• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

রাজনীতি

কেমন নেতৃত্ব পাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ০৯ নভেম্বর ২০১৯

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে যুবলীগের পরে ক্যাসিনো ঝড়ের ঝাপটা বেশি লেগেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগে। চলমান শুদ্ধি অভিযানে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ দুই নেতাকেই নানা প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। দুজনেই আছেন অভিযোগের কাঠগড়ায়। শুধু কেন্দ্রীয় কমিটিই নয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের অনেক নেতার দখল, টেন্ডারবাজি ও অনিয়ম সংগঠনের পাশাপাশি মূল দল আওয়ামী লীগকেও সমালোচনার মুখোমুখি করেছে। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সরকারকেও বিব্রত করে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের কর্মকাণ্ড। এমন পরিস্থিতিতে সাত বছর পর আয়োজন হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন। শুদ্ধি অভিযানের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনটি বিতর্কিত ও দুর্নীতিবাজদের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রত্যাশা শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পর্যন্ত।

ক্যাসিনোকাণ্ডে খড়গ নেমে আসার পর স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ চারটি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ একসঙ্গে ঘোষণা করা হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। এগুলোর মধ্যে আগামী ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হবে। এর আগে ১১ ও ১২ নভেম্বর হবে সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ দুই শাখা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলনের প্রস্তুতিও চলছে জোরেশোরে। কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের কমিটিতে পদের জন্য চলছে দৌড়ঝাঁপ। দিন দিন পদপ্রত্যাশীদের তালিকাও বড় হচ্ছে। শুদ্ধি অভিযানের মতো বড় ধাক্কা ও ভিন্ন রকম পরিবেশের মধ্য দিয়ে এবার স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হচ্ছে। কঠোর শুদ্ধি অভিযান চলাকালে কেমন হতে পারে সংগঠনটির নতুন কমিটি, কারা আসছেন নেতৃত্বে, বিতর্কিত নেতৃত্বের গন্তব্য কোথায়-আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাদের কাছেও একই প্রশ্ন ও নানা কৌতূহল।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে এবার ক্যাসিনো ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজের সঙ্গে জড়িতদের বাদ দিয়ে যোগ্য, সৎ, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির ও রাজনীতিতে দীর্ঘ পথপরিক্রমা রয়েছে এমন নেতারাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন নেতৃত্বে ঠাঁই পাবেন। এমনকি সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্য থেকেও কাউকে বড় দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, ইমেজ নষ্ট, এমন কেউ নেতৃত্বে আসতে পারবেন না। যারা নেতৃত্বে আসবেন, তাদের অবশ্যই সৎ, অভিজ্ঞ ও সাংগঠনিকভাবে দক্ষ হতে হবে।’

সূত্রমতে, অভিযুক্ত, দুর্নীতিবাজ ও তদবিরবাজরা চলমান অভিযানের পাশাপাশি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্ব থেকে বাদ পড়ছেন। বাস্তবতা মেনে যোগ্য নেতৃত্বের হাতে সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে এবার তৃণমূলে আশাবাদ জন্মেছে। সংগঠনের নেতৃত্বে প্রবীণ ও নবীন মিলিয়ে নতুন মুখ উঠে আসার সম্ভাবনাই বেশি। সম্মেলনে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতির ইচ্ছা প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে ইচ্ছুক স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতা ও সম্ভাব্য পদপ্রার্থীরাই দায়িত্ব পাবেন, ঝরে পড়বেন বিতর্কিতরা।

আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের চারটি সহযোগী সংগঠনের জাতীয় সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রত্যাশীদের ‘আমলনামা’ আছে দলের সভাপতির কাছে। মাঠে তাদের রাজনৈতিক অর্জন, নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয়তা, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও বিশেষ করে ১১ বছর ধরে আওয়ামী লীগ টানা সরকারে থাকা অবস্থায় তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত আছে ‘আমলনামাগুলোয়’। সরকারি দলের শীর্ষ নেতা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পদপ্রত্যাশীদের সম্পর্কে এসব ‘আমলনামা’ বা প্রতিবেদন সংগ্রহ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। স্বেচ্ছাসেবক লীগের আগামী নেতৃত্ব নির্ধারণের জন্য পদপ্রত্যাশীদের চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। দলের সংগঠনগুলোকে বিতর্কমুক্ত করতে আর সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বকে শীর্ষ পদে জায়গা করে দিতে তিনি পদপ্রত্যাশীদের বিস্তারিত খোঁজ নেন বলে সূত্র উল্লেখ করে। নতুন কমিটিতে অনুপ্রবেশকারীদের কোনো পদে ঠাঁই না দেওয়ার কঠোর হুঁশিয়ারি আছে দলের।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল শুক্রবার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে যারা অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন, তারা সবাই অনুপ্রবেশকারী নন। কারো বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার সংশ্লিষ্টতা না থাকলে, কোনো মামলা-মোকদ্দমা ও কোনো ধরনের অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকলে তারা অনুপ্রবেশকারী নন। যাদের সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে, তাদের আওয়ামী লীগে জায়গা দেওয়া হবে না।’

অন্যদিকে সম্মেলন সামনে রেখে চাঙা হয়ে উঠেছেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের নেতারা। শীর্ষ পদ পেতে ধরনা দিচ্ছেন প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রীর বাসা এবং কার্যালয়ে। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর ঢাকা মহানগরীজুড়ে পোস্টার, ফেস্টুনে প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন তারা। ১১ নভেম্বর ঢাকার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে মহানগর দক্ষিণের এবং ১২ নভেম্বর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে মহানগর উত্তরের সম্মেলন হবে। ২০০৬ সালের ৩১ মে ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে ঢাকা মহানগর দুই ভাগ হয়। ২০১২ সালে স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলন হলেও মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন হয়নি।

এবার স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতি পদপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন- জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, সহসভাপতি মতিউর রহমান মতি, মঈন উদ্দিন মঈন, সৈয়দ নরুল ইসলাম নুরু, সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়, এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু, কাজী শহিদুল্লাহ লিটন, তাপস কুমার পাল ও নির্মল কুমার চ্যাটার্জী প্রমুখ।

সাধারণ সম্পাদক পদের লড়াইয়ে রয়েছেন বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, শেখ সোহেল রানা টিপু, সাজ্জাদ সাকিব বাদশা, আবদুল আলীম ব্যাপারী, দপ্তর সম্পাদক সালেহ মোহাম্মদ টুটুল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লিটন, প্রচার সম্পাদক ওবায়দুল হক খান এবং সহপাঠাগারবিষয়ক সম্পাদক এম এ হান্নান প্রমুখ।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ পদের আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় কার্যনিবার্হী কমিটির সদস্য জসিম উদ্দিন। তিনি এবার সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। সাবেক এ ছাত্রনেতা উজ্জ্বল ভাবমূর্তির কারণে অনেক প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে আছেন। সংগঠনের জন্য জসিম উদ্দিনের শ্রম ও ত্যাগ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিবেচনা করছে। বিশেষ করে এক-এগারো চলাকালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হলে তার মুক্তির জন্য জসিম উদ্দিনের সাহসী লড়াই, আন্দোলন ও কর্মসূচি পালনকে দল বিশেষ বিবেচনা করছে।

এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান টিটু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারেক সাঈদ ও আবুল কালাম আজাদ হাওলাদার, মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও শেখ আনিসুর রহমান রানা এবার শীর্ষ পদের আলোচনায় আছেন।

ঢাকা মহানগর উত্তরের স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ পদের আলোচনায় আছেন বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম রাব্বানী, সাংগঠনিক সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইসহাক মিয়া। এ ছাড়া বর্তমান কমিটির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন সরদার, প্রচার সম্পাদক দুলাল হোসেন, দক্ষিণখান থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আনিছুর রহমান নাঈম, তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আমজাদ হোসেন ও মোহাম্মদপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক বাবুর নামও আছে আলোচনায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads