কমিটিতে কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আর ২০১২ সালে হন চেয়ারম্যান।

৬৪ বছর বয়সে তিনি হয়েছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান। অথচ যুবলীগের ইতিহাসে এর আগে ৫০ বছরের বেশি বয়সী কেউ চেয়ারম্যান হননি। চেয়ারম্যান হওয়ার পর যুবলীগে ওমর ফারুকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ক্ষমতাসীন দলের যুব সংগঠনের শীর্ষ পদ পাওয়ার পর সম্পদ নিলামে ওঠার পরিস্থিতি সামলে নিয়েছেন এবং ধনাঢ্য জীবনযাপন করছেন। যদিও তার দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা নেই।

এইচ এম এরশাদ ক্ষমতায় আসার সময় ওমর ফারুক শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জাতীয় পার্টির প্রয়াত নেতা নাজিউর রহমান (মঞ্জু) এরশাদের মন্ত্রিসভার সদস্য হলে ওমর ফারুক দলবদল করেন। জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠন যুব সংহতির চট্টগ্রাম উত্তর জেলার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ওমর ফারুক প্রয়াত নাজিউর রহমানের ভায়রা ভাই এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভগ্নিপতি। যুবলীগের অনেকেই এখন তাকে সংগঠনের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে।

চলমান শুদ্ধি অভিযানের মধ্যেই ঘোষণা করা হয় আওয়ামী লীগের চারটি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ। এ অনুযায়ী আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৩ নভেম্বর। গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আওয়ামী লীগের অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads