• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

রাজনীতি

পাঁচ আসনে উপনির্বাচন

পারিবারিক বলয়ের প্রার্থী চায় না আওয়ামী লীগ

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

শূন্য হওয়া পাঁচটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন নিয়ে নানা হিসাবনিকাশ করছে আওয়ামী লীগ। আসন্ন উপনির্বাচনগুলোতে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে পারিবারিক বলয়ের বাইরে যেতে চায় দল। প্রয়াত সংসদ সদস্যদের ছেলে, মেয়ে ও ছেলের বউকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার বদলে নতুন কোনো জনপ্রিয় মুখকে সুযোগ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। শূন্য আসনগুলোর মধ্যে বেশির ভাগের উপনির্বাচনে প্রয়াতদের পরিবার থেকে কেউ মনোনয়ন না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারক সূত্র বাংলাদেশের খবরকে জানায়।

সূত্র বলছে, সদ্য অনুষ্ঠিত ঢাকার জোড়া সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ভোটের মাঠের যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনে ভোটের মাঠ এককভাবে সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ঢাকা সিটির নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঠে ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। দুই সিটির ভোটকে বিএনপি ব্যাপক গুরুত্ব দেয়, এমনকি হিসাব করে মাঠে নামে। ‘দুর্বল’ বিএনপি এবার প্রচারে বিপুল নেতাকর্মী নামিয়ে সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চয় করার চেষ্টা করে। ভোটের দিন কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে রাখার ঘোষণাও দেয় দলটি। যদিও শেষ পর্যন্ত দলটির নেতাকর্মীরা ভোটের দিন মাঠে ছিলেন না। 

তবে স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে কয়েক বছর পর এবার বেশ ‘চাপে’ পড়েন ক্ষমতাসীনরা। চাপে থাকলেও দলীয় প্রার্থীদের জয়ের বিষয়ে শুরুতেই আশাবাদী ছিলেন তারা। এছাড়া প্রার্থীরাও ছিলেন জনপ্রিয়। সামনের নির্বাচনগুলোতে  প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি অংশ নেবে ও মাঠে থাকার চেষ্টা করবে ধরে নিয়েই আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্ধারণ করা থেকে শুরু করে নির্বাচনী কৌশল চূড়ান্ত করবে। দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে ভোটের মাঠে যিনি বেশি জনপ্রিয়, তাকেই দল মনোনয়ন দেবে।

পাঁচটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন ঘিরে আগের মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের পরিবারের এক বা একাধিক জনের নাম উঠে আসছে। এর মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত দুটি আসনে প্রয়াত সংসদ সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তাদের বদলে গত নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত ত্যাগী কয়েকজন নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে দলে। পাশাপাশি আছে বিভিন্ন খাতে বিশেষ অবদান রাখা কয়েকজন তারকা ব্যক্তির নামও। তবে কোনো আসনের প্রার্থীই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে উপনির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। এরপর দলের সংসদীয় বোর্ডের সভায় প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত হবে।

তথ্যমতে, চারজন সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে এবং একজনের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশের পাঁচটি আসন শূন্য হয়। সংসদ সদস্যদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনগুলো হলো- বগুড়া-১, যশোর-৬, গাইবান্ধা-৩ এবং বাগেরহাট-৪। গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে অংশ নিতে ঢাকা-১০ আসন থেকে পদত্যাগ করেন শেখ ফজলে নূর তাপস। সংবিধান অনুযায়ী, কোনো সংসদীয় আসন শূন্য হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পাঁচটির মধ্যে তিনটি আসনে (ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪) উপনির্বাচন আগামী ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

তিনটির তফসিল ঘোষিত হলেও জাতীয় সংসদের শূন্য পাঁচটি আসনের উপনির্বাচন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (চসিক) আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দলীয় মনোনয়নপত্র একসঙ্গে বিক্রি করা হচ্ছে। গত ১০  ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া মনোনয়নপত্র বিক্রি ও জমা দেওয়া চলবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পাঁচটি আসন মিলিয়ে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত দলটির মোট ৩২ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বলে জানায় ঢাকার ধানমন্ডিতে অবস্থিত আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় সূত্র।

তফসিল ঘোষণা না হওয়া দুটি সংসদীয় আসনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এখনো নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কোনো প্রস্তুতি নেওয়া শুরু না করলেও নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রার্থীরা তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন। উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে এলাকায় তারা জনসংযোগও করছেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম্ললির সদস্য ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘যারা যোগ্য, জনপ্রিয় ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির, যারা দলের জন্য নিবেদিত, নেতাকর্মীদের কাছে যাদের জনপ্রিয়তা আছে, জনগণের কাছে আছে গ্রহণযোগ্যতা, তাদের এসব উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হবে। আমাদের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।’

সূত্র জানায়, পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে ঢাকা-১০ নিয়ে আওয়ামী লীগের চিন্তা ভিন্ন। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে নৌকার টিকিট শেষ পর্যন্ত আবারো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের কেউ মনোনয়ন পেতেও পারেন। এ আসনে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের বাইরে আরও কয়েকজন পরিচিত মুখের নাম শোনা যাচ্ছে। প্রয়াত সংসদ সদস্য ইউনুস আলী সরকারের বড় ছেলে ড. ফয়সাল ইউনুস গাইবান্ধা-৩ আসনে, প্রয়াত সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেনের পুত্রবধূ বাগেরহাট-৪ আসনে, প্রয়াত সংসদ সদস্য ইসমত আরা সাদেকের মেয়ে নওরীন সাদেক যশোর-৬ আসনে এবং প্রয়াত সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের স্ত্রী সাহাদারা মান্নান শিল্পী ও তাদের ছেলে মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সজল বগুড়া-১ আসনে দলের মনোনয়নে পেতে আগ্রহী। তাদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে পরিস্থিতি, প্রার্থীর জনপ্রিয়তা ও ভোটের মাঠ বিবেচনায় দলীয় সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে। উল্লেখ্য, গত ২৭ ডিসেম্বর সংসদ সদস্য ইউনুস আলী সরকার, ১০ জানুয়ারি সংসদ সদস্য মোজাম্মেল হোসেন, ১৮ জানুয়ারি সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান এবং ২০ জানুয়ারি সংসদ সদস্য ইসমাত আরা সাদেক মারা যান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads