• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

রাজনীতি

শুদ্ধি অভিযান জোরালো হচ্ছে আওয়ামী লীগে

শেখ হাসিনার হাতে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

দলের নাম ভাঙিয়ে ও কোনোভাবে পদ ভাগিয়ে নিয়ে ঢাকা মহানগর পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত যেসব নেতাকর্মী অপকর্মে যুক্ত, তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আছে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দলে চলমান ‘শুদ্ধি অভিযান’ আরো জোরালো করা হচ্ছে। এ ছাড়া দলের শীর্ষ নেতা, সারা দেশের মহানগর, জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে শেখ হাসিনা আলাদা প্রতিবেদনও তৈরি করিয়েছেন। এসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে কারো অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বেলায় ‘শূন্য সহনশীল’ (জিরো টলারেন্স) অবস্থানে থাকতে দলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব সূত্র বাংলাদেশের খবরকে জানায়, যুবলীগের পর এবার নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়ার ইস্যুতে যুব মহিলা লীগের বিতর্কিত ব্যক্তিদের সংগঠন থেকে বের করে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছেন গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে দলে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযান আরো জোরালো করার। পাপিয়াকে গ্রেপ্তার ও বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে দলের ঝিমিয়ে পড়া চলমান শুদ্ধি অভিযান আরো জোরালো হয়ে ওঠার পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অভিযানও কঠোর হচ্ছে। পাপিয়াকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকার গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব।

সরকারি দলের সঙ্গে যুক্ত ও দলের নাম ভাঙিয়ে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি করছেন যারা, তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তারের পাশাপাশি দল এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন থেকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে দুইভাবে অভিযান চলতে থাকবে। তবে যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করার আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা ও তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে সূত্র উল্লেখ করে।

সূত্র বলছে, গত বছর দলে ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু হলেও পাপিয়ার মতো বিতর্কিত নেতাকর্মীরা কীভাবে আড়ালেই থেকে গেলেন, এই প্রশ্ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। অভিযানের মধ্যেও কীভাবে পাপিয়ার মতো নেতাকর্মীরা আলোচনার বাইরে রয়ে গেলেন, ওই পরিস্থিতিতেও কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কে বা কারা তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছিলেন, এমন প্রশ্নে দলেও ‘বিস্ময়ের’ সৃষ্টি হয়েছে। সারা দেশে আওয়ামী লীগের তৃণমূলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলোতে বিতর্কিত কারা কারা আছেন, তাদের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ রয়েছে, নতুন করে সেসব খতিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রী দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। পাপিয়ার পৃষ্ঠপোষক কারা, তাদের খোঁজও বের করার আশ্বাস দিয়েছেন কাদের।

পাপিয়ার মতো ব্যক্তিকে পদ দেওয়ায় যুব মহিলা লীগের শীর্ষ দুই নেত্রীকে ভর্ৎসনা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলীয় প্রধান। যুবলীগ নেতাদের ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির পর এবার পাপিয়ার অপকর্মের ঘটনায় সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বের ওপরও চটেছেন শেখ হাসিনা। গত বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল সাক্ষাৎ করতে গেলে পাপিয়া প্রসঙ্গে আলোচনাকালে শেখ হাসিনা এসব ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। যুব মহিলা লীগ পরিচালনায় তারা দুজন ব্যর্থ বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি সংগঠনটির সর্বস্তরে যাচাই-বাছাই করে আরো কত পাপিয়া আছে, তা খুঁজে বের করে দল থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন।

অন্যদিকে দলীয় প্রধানের কড়া নির্দেশ থাকলেও তৃণমূল পর্যায়ে অভিযান কেন জোরালো হয়ে ওঠেনি এবং কেন্দ্রীয় পদে থেকে কারা বিতর্কিত ব্যক্তিদের দলে পদ ও আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন, ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা এর অনুসন্ধান করছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রতি কোনো রকমের অনুকম্পা না দেখানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের জন্য কেউ তদবির করলে তার পরিচয়সংক্রান্ত তথ্য আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

তথ্যমতে, আওয়ামী লীগের সভাপতি দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন গত ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত দলের যৌথ সভায়। এর এক সপ্তাহ পর দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায় তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। সমালোচনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের দুই নেতার। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আওয়ামী লীগের অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads