• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

রাজনীতি

বিদ্রোহী নির্মূলে নামছে আ.লীগ

নির্দেশ না মানলে আজীবন বহিষ্কার

  • রেজাউল করিম হীরা
  • প্রকাশিত ২৪ নভেম্বর ২০২০

কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েও স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে পারছে না আওয়ামী লীগ। এ অবস্থায় এবার বিদ্রোহী নির্মূল মিশনে নামছেন  ক্ষমতাসীন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা। একক প্রার্থী নিশ্চিতে তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন। দলটির একাধিক শীর্ষ নেতাদের সাথে আলাপকালে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, এর আগের পৌরসভা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মোবাইলে কল দিয়ে এবং এসএমএস পাঠিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশপাশি জেলা কমিটির দায়িত্বশীল নেতা ও স্থানীয় এমপিরাও এ বিষয়ে কঠোর ভূমিকা নেন। তাতেও  বশে আনা যায়নি দলের বিদ্রোহীদের।  ফলে একাধিক প্রার্থী থাকায় প্রায়ই বিজয়ের মালা গিয়েছে বিএনপি-জামায়াত কিংবা নির্দলীয় প্রার্থীর গলায়। এছাড়া বিদ্রোহী জয়ী প্রার্থীর সংখ্যাও কম নয়।

দলের একটি সূত্রে জানা গেছে, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচন করছেন, তাদের বিষয়ে কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে দলটির নতুন মিশন শুরু হয়েছে। সারা দেশে কতজন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন, তার একটি তালিকা করা  হবে। সেই তালিকা ধরে প্রার্থীদের ফোন করে কেন্দ্রের কঠোর নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হবে। তাতেও যাদি কাজ না হয় তাহলে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিস্কার করা হবে। এছাড়া কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে দলের যেসব নেতা ওই সব বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করবেন তাদের বিরুদ্ধেও  থাকবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

এসব বিষয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান জানান, এবার আওয়ামী লীগ একক প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন। দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা ইতোমধ্যে এই সংক্রান্ত নির্দেশনা জেলা উপজেলায় পৌঁছে দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগে থেকেই ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থিতা নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদেও একক প্রার্থী নিশ্চিতের জন্য দলীয় নেতাদের নির্দেশ দেন।

এই বছরের চার জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দলের বর্ধিত সভায় তিনি বলেছিলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে পাশাপাশি অন্যান্য নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে হবে। এই জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

সর্বশেষ গত ১০ অক্টোবর আওয়ামী লীগের গাজীপুর শাখার বর্ধিত সভায় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্দেশ দেন নির্বাচনে যাচাই-বাছাই করে শক্তিশালী ও স্বচ্ছ ইমেজের প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠাতে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের কাছে একক প্রার্থিতা নিশ্চিতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন তারা। তৃণমূলে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও কোথাও যদি কেউ দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নেন তাকে বুঝিয়ে বা দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে হলেও নির্বাচন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হয়। এরপরও কাজ না হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকের কাছে দাবি করেন, অনেক ক্ষেত্রে প্রার্থী নির্বাচনে ভুল হওয়ায় যোগ্য ও জনপ্রিয় ব্যক্তিরা বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করেন। যার প্রমাণ সম্প্রতি পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মনোনয়নে আত্মীয়তা, স্বজনপ্রীতি, অর্থের বিনিময় যেমন তৃণমূলে হয় তেমনি কেন্দ্রেও হয়। এসব বন্ধ হলেই একক প্রার্থিতা নিশ্চিত সম্ভব হবে।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হয় তৃণমূল থেকেই। থানা বা জেলা থেকে আগ্রহী প্রার্থীদের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়। দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট বিভাগের যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের মতামত নিয়ে আলোচনা করে প্রার্থী চূড়ান্ত করে থাকে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads