• মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪২৮
নতুন নির্বাচন নাকি খালেদার মুক্তি

সং‍গৃহীত ছবি

রাজনীতি

দোটানায় বিএনপি

নতুন নির্বাচন নাকি খালেদার মুক্তি

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

দোটানায় বিএনপি। সামনে দুই ইস্যু-দলীয়প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নতুন করে সংসদ নির্বাচনের দাবি। একটি দলীয় দাবি অন্যটি জাতীয়। সফলতা পেতে আন্দোলনে কোন ইস্যুকে সামনে আনবে-তা নিয়েই হিসাব কষছেন নীতি- নির্ধারকরা।

আইনি প্রক্রিয়ায় আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না গত বৃহস্পতিবারই তা স্পষ্ট হয়েছে বিএনপি। তাই উচ্চ আদালতের আদেশ পেয়ে ওই দিন রাতেই টানা দুই ঘণ্টা বৈঠক করেছে দলটির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম। বৈঠক থেকে আগামীকাল রোববার সারা দেশে প্রতিবাদ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ হবে থানায় থানায়।  

দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাফ কথা ‘বিক্ষোভ, মানববন্ধন’-এসব কর্মসূচি দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না। গতানুগতিক কর্মসূচি বাদ দিয়ে নতুন নির্বাচনের দাবি বা সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের দিকে হাঁটার দাবি জানিয়েছেন তারা। তবে কর্মসূচি দিয়ে শীর্ষ ও সিনিয়র নেতাদের অতীতের মতো ঘরে বসে থাকা যাবে না-এ দাবির পক্ষে আছেন নীতি-নির্ধারকদের একাংশও।  

এদিকে নীতি-নির্ধারকদের অপর অংশের ভাবনায় প্রথমত, নতুন নির্বাচনের দাবিকে জোরালো করা। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। সরকারবিরোধীদের মতে, এটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন। তাদের চিন্তায় দ্বিতীয় ইস্যু হলো, খালেদা জিয়ার মুক্তি। এ জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করতেও আপত্তি নেই নীতি-নির্ধারকদের এই অংশের। এ অংশের মতে, খালেদা জিয়ার মুক্তিটি বিএনপির দলীয় দাবি; এ নিয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করা যাবে না। সংগঠনও দুর্বল। তাই নরম কর্মসূচি দিয়ে ধীরে ধীরে মাঠ নিয়ন্ত্রণে নেওয়া সঠিক হবে। একই সঙ্গে আভ্যন্তরীণ আন্দোলনে ভিনদেশিদের সমর্থনকে সম্পৃক্ত করতে চায়। এরই মধ্যে সরকারের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে দাতাগোষ্ঠীদের অনেকেই মুখ ফেরাতে শুরু করেছেন, সামনের দিনে সরকার বনাম প্রভাবশালী দেশের মধ্যে দূরত্ব আরো বাড়বে বলে আশা করে আছে বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা।  

দীর্ঘ ২২ মাস ধরে কারাবন্দি খালেদা জিয়া। এর মধ্যে ৬ মাস ধরে আছেন হাসপাতালে। কারাবরণের আগে থেকেই আইনজীবীদের আভাস-ইঙ্গিত ছিল, আইনি লড়াইয়ে বিজয় আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ তারা মনে করেন, এ মামলা রাজনৈতিক। রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথে আন্দোলনের পরামর্শ ছিল আইনজীবীদের। মানববন্ধন, প্রতিবাদ বিক্ষোভ, অনশন, গণস্বাক্ষর, জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি, লিফলেট বিলিসহ কিছু কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছিল কিন্তু সরকারি বাধা ডিঙিয়ে তা সফলতার মুখ দেখেনি। 

অন্যদিকে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তা বাতিল এবং নতুন নির্বাচনের দাবি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা ছিল দলটির নীতিনির্ধারকদের। সে জন্য সভা-সমাবেশে নতুন নির্বাচনের কথা বলেও আসছেন বিএনপিসহ তাদের মিত্র দলগুলো। বিএনপি জোট দীর্ঘ ১২ বছর ক্ষমতার বাইরে। চলতি একাদশ সংসদ নির্বাচনও পার করেছে এক বছর। এর মধ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী, সংগঠন গুছিয়ে আন্দোলনের নামার মতো পরিবেশ বা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেনি দলটি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক চালের কাছে বিএনপি হেরে গেছে। বিএনপি এখন পুরোদমে ব্যস্ত আছেন তাদের দলীয়প্রধানের মুক্তি নিয়ে। চলতি ডিসেম্বরের ৩০ তারিখে নির্বাচনের এক বছর পার হবে। কিন্তু সরকারের কাছে যে নতুন নির্বাচনের জোরালো দাবি করবে-তেমন পরিস্থিতির কাছাকাছি যেতে পারেনি দলটি। ফলে জাতীয় ইস্যু (নতুন নির্বাচন) আপাতত হাতছাড়া বিএনপির। হাতে যে ইস্যু আছে (খালেদার মুক্তি) তা দিয়ে গণজোয়ার সৃষ্টি করা যাবে না। দোটানায় থাকা শীর্ষ নেতৃত্বের ডাকে নেতাকর্মীরা মাঠে নামবে এমন বিশ্বাসেও ঘাটতি আছে। ফলে দাবি এবং বাস্তবতার সমন্বয় ঘটিয়ে সময় উপযোগী আন্দোলন গড়ে তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন নীতি-নির্ধারকরা।

বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের সিদ্ধান্ত বিক্ষোভ মিছিল-কর্মসূচিকে নস্ফিল আখ্যা দিতে চাইছেন বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, নীতি-নির্ধারকরা কর্মসূচি দিয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি-এ ধরনের কর্মসূচি দিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে কি না আমাদের সন্দেহ আছে। পুলিশ মিছিল করতে দেয় না। থানায় থানায় মিছিল দিয়ে হবে না। বৃহত্তর একদফা আন্দোলন ছাড়া হবে না। এই সরকার থাকবে আবার তারা নেত্রীকে মুক্তি  দেবে সেটা বিশ্বাস করাই কঠিন বলে মনে করেন এই নারীনেত্রী।

কর্মসূচি বিক্ষোভ হলেও তা যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য শীর্ষ নেতাদের মাঠে চান ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। ছাত্রদলের সাবেক নেতা আকাশ এ প্রতিবেদককে বলেন, চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে আরো কঠোর কর্মসূচির প্রয়োজন ছিল। তবে নীতি-নির্ধারকরা ভেবেচিন্তেই কর্মসূচি দিয়েছেন। তারা যদি মাঠে নামে তাহলে সফল হব। আর কর্মসূচি দিয়ে আগের মতো ঘরে বসে থাকলে এই কর্মসূচি ফল বয়ে আনবে না। 

শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, যে সময়টায় সরকারের কাছে নির্বাচনের দাবি নিয়ে রাজপথে থাকার কথা ছিল। সে সময়ে দলীয়প্রধানের মুক্তির দাবিতে আমাদের ব্যস্ত রাখা হয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা মুখিয়ে আছে-তারা কঠোর কর্মসূচি চান।

বিএনপি নেতাদের মতো ২০-দলীয় জোটের শরিকরাও একদফা আন্দোলনে পক্ষে। অন্যতম শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইবরাহিম এ প্রতিবেদককে বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য একদফা আন্দোলন এখন সময়ের দাবি। তবে জোট শরিক হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানান সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads