• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
তৃণমূলের কাঠগড়ায় শীর্ষ নেতারা

বিএনপি লোগো

ফাইল ছবি

রাজনীতি

তৃণমূলের কাঠগড়ায় শীর্ষ নেতারা

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ৩১ অক্টোবর ২০১৯

কেন্দ্র ও তৃণমূলের নেতাদের কাছে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়ছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের চরম অবহেলা আর ঔদাসীন্যের কারণে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনে এই আবেগজড়িত প্রশ্ন ধীরে ধীরে বিস্ফোরণোন্মুখ হয়ে উঠছে। সাবেক মহাসচিব প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমানের স্মরণসভায় তোপের মুখে পড়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান অতিথি হিসেবে মির্জা ফখরুল যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন ক্ষোভে ফুঁসে ওঠা একাধিক নেতাকর্মী তাকে সোজাসাপটা প্রত্যাখ্যান করে চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘আপনি ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) মুক্তির জন্য কোনো কর্মসূচিই দিতে পারেননি, ব্যর্থ নেতার মুখে বড় বড় কথা মানায় না। মঞ্চ থেকে নামুন।’ ওই কর্মীকে তখনই মঞ্চে এনে রক্তচক্ষুতে শাসিয়েছেন মির্জা ফখরুল। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে হাজার হাজার নেতাকর্মীর সামনেই প্রায় আধঘণ্টার এ দৃশ্য ছিল গত বছরে মার্চ মাসের। ইতোমধ্যে পার হয়েছে আরো ২০ মাস। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারিতে কারাবন্দি হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তার মুক্তির খবর দিতে পারেননি বিএনপির নেতারা, উল্টো খবর শোনাচ্ছেন বন্দি খালেদা জিয়া মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। দলীয় প্রধান

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতিতে নীতিনির্ধারকদের শীতল থাকা, রাজপথ থেকে দলকে ঘরে ঢোকানো এবং দেশি-বিদেশি বন্ধুত্বের দূরত্ব বাড়ানোসহ শত কারণে দলে দিন দিন ক্ষোভের মাত্রা বেড়েছে। একই সঙ্গে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর হতাশা। বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাঠগড়ায় দলটির নীতিনির্ধারকরাও। বিদ্যমান অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে দলটির কেউ কেউ লাঞ্ছিত হতে পারেন বলে খোদ নীতিনির্ধারকরাই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এদিকে চরম গরমে শীতাতপ কক্ষে বসে যারা আয়েশের রাজনীতি করছেন বিএনপির সেসব নেতার জন্য সুসংবাদ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আন্দোলনের সময় পালিয়ে  বেড়াবেন, বিশ্রামে থাকবেন, বিদেশ ভ্রমণ করবেন, অনেক ব্যস্ত আছি, হাতে অনেক কাজ, সময় নাই, পরে এসে দলের বড় বড় পদ লাগবে, পদগুলো আগলে রাখবেন, এমপি হবেন, মন্ত্রী হবেন, এটা আর হবে না- এমন বার্তাই ছিল তার বক্তব্যে।

খালেদা জিয়ার স্বজনসহ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল সম্প্রতি জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। খারাপ বললে হবে না, এটা হচ্ছে সংকটাপন্ন। অর্থাৎ জীবনের হুমকি দেখা দিয়েছে এখন এবং তিনি সুস্থ অবস্থায় ফিরে না আসার শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারেন না, নিজে খাবার খেতে পারেন না, তিনি এক পা হাঁটতেও পারেন না।

নিকট অতীতে এক সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছিলেন, যে ধরনের আন্দোলন আমরা করছি, আর ম্যাডামের (খালেদা) শারীরিক যে অবস্থা তাতে আমাদের জেলখানা থেকে ওনাকে জীবিত গ্রহণ করা সম্ভব হবে না। অবশ্য হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘স্থিতিশীল’। বাঁচা-মরা আল্লাহর হাতে। এ কথারও জবাব দিয়ে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, সরকারের শেখানো কথা বলছেন চিকিৎসকরা।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সোজা আঙুলে তো ঘি উঠবে না। আমাদেরকে রাস্তায় নামতে হবে, আমাদেরকে আন্দোলন করতে হবে। বাধ্য করতে হবে সরকারকে, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে। সাবেক ছাত্রনেতাদের এক সমাবেশে আমান উল্লাহ আমান বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে প্রয়োজনে নেতারা স্বেচ্ছায় কারাবন্দি হবেন। এমন কথা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গত বছরও বলেছেন। গতকাল বুধবারও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এক সভায় বলেছেন, যারা আন্দোলন করতে পারবেন না সংগঠনের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না তারা আল্লাহর ওয়াস্তে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু মঞ্চের বক্তব্য আর বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই। 

অসুস্থ খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের বাগ্যুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছেন। কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা-মহানগর ও গ্রাম পর্যায়ে যেখানেই নীতিনির্ধারকদের পাচ্ছেন প্রশ্ন করছেন, মাত্র দুই কোটি টাকার অভিযোগে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়াকে মাসের পর মাস কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। আপনারা আন্দোলনে নামছেন না কেন? এত বড় ভুয়া নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় নেতারা কেন চুপসে গেলেন। দীর্ঘ ৩৫ বছরে খালেদা জিয়ার পেছনে রাজনীতি করে কি শিখেছেন যে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না? এমন শত প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে নেতাদের। এ চিত্র মিলেছে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে।

দিনাজপুরের বিএনপি নেতা ইসমাইল হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন ‘বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে এবং তারেক রহমান দেশে না থাকায় দল এখন ক্রান্তিকাল পার করছে। আমরা বর্তমানে বিএনপির রাজনীতির কোনো কূল-কিনারা দেখছি না। তৃণমূলকে কাজে লাগাতে পারছে না কেন্দ্র। কেন্দ্র মনে করছে তারা ঠিক করছে কিন্তু তারা তো ভালো কিছু উপহার দিতে পারছে না।’

পিরোজপুরে জেলা বিএনপির নেতা বাহার উদ্দিন বলেন, ‘বিএনপি সঠিকভাবে জনগণকে কাজে লাগাতে পারছে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ তার সব কৌশল কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার বলছে দেশে এখন উন্নয়নের জোয়ার বাইছে। আমরা যারা বিএনপি করি তারা দেখছি উন্নয়ন সঠিকভাবে হচ্ছে না। এ কথা কিন্তু আমরা জনগণকে বিশ্বাস করাতে পারছি না।’

কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে ‘পাতি শিয়াল’র উপমা টেনে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি নেতা সিদ্দিকুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বললেন, ‘এসি গাড়িতে ঘুরে ও এসি রুমে বসে বক্তব্য দিলে কোনোকালেই আন্দোলন হবে না। জনগণকে আন্দোলনে নেওয়া যাবে না।’ দলের নেত্রীকে মুক্ত করতে না পারা একমাত্র দলের দায় বলে মনে করেন তিনি।

খালেদা জিয়া কারাগারে থাকাটা দলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি উল্লেখ করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, বেগম জিয়া কারাগারে, অন্যদিকে তারেক জিয়া দেশের বাইরে থাকায় দল ক্ষতির মুখে। ২০১৪ সালের মতো এবারো ফুঁসে ওঠা তৃণমূলকেও কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে তার স্বীকারোক্তি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads