• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
রাজনৈতিক সংঘাতে দেশে ছয় বছরে নিহত ৬৩৫

প্রতীকী ছবি

রাজনীতি

রাজনৈতিক সংঘাতে দেশে ছয় বছরে নিহত ৬৩৫

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৫ জানুয়ারি ২০২০

বাংলাদেশে গত ছয় বছরে রাজনৈতিক সংঘাতে ৬৩৫ জন নিহত হয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাব বিস্তারের অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে এসব ঘটনা ঘটে, যার শিকার হন সাধারণ কর্মী আর নাগরিকরা-এমনটাই মত বিশ্লেষকদের। খবর : ডয়েচে ভেলে। বর্তমানে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সংঘাতে জড়িয়ে পড়া স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। নির্বাচন, ক্ষমতা বিস্তারের জন্য সহিংসতার ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। এমনকি নিজ দলের ভেতরেও অন্তর্কোন্দল রূপ নেয় সংঘর্ষে-ঘটে প্রাণহানি। ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে এখন পর্যন্ত বড় কোনো ঘটনা না ঘটলেও পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। রাজনৈতিক সংঘাত বাংলাদেশের নীতিহীন রাজনীতিরই বহিঃপ্রকাশ। দলগুলো গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে ব্যর্থ হয়ে সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ছয় বছরে দেশে মোট তিন হাজার ৭১০টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ৬৩৫ জন নিহত ও আহত হয়েছে ৪১ হাজার ৩৪৫ জন।

শুধু ২০১৯ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৩৯ জন নিহত দুই হাজার ৬৮৯ জন আহত হয়েছেন। সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে ২০৯টি। ২০১৮ সালে এমন ঘটনা হয়েছিল ৭০১টি। এতে ৬৭ জন নিহতের পাশাপাশি আহত হয়েছেন সাত হাজার ২৮৭ জন। ২০১৭ সালে নিহত হয়েছেন ৫২ জন আর আহত চার হাজার ৮১৬ জন। সে বছর রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে ৩৬৪টি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক সংঘাতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে ২০১৬ সালে। ওই বছর ১৭৭ জন নিহত ও ১১ হাজার ৪৬২ জন আহত হন। সংঘাতের ঘটনা ছিল ৯০৭টি। ২০১৫ সালে ১৫৩ জন আর ২০১৪ সালে ১৪৭ জন মারা গেছে এ ধরনের সহিংসতায়।

সহিংসতার ঘটনাগুলোতে প্রধানত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জড়িত ছিল। এর বাইরে নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও সংঘাতের জন্ম দিয়েছে। সহিংসতার অন্যতম কারণ ছিল নির্বাচন, নির্বাচন প্রতিরোধ এবং মাঠ দখলে রাখার চেষ্টা। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে-পরে দেশে ব্যাপক সহিংসতা হয়। ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের নামে যানবাহন ও স্থাপনায় সবচেয়ে বেশি আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ২০১৩ সালে ৯৭ জন দগ্ধ হন, তাদের মধ্যে ২৫ জন মারা যান।

মানবাধিকারকর্মী এবং আসকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতা নীতিহীন রাজনীতির প্রকাশ। দুঃখজনক হলেও সত্য, এর শিকার হন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষ। রাজনৈতিক দলগুলো শক্তি দেখিয়ে প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতে সংঘাত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তারা সহিষ্ণু নয়। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহারে ব্যর্থ হয়ে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এটি দলের অভ্যন্তরেও ঘটে। এক গ্রুপের ওপর আরেক গ্রুপের অসুস্থ উপায়ে আধিপত্য বিস্তারের প্রবণতাই এর কারণ। তার মতে, নির্বাচনে সংঘাত ও সহিংসতাও হয় পরিস্থিতি নিজেদের পক্ষে নেওয়ার জন্য। এসব কিছুর মূলে হলো ক্ষমতার লড়াই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রহমান বলেন, আমাদের রাজনীতিতে সাম্প্রতিক প্রবণতা হলো পরস্পরকে অস্বীকার করা। আমরা গণতন্ত্রের কথা বলছি বটে, কিন্তু এর যে মূল স্পিরিট, পরস্পরের প্রতি আস্থা রাখা, বিরোধী দলকে আস্থায় নিয়ে গণতন্ত্রের চর্চা করা, তাদের বিশ্বাস করা-তা বাংলাদেশে নাই। দুঃখজনক হলেও সত্য, সাম্প্রতিককালে অসহিষ্ণুতা চরমভাবে বেড়ে গেছে। বিরোধী দলকে আস্থায় নিয়ে গণতন্ত্রের চর্চা করা যাচ্ছে না এবং রাজনৈতিক সহিংসতার মাত্রা বেড়ে গেছে। সহিংসতার মাত্রা কমানো না গেলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিনির্মাণ সম্ভব না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads