• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
পাপিয়া-কাণ্ডে ফাঁসছেন দুই মন্ত্রী ও ১২ এমপি!

ফাইল ছবি

রাজনীতি

পাপিয়া-কাণ্ডে ফাঁসছেন দুই মন্ত্রী ও ১২ এমপি!

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ০৪ মার্চ ২০২০

যুব মহিলা লীগের সদ্য বহিষ্কৃত ও বিতর্কিত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া-কাণ্ডে আওয়ামী লীগের অন্তত ১২ জন সংসদ সদস্য ও দুজন মন্ত্রী শেষ পর্যন্ত ফেঁসে যেতে পারেন। রিমান্ডে থাকা পাপিয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের নাম বলেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। মদতদাতা হিসেবে গণমাধ্যমে আকারে-ইঙ্গিতে তাদের নাম আসছে এবং ফেসবুকে পাপিয়ার সঙ্গে তাদের ছবি ও সম্পর্কের কথা ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলে ‘কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা’ নেবে আওয়ামী লীগ। পাপিয়ার পৃষ্ঠপোষকতা কারা করেছেন, তাদের খুঁজে বের করা ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পরপরই দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক সূত্র জানায়, দলের সহযোগী সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত পাপিয়াকে মদত দেওয়া ও তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছেন, আওয়ামী লীগের এমন অন্তত ১২ জন সংসদ সদস্য ও দুজন মন্ত্রীর নাম আলোচনায় আসছে নানাভাবে। দলেও তাদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আছে। সেসব দিকে তীক্ষ নজর রাখছে আওয়ামী লীগ। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দলের শীর্ষ পর্যায়ের কড়া নির্দেশ আছে। উত্থাপিত অভিযোগ সত্য কি না, তা দলীয়ভাবে যাচাই করবেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। সরকারি সংস্থার গোয়েন্দাদের দিয়েও তা যাচাই-বাছাই করা হবে। দলীয় ও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের পাপিয়ার উত্থান ও অপকর্মে মদত দেওয়া প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগ প্রমাণ হলে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দৃশ্যমান না হলেও কোনো না কোনোভাবে শাস্তির আওতায় আসবেন তারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের খবরকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নরসিংদী জেলা শহর থেকে পাপিয়ার মতো কোনো নেত্রীর অবাক করা ও বিতর্কিত উত্থানের পেছনে ক্ষমতাসীন কারো সহায়তা ও মদত থাকতেই পারে। তবে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় তিনি যাদের নাম বলছেন, তাদের মধ্যে সবাই শেষ পর্যন্ত দোষী না-ও হতে পারেন। পাপিয়া নিজের দাপট বাড়ানোর জন্যও প্রভাবশালী অনেকের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা বলতে পারেন। তিনি দলের সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দল ও সংগঠনের কর্মসূচি, সভা-সমাবেশ ইত্যাদিতে তার সঙ্গে দলীয় শীর্ষ নেতাদের দেখা-সাক্ষাৎ হতেই পারে। এ সময় তারা ছবিও ওঠাতে পারেন। বিতর্কিত কারো সঙ্গে ছবি থাকা মানেই দুজনেই সমান বিতর্কিত বা একজন আরেকজনের অপরাধ-কাণ্ডে সহযোগী নন।’

দলীয় সূত্র বলছে, পাপিয়াকে নিয়ে জাতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে নানা খবর প্রকাশিত হওয়ার পাশাপাশি সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রীদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের নাম তিনি বলেছেন। দলীয় প্রশ্রয়ে তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও দলের একশ্রেণির নেতাকর্মীর তার সঙ্গে ওঠাবসা নিয়ে গত কয়েক দিন দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। আলোচনার আগুনে একের পর এক ঘি ঢালছে নানা তথ্য ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া সূত্রহীন উড়ো ‘কথাবার্তা’।

তবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া যেকোনো ছবিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন না আওয়ামী লীগের নেতারা। কোনো কোনো ছবি ‘বানোয়াট’ও হতে পারে। দলীয় কোন্দল থেকে এবং সরকারবিরোধী ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের’ অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের জড়িয়ে ফেসবুকে মিথ্যাচার চলছে কি না, সেসব দিকেও খেয়াল রাখছে সরকারি দল।

সূত্রমতে, পাপিয়ার কাহিনীতে আওয়ামী লীগের কয়েক শীর্ষ নেতার মধ্যে অস্বস্তি কাজ করছে। রিমান্ডে পাপিয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিদিন যেসব তথ্য দিচ্ছেন, তাতেও নানা বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে তাদের জন্য। গত বছর দলে শুদ্ধি অভিযান শুরু হলেও পাপিয়ার মতো বিতর্কিত নেত্রী কীভাবে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন, কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কে বা কারা তাকে প্রশ্রয় দিচ্ছিলেন, এমন প্রশ্নও দলে উঠেছে। তবে পাপিয়াকে দলের সহযোগী সংগঠনের পদ থেকে বহিষ্কার ও তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় সরকারি দলের নেতারা স্বস্তিও প্রকাশ করছেন।

তাদের মতে, দলীয় পদ ব্যবহার করে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করলে ‘দলে কারো ঠাঁই হয় না ও সরকারও তাকে ছাড় দেয় না’—পাপিয়াকে গ্রেপ্তার ও বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হচ্ছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার মধ্য দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদেরও আবার কড়া বার্তা দেওয়া যাচ্ছে। অন্যায় ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও সরকারের ‘কঠোর’ অবস্থান দেশের জনগণও ইতিবাচকভাবে বিচার করছে। এতে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে। শূন্য হওয়া দেশের পাঁচটি সংসদীয় আসনে (ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩, বাগেরহাট-৪, বগুড়া-১, যশোর-৬) উপনির্বাচন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) আসন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের ভোটের বাক্সে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads