• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
বিপর্যয়ের নেপথ্যে সাংগঠনিক দুর্বলতা

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি

বিপর্যয়ের নেপথ্যে সাংগঠনিক দুর্বলতা

মহানগরীর অনেক নেতা কেন্দ্রে যাননি

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সদ্য অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেন ফল বিপর্যয়? চারদিকে জনজোয়ার, উৎসবের ঢেউ ছিল সপক্ষে। তবে কেন ফসল গেল প্রতিপক্ষের ঘরে। শুধুই কী সরকার বা নির্বাচন কমিশন দায়ী, নাকি নিজেরাও। গত তিন দিন ধরেই এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপিসহ দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। এমন তথ্যও পাওয়া গেছে যে, মহানগরীর অনেক সভাপতি-সম্পাদকসহ পদধারী অনেকে কেন্দ্রেই যাননি। এ নিয়ে দুই সিটির নির্বাচনের সমন্বয় কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক নেতা বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এটি আগামীর আন্দোলনের জন্য অশুভ সংকেত।

নির্বাচনোত্তর মূল্যায়ন নিয়ে আলাপকালে গতকাল সোমবার বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের কয়জন সিনিয়র নেতা এ প্রতিবেদকের কাছে তাদের মূল্যায়নের কথা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য সবই তাদের অনূকূলে ছিল; কিন্তু নিজ দলীয় পাঁচ ধরনের দুর্বলতার কারণে ফলাফল চলে গেছে প্রতিপক্ষের ঘরে।

এর মধ্যে প্রথম হচ্ছে- যে মহানগরীতে সিটি করপোরেশন নির্বাচন সেই মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। এছাড়া বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে খ্যাত, বিশেষ করে যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিক দল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, ওলামা দলসহ ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মহানগর তো দূরের কথা, কেন্দ্রীয় কমিটিই নেই। দ্বিতীয়ত দলের ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটির নেতাকর্মীরা সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে পরবর্তী কমিটির আগ পর্যন্ত। এই নির্বাচনে ভোটারদের কাছে পৌঁছতে পারেননি বিএনপির ওয়ার্ড নেতাকর্মীরা। কারণ কেউই এখন নেতা নেই, সবাই সাবেক নেতা। ফলে দায়িত্ব নেয়নি কেউই। তৃতীয়ত মোট ভোটারের অর্ধেক নারী ভোটার। নারী ভোটারের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে নারীদের। কিন্তু বিএনপির মহিলা দলের ইউনিট বা ওয়ার্ড কমিটি নেই বলে নারী ভোটারদের টানতে পারেনি বিএনপি। চতুর্থত পোলিং এজেন্ট দিতে না পারা। দুই সিটিতে ১৪ হাজার ৪৩৪টি কক্ষে তিন স্তরে প্রায় ৪৫ হাজার নেতাকর্মীর তালিকা করেছিল বিএনপি। কিন্তু ভোটের দিন ২০ হাজার এজেন্টও কেন্দ্রে অবস্থান নেয়নি। কোনো কোনো কেন্দ্রে সকাল ৮টার দিকে শুধু নিজের নাম লিপিবদ্ধ করেই কেন্দ্র ত্যাগ করেছেন। যারা ছিলেন তাদের বিতাড়িত করা হয়েছে। পঞ্চম কারণ বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীরা গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন শাসকদলীয় প্রার্থীর সঙ্গে। মুখে বিএনপির পক্ষে থাকলেও ভোটের দিন অবস্থান নিয়েছিল প্রতিপক্ষের সপক্ষে।

যুবদলের বাড্ডা থানার সাবেক নেতা আসলাম হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, ভাই দলের কোথাও নাম নেই, গ্রেপ্তার হলে খবর নেয় না, এ অবস্থায় কি কেউ আগুনে ঝাঁপ দেবে? খিলগাঁও শ্রমিক দলের ইসমাইল আকন্দের সাফ কথা, ‘দল তাদের দায়িত্ব নেয় না তাই তারাও দলের জন্য জানপ্রাণ দিতে রাজি না।’

দলীয় সূত্রমতে, দুই সিটিতে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মেয়র প্রার্থী দেওয়ার বেলায় বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। দুই তরুণকে দিয়ে অনেকটাই জনজোয়ার সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার পুত্র ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক ও ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই’র সাবেক নেতা আবদুল আওয়াল মিন্টুর পুত্র তাবিথ আওউয়ালকে দিয়ে চাঙা করতে পেরেছেন পুরো ঢাকা। কিন্তু কাউন্সিলর সমর্থন দেওয়ার বেলায় অনেক ত্রুটি ছিল তাদের। যে কারণে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা নেহাত কম ছিল না। আর সংরক্ষিত আসনে নারী প্রার্থীদের ইমেজ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।

গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ভোটের দিন সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রেই শাসক দলের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে। কেন্দ্রের বাইরে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি। তারা কেন্দ্রে আগত ভোটারদের কাছে দলীয় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন। এদিকে কেন্দ্রের আশাপাশে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীর দেখা মিলেনি। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের ভেতর থেকে লাঞ্ছিত করে ধানের শীষের বা দল সমর্থিত কাউন্সিলরের পোলিং এজেন্টকে বিতাড়িত করলেও প্রতিবাদ করার মতো নেতাদের কেউ ছিল না। আর এ চিত্র দেখে সাধারণ ভোটাররা ভোট কেন্দ্রেই প্রবেশ করেননি।

এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, দুই সিটির নির্বাচনে ভয়াবহ রকমের কারচুপি, জালিয়াতি, জবরদস্তি করা হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের কারণে এবং জনগণের রায়কে পদদলিত করা হয়েছে। দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এই নির্বাচনের ফলাফল লুট করে নিয়েছে সরকারি দল। এর প্রতিবাদে ভোটের পরদিন হরতাল আহ্বান ও পালন করে বিএনপি। সে হরতালেও সাড়া মিলেনি। 

ইশরাক হোসেনের নির্বাচনী প্রচারণা কমিটির এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, ভোটের দিন নেতাকর্মীরা মাঠেই নামেননি। আল্লাহর ওয়াস্তে সাধারণ ভোটাররা যে ভোট দিয়েছে তা-ই ইশরাকের পক্ষে পড়েছে। এই কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, মেয়র প্রার্থী হয়ে ৮০টি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন ইশরাক। তাতে স্থানীয় নেতাদের উপস্থিতি প্রত্যাশিত ছিল না।

একই ধরনের কথা জানিয়েছেন তাবিথ আউয়ালের মিডিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক ব্যক্তি। তারা বলেন, প্রচারের সময় যে সংখ্যক নেতাকর্মীর ঢল দেখা গেছে, তার অংশ বিশেষ ভোটের মাঠে থাকলে অন্তত চিত্র ভিন্ন হতে পারত।

একবাক্যে সবারই মন্তব্য, বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। ইউনিট-ওয়ার্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারলে আগামীতে কোনো আন্দোলনেই সফলতা আসবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads