• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

রাজনীতি

শ্রমিক লীগের নেতৃত্বেও নতুন মুখের চমক!

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ০৮ নভেম্বর ২০১৯

শুদ্ধি অভিযানের মতো বড় ধাক্কা ও ভিন্ন রকম পরিবেশের মধ্য দিয়ে এবার আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হচ্ছে। সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসায় নেতাকর্মীদের চাঞ্চল্য ও উদ্দীপনার সঙ্গে কিছু প্রশ্ন যোগ হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চিরচেনা স্লোগান, মিছিল ও পদপ্রত্যাশীদের মহড়ার দৃশ্য নেই এবার। কঠোর শুদ্ধি অভিযান চলাকালীন কেমন হতে পারে সংগঠনটির নতুন কমিটি, কারা আসছেন নেতৃত্বে, বিতর্কিত নেতৃত্বের গন্তব্য কোথায়— আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাদের কাছেও একই প্রশ্ন ও নানা কৌতূহল। সংগঠনটির নতুন নেতৃত্বের বিষয়ে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অনেক নেতার অন্যবারের মতো এবার স্পষ্ট কিছু জানা নেই। মূল দল ও সংগঠনে শুদ্ধি অভিযান চলাকালে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনের বিষয়গুলো আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখভাল করছেন। ফলে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সম্পর্কে জানতে সম্মেলনের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া পথ নেই বলে মনে করেন অনেকে।

দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলাকালে আওয়ামী লীগের সহযোগী যে চারটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষিত হয়, সেগুলোর মধ্যে দুই নম্বরে আছে শ্রমিক লীগ। ক্যাসিনো ঝড় যুবলীগের মতো শ্রমিক লীগের ওপর দিয়ে সেভাবে বয়ে না গেলেও সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গত কয়েক বছরের মধ্যে প্রায়ই সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হন। সরকারি দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে গত ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া কৃষক লীগের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন ও বিতর্কমুক্ত নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। কৃষক লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উম্মে কুলসুম স্মৃতি নির্বাচিত হয়েছেন। সংগঠনটির জন্মের পর প্রায় পাঁচ দশক পর এবারই প্রথমবারের মতো শীর্ষ দুটি পদের একটিতে একজন নারীকে দায়িত্ব দেওয়া হলো। সম্মেলনের আগে পর্যন্ত স্মৃতি সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তেমন আলোচনায় ছিলেন না। শ্রমিক লীগের শীর্ষ নেতৃত্বেও নতুন মুখের চমকের সম্ভাবনা বেশি বলেই নেতাকর্মীদের ধারণা। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে নানাভাবে এ বিষয়ে ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে।

সূত্র বলছে, দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন এবারই প্রথম ভিন্ন এক পরিবেশে হচ্ছে। দলের সভাপতি ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নতুন পরিবেশের মুখোমুখি করেছে সংগঠনগুলোকে। কয়েকটি সহযোগী সংগঠনের নেতা অভিযানে আটক হয়েছেন, বহিষ্কারও হয়েছেন বেশ কয়েকজন, গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে বা বিদেশেও পলাতক আছেন কয়েকজন। ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়কে ঘিরে পদপ্রত্যাশী নেতাদের পক্ষে কর্মী ও সমর্থকদের মহড়া নেই। দলীয় কার্যালয়কে ঘিরে সকাল-বিকাল স্লোগান বা মিছিলও হচ্ছে না। এমন বাস্তবতায় আগামীকাল ৯ নভেম্বর, শনিবার, শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হচ্ছে। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই সর্বশেষ সংগঠনটির সম্মেলন হয়। দুই বছর মেয়াদি এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে চার বছরের বেশি সময় আগে। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সকালে সম্মেলন শুরু হবে আর দুপুরের পর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনের আয়োজন হবে। খরচ কমাতে এবার একই মঞ্চে আওয়ামী লীগের সব সম্মেলনের আয়োজন হচ্ছে বলে জানান দলের শীর্ষ কয়েক নেতা।

সূত্রমতে, অভিযুক্ত, দুর্নীতিবাজ ও তদবিরবাজরা চলমান অভিযানের পাশাপাশি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে শ্রমিক নেতৃত্ব থেকে বাদ পড়ছেন। বাস্তবতা মেনে যোগ্য নেতৃত্বের হাতে সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে এবার তৃণমূলে আশাবাদ জন্মেছে। সংগঠনের নেতৃত্বে প্রবীণ ও নবীন মিলিয়ে নতুন মুখ উঠে আসার সম্ভাবনাই বেশি। সম্মেলনে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতির ইচ্ছা প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে ইচ্ছুক স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতা ও সম্ভাব্য পদপ্রার্থীরাই দায়িত্ব পাবেন, ঝরে পড়বেন বিতর্কিতরা।

আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের চারটি সহযোগী সংগঠনের জাতীয় সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রত্যাশীদের ‘আমলনামা’ আছে দলের সভাপতির কাছে। মাঠে তাদের রাজনৈতিক অর্জন, নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয়তা, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও বিশেষ করে গত প্রায় এগারো বছর ধরে আওয়ামী লীগ টানা সরকারে থাকা অবস্থায় তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত আছে ‘আমলনামাগুলোয়’। সরকারি দলের শীর্ষ নেতা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পদপ্রত্যাশীদের সম্পর্কে এসব ‘আমলনামা’ বা প্রতিবেদন সংগ্রহ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রমিক লীগের আগামী নেতৃত্ব নির্ধারণের জন্য পদপ্রত্যাশীদের চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক নেত্রীও তিনি। দলের সংগঠনগুলোকে বিতর্কমুক্ত করতে আর সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বকে শীর্ষ পদে জায়গা করে দিতে তিনি পদপ্রত্যাশীদের বিস্তারিত খোঁজ নেন বলে সূত্র উল্লেখ করে। নতুন কমিটিতে অনুপ্রবেশকারীদের কোনো পদে ঠাঁই না দেওয়ার কঠোর হুঁশিয়ারি আছে দলের।

জানা গেছে, সম্মেলন সামনে রেখে মাঠে নেমেছেন শ্রমিক লীগে পদপ্রত্যাশীরা। শীর্ষ পদে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান কমিটির কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, সহসভাপতি হাবিবুর রহমান আকন্দ, সহসভাপতি জহিরুল ইসলাম চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব মোল্লা, আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সফর আলী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম মিলকী, কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাহাবুদ্দিন প্রমুখ।

সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন পর সম্মেলনের তারিখ ঘোষিত হওয়ায় আওয়ামী লীগের অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোর মতো প্রাণচাঞ্চল্য ফেরে শ্রমিক লীগেও। নতুন কমিটিতে স্থান পেতে বিভিন্ন পর্যায়ে চলে পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। তদবির করেন মূল দলের নীতিনির্ধারকদের কাছেও। আবারো পদপ্রত্যাশী বিতর্কিত ও অভিযুক্ত বেশ কয়েক নেতা। ১৯৬৯ সালের ১২ অক্টোবর প্রতিষ্ঠা লাভ করে জাতীয় শ্রমিক লীগ। সংগঠনটির সর্বশেষ সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে নারায়ণগঞ্জের শ্রমিক নেতা শুক্কুর মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জনতা ব্যাংক ট্রেড ইউনিয়নের নেতা সিরাজুল ইসলাম দায়িত্ব পান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads