• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

রাজনীতি

রাজপথে আন্দোলনের উপযোগী হচ্ছে বিএনপি

ঈদের পর আন্দোলন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ঈদের পর আন্দোলনে নামার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এ লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে দল গোছানোর কাজ চলছে। রাজপথে নেমে টিকে থাকার উপযোগী করে পুরো দলকে আরো সুসংগঠিত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকারবিরোধী বৃহৎ প্ল্যাটফরম তৈরির পরিকল্পনাও নিয়েছে দলটি। এতে ডান-বাম সব মতাদর্শকে এক কাতারে, একমঞ্চে নিয়ে আসা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকাকে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ধরে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার রূপরেখা তৈরি করছে।

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাও আন্দোলন এবং পরের বছর সরকারবিরোধী আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর রাজপথ থেকে কার্যত সরে আসে দলটি। পরে বিভিন্ন ইস্যুতে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দিলেও তাতে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, দলীয় নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণের চিত্রও ছিল হতাশাজনক। 

এমনকি ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়া কিংবা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরও দলটি রাজপথে কার্যত আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। দলের বড় একটি অংশ মনে করেন, নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির আন্দোলন দিয়ে সরকার পরিবর্তন সম্ভব নয়। দাবি আদায়ের জন্য রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে দলীয় হাইকমান্ডও সম্মত হয়েছেন। এ কারণে দলকে দুর্বার আন্দোলনমুখী করতে তৃণমূল বিএনপিকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। নানাবিধ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক শিকদার বলেন, আন্দোলন তো শুরু হয়ে গেছে। আন্দোলনে দানা বেঁধেছে। একদফা সরকার পতনের আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই। আমাদের সাংগঠনিক পুনর্গঠন চলছে, দলীয় কর্মসূচিও রয়েছে। সরকারের দুঃশাসনে মানুষও অতিষ্ঠ। ফলে আন্দোলনের জন্য জনমত তৈরি হয়েছে। সামনে রমজান মাস। এখন এটা রোজার আগে না পরে চূড়ান্ত রূপ নেবে, সেটা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। জনসম্পৃক্ততা গড়ে তুলেই অধিকার আদায় করা হবে।

আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু রাজধানী ঢাকা ধরে সাজানো হচ্ছে বিভিন্ন পরিকল্পনা। পাশাপাশি দলকে গতিশীল করতে মিডিয়া সেল, প্রযুক্তি ও গবেষণা সেল, প্রচার সেল, আইনি সহায়তা সেলসহ বিভিন্ন বিষয়ে সেল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যে কোনো সময় যে কোনো প্রয়োজনে রাজপথে নামার জন্য তৃণমূল বিএনপির একটি বড় অংশকে প্রস্তুত রাখতে প্রতিনিয়ত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে দলের হাইকমান্ড। ঝুঁকি যত বড়ই হোক, দল তার পাশে থাকবে- এমন আস্থা তৈরি করা হচ্ছে প্রতিটি নেতাকর্মীর মধ্যে।

দলের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে সাংগঠনিক ভিত্তিকে মজবুত করতে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলকে প্রাধান্য দিয়ে সারা দেশের ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ইতোমধ্যে এসব অঙ্গ সংগঠনের বেশিরভাগ ইউনিট কমিটি গঠন কার্যক্রম শেষ হয়েছে। সারা দেশের ৮০টি সাংগঠনিক ইউনিট কমিটির মধ্যে ৩০টি জেলা কমিটি ভেঙে নতুন আহ্বায়ক কমিটি এবং ৮টি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদিও এসব কমিটির বেশিরভাগই মেয়াদোত্তীর্ণের তালিকায় রয়েছে। সবকিছু ঠিক করে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে রাজপথে দৃশ্যমান কর্মসূচিতে ফিরতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি এক ধরনের বার্তা রয়েছে। এসবের পাশাপাশি সরকারবিরোধী বৃহৎ প্ল্যাটফরম তৈরির কাজও অনেকটা এগিয়ে আনা হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বলেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আরো হাজারটা নির্বাচন করলেও সুষ্ঠু হবে না। এজন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনের বিকল্প নেই।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। এটি মোটামুটি একটি পর্যায়ে এসেছে। এর মধ্যে আমরা অন্য দলগুলোর সঙ্গে কথাও বলতে শুরু করেছি। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে ভবিষ্যতে কী করব। বিএনপি একটি উদারপন্থী রাজনৈতিক দল। আমরা অবশ্যই মনে করি, নির্বাচনই হচ্ছে ক্ষমতা পরিবর্তনের একমাত্র পথ। তবে আন্দোলন ছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশের ক্ষমতা পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুব কম। সে জন্যই আমরা সংগঠনকে শক্তিশালী করছি।’

তিনি বলেন, সরকার সবক্ষেত্রে ব্যর্থ। দুর্নীতি, অনিয়ম, গুম-খুন সরকারের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ হয়ে উঠেছে। এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে যারাই প্রতিবাদ করছে, তাদের নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করা হচ্ছে। জনগণের মৌলিক অধিকার খর্ব করে তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমরাও নীরব থাকতে পারি না। জনগণের অধিকার আদায়ে আমরা তৎপর আছি এবং থাকব। দলকে সংগঠিত করে এ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এর অংশ হিসেবে আমরা বিভাগীয় শহরে সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভবিষ্যতে আমাদের এ আন্দোলন আরো বেগবান হবে। আশা করি, আমাদের দাবির সঙ্গে সব শ্রেণিপেশার মানুষ একাত্মতা ঘোষণা করবেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads