• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
শর্তের জালে মুক্তি আটকা

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি

শর্তের জালে মুক্তি আটকা

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আপাতত কারাগারেই থাকতে হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। জামিনের পক্ষে ‘নতুন কোনো কারণ না পাওয়ায়’ তার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। মেডিকেল বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছেন, খালেদা জিয়া সম্মতি দিলে দ্রুত তার উন্নত চিকিৎসা শুরু করতে। নতুন বিশেষজ্ঞও যোগ করতে পারবে বোর্ড। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার প্রতিও কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, অবশ্যই তাকে (খালেদা জিয়া) মনে রাখতে হবে যে তিনি একজন বন্দি। একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। একজন সাধারণ মানুষ যেভাবে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন, একজন বন্দি সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন না। এ থেকে শুধু বিএনপিই নয়, সাধারণ মানুষও বুঝতে পেরেছে আপাতত কারাগারেই থাকতে হচ্ছে খালেদা জিয়াকে। এর আগে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বরে জামিন আবেদন খারিজ করেছিলেন আদালত।

এদিকে এত দিন আভাস-ইঙ্গিত দিলেও গত বৃহস্পতিবারই বিএনপির তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি আটকা পড়েছে শর্তের বেড়াজালে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, উচ্চ আদালতের এই জামিন খারিজ আদেশের মধ্য দিয়ে সরকারের হিংস্র নীতিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটল। সরকার মুক্তিপণ আদায়ের মতোই বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়, অন্যায্য ও সব আইনি অধিকার লঙ্ঘন করে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। যারা অপহরণ করে, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকেও কারারুদ্ধ করে মুক্তিপণ আদায়ের মতোই সরকার কাজ করছে। আর এই কারারুদ্ধ করার মধ্য দিয়ে তারা তাদের অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখার মুক্তিপণ আদায় করছে।

দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য, মুক্তির জন্য খালেদা জিয়াকে প্যারোলের আবেদনই করতে হবে। তার সঙ্গে রাজনীতি থেকেও অবসরে যেতে হবে, এমন শর্ত দেওয়া হয়েছে খালেদা জিয়ার স্বজনদের কাছে। দলের তরফ থেকে রাজপথে ‘দুর্বল’ কর্মসূচির ভবিষ্যৎ জেনেবুঝেই পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এখনো খালেদা জিয়ার সম্মতি আদায় করতে পারেননি তারা। খালেদা জিয়া যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন শামীম এস্কান্দর তাদের দ্বারস্থ হয়েছেন। খালেদা জিয়াকে লেখা কারো কারো চিরকুটও বহন করেছেন তিনি। কিন্তু তাতে কোনো সায় দেননি বন্দি খালেদা। উল্টো স্বজনদের বলেছেন, ‘মৃত্যুর পরে তোমরা লাশটা তো পাবে, আমি দোষ করিনি...।’

২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে দুদকের পক্ষেই রায় দেন আদালত। মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, তার তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মরহুম সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবরণ করছেন খালেদা জিয়া। বন্দিদশায় অসুস্থ হলে তাকে দ্বিতীয় দফায় বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুরোনো চিকিৎসাপত্রের ওষুধ সেবন করলেও জীবননাশের শঙ্কায় সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ডের ওষুধ খাচ্ছেন না তিনি। ফলে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অবনতিশীল অবস্থা থেকে বোনকে বাঁচাতে বিদেশে চিকিৎসার জন্য আবেদন করেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দর। আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনেরও আবেদন করেন।

এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য গত দুই বছর কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে তার দল বিএনপি। তবে তাতে কোন ফল মেলেনি। কারণ, আন্দোলন করতে যে সাংগঠনিক ক্ষমতা থাকতে হয় তার ধারেকাছে নেই দলটি। গত এক যুগেও দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেননি খালেদা জিয়া। আর গত দুই বছরেও ঢাকা মহানগরসহ কোনো অঙ্গসংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপি নেতাদের সাফ কথা কোনো কমিটিই তার (তারেক রহমান) দৃষ্টির অগোচরে যায় না। কমিটি দেওয়ার মতো ক্ষমতা লন্ডনের বাইরে নেই।    

উল্টো দলের দেশীয় নেতাদের নানামুখী প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে কর্মী ও মিত্রদের কাছে। সাধারণ মানুষও সমালোচনা করতে বাকি রাখছেন না। আজ শনিবার ফের বিক্ষোভ কর্মসূচি। এই কর্মসূচি নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন খোদ দলের নেতাকর্মীরাই। ফেসবুকে ছাত্রদলের এক নেতা তার ওয়ালে উল্লেখ করেছেন, ‘খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজের প্রতিবাদে শনিবার বিএনপির বিক্ষোভ’—এই স্ট্যাটাসের বিপরীতে অর্ধশত কমেন্ট করেছেন বিএনপি ও তার কর্মী-সমর্থক এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা। এই কর্মসূচিকে কেউ বলছেন হোমিও, কেউ উল্লেখ করেছেন মানরক্ষার, এমনও মন্তব্য করেছেন যা প্রকাশ অযোগ্য।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ গত বৃহস্পতিবার দলের শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, যাদের প্রচুর টাকাপয়সা, ধনদৌলতের অভাব নেই, তারা কীভাবে আন্দোলন করবে? আন্দোলন করার জন্য শক্ত ও সৎব্যক্তিত্বের প্রয়োজন।

২০-দলীয় জোটের শরিক দল এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না, নিজেরা আন্দোলন করতে না পারলে আমাদের কাছে ছেড়ে দেন।’ একই ধরনের মন্তব্য করেছেন মিত্র দল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেছেন, শাসক দলের নেতাদের কাছে ফোন দিলে খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না, তাতে তার (খালেদা জিয়া) ইমেজই ক্ষুণ্ন হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads