• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

খেলা

সাক্ষাৎকারে মাশরাফি

স্বপ্নের কোনো শেষ নেই

  • মাহমুদুন্নবী চঞ্চল
  • প্রকাশিত ০১ মার্চ ২০১৮

ক্যারিয়ারে আছে সাফল্য-ব্যর্থতা। তবে তার আসল গুণ চোটের সঙ্গে যুদ্ধ করার অপরিসীম সাহস। বার বার পড়ে গেছেন, কিন্তু নতুন উদ্যমে উঠে দাঁড়িয়েছেন। মচকাবেন, তবু ভাঙবেন না, চোয়ালবদ্ধ প্রত্যয়ে সবার কাছে অনুকরণীয় এক মানুষ। এক হাঁটুতেই কতবার অস্ত্রোপচার, তারপরও তার দৃঢ়তা মুগ্ধতার রেণু ছড়ায়। হাঁটুতে ব্যান্ডেজ পরে এখনো উত্তাল, উদ্যমী। তিনি মাশরাফি বিন মুর্তজা, সবার প্রিয় ম্যাশ। হেরে যাওয়ার মন্ত্র তার অভিধানে নেই, জেতাটাই মন্ত্র। একজন ক্রিকেটারের চেয়ে মাশরাফির বড় পরিচয় তিনি ক্যাপ্টেন, সাহসী যোদ্ধা। খ্যাতিমান খেলোয়াড়, সঙ্গে ভালো মানুষের রসায়ন, তিনি তো কিংবদন্তিই।

বাংলাদেশের খবরের সূচনালগ্নে একান্তভাবে কথা হয়েছে মাশরাফির সঙ্গে। জিজ্ঞাসা করা হয়েছে তার ক্যারিয়ারের নানা দিক, ভালো লাগা, মন্দ লাগা, সুখ কিংবা দুঃখের স্মৃতি, ভক্তদের আবদার মেটানোসহ অনেক কিছু। বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফির এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ক্রীড়া প্রতিবেদক মাহমুদুন্নবী চঞ্চল। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ প্রশ্ন-উত্তর আকারে তুলে ধরা হলো বাংলাদেশের খবরের পাঠকদের জন্য।

বাংলাদেশের খবর : ক্রিকেটের আইকন আপনি। অনেক ভক্ত। মাঠে দর্শক ঢুকে আপনাকে জড়িয়ে ধরে। বিষয়টি কি বিব্রত করে আপনাকে?

মাশরাফি : বিব্রত হই না। ছোটবেলা থেকে লাইফস্টাইল যে রকম ছিল এখনো তেমনই আছে। কেউ এলে চেষ্টা করি যতটুকু কোঅপারেট করা যায়। মাঠের মধ্যে একবার দর্শক ঢুকে পড়েছিল। এটা আসলে সিকিউরিটি জোনে যারা থাকে, তাদের জন্য বিব্রতকর। আমি স্বাভাবিক থাকারই চেষ্টা করি। চলতে-ফিরতে যেকোনো ঘটনা ঘটতেই পারে, তা স্বাভাবিকভাবে নেওয়াটাই জরুরি বলে মনে করি। 

 

বাংলাদেশের খবর : কোনো ভক্তের কান্না, কিংবা আবেগে জড়িয়ে ধরা- এমন কোনো ঘটনা?

মাশরাফি : পছন্দ করে বলেই সবাই নির্দিষ্ট একটা আবেগ নিয়ে আসে। আসলে সবাইকে আমি একচোখেই দেখি। আলাদা করার সুযোগ নেই। কারণ যারাই এসেছে, তারা পছন্দ করেই এসেছে।

 

বাংলাদেশের খবর : নাম, যশ, অর্থ, ভালোবাসা সবই পেয়েছেন। আপনাকে সুখী মানুষ বলা যায়?

মাশরাফি : আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত ভালো আছি। এ রকম থাকতে পারলেই খুশি। খুব বেশি কিছু আমি আশাও করি না। তবে সৎ থাকার চেষ্টা করি সব সময়।

 

বাংলাদেশের খবর : বাংলাদেশ টিমের হয়ে সুখকর স্মৃতি?

মাশরাফি : ভালো স্মৃতি অনেক আছে। আলাদা করে বলা কঠিন। তবে ২০০৭ সালের কথা যদি ধরেন। বিশ্বকাপে ভারতকে হারালাম। ওই ম্যাচটা সব সময় আলাদা রকম ফিলিংস দেয়। কারণ, ওই জয় আমাদের ক্রিকেটের একটা টার্নিং পয়েন্ট। তারপর থেকে আমরা ভালো কিছু ম্যাচ জেতা শিখি। ওই স্মৃতি মনের কোণে আলাদা জায়গা করে আছে।

 

বাংলাদেশের খবর : দুঃখের কোনো স্মৃতি?

মাশরাফি : মানজারুল ইসলাম রানার মৃত্যু। (এ কথা বলে চুপ হয়ে যান মাশরাফি। প্রতিভাবান এ ক্রিকেটার মাত্র ২২ বছর বয়সে ২০০৭ সালের ১৬ মার্চ মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এর এক দিন পর বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ভারতকে হারায় বাংলাদেশ। সেদিন মাশরাফিরা কালো ব্যাজ পরে মাঠে নেমেছিলেন। রানা ছিলেন মাশরাফির খুব কাছের বন্ধু।)

 

বাংলাদেশের খবর : বাংলাদেশ দল নিয়ে আপনার স্বপ্ন?

মাশরাফি : স্বপ্নের কোনো শেষ নেই। বাংলাদেশ দল র্যাঙ্কিংয়ে একদিন টেস্টে ও ওয়ানডেতে এক নম্বর হবে। টি-টোয়েন্টিতেও ভালো করবে। এ স্বপ্ন আমরা সবাই দেখি। আমরা থাকতে হয়তো এগুলো সম্ভব হবে না। তবে আমরা চলে গেলেও ইয়াং প্লেয়ার উঠে আসছে, তারা ভালো খেললে আজকের স্বপ্নটা পূরণ হতেও পারে। বৈশ্বিক শিরোপা জেতার স্বপ্নও থাকে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো হলে আলাদা। তারা র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে থেকেছে, কিন্তু কোনো শিরোপা জেতেনি। শিরোপা না এলেও র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে থাকাটাও কিন্তু অনেক বড় ব্যাপার।

 

বাংলাদেশের খবর : টি-টোয়েন্টি থেকে আনুষ্ঠানিক অবসর নিয়েছেন। টেস্টে নেওয়া হয়নি। মাঝে টেস্টে ফিরতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু হয়নি। টেস্ট নিয়ে কোনো পরিকল্পনা?

মাশরাফি : এগুলো জীবনেরই অংশ। আলাদা করে আনুষ্ঠানিকতার কিছু  নেই। যদি সে রকম সুযোগ আসে, তাহলে হবে। আর টেস্ট খেলতে চেয়েছিলাম, কারণ টি-টোয়েন্টি ছেড়ে দিয়েছি। তখন টেস্ট খেলাটা সহজ। মেন্টাল রিলিফের একটা বিষয় থাকে। ওই জায়গা থেকে বলেছি। আনুষ্ঠানিকতার চিন্তা করি না।

 

বাংলাদেশের খবর : ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ নিয়ে আপনার পরিকল্পনা, প্রত্যাশা?

মাশরাফি : আল্লাহ সুস্থ রাখলে পারফর্ম করতে চাই। তারপরও টিমের একটা পরিকল্পনা তো থাকেই। ২০১৯ ওয়ার্ল্ড কাপটা হবে ১০ দলের। ফলে চ্যালেঞ্জটা আরো বেশি থাকবে। আশা করছি, আমরা ভালো কিছু করতে পারব। এর জন্য প্ল্যানিং দরকার এবং সেই অনুযায়ী অনুশীলন করা জরুরি। এখনো খেলার মধ্যে আছি। সামনে কয়েকটা সিরিজ আছে, সেগুলো নিয়েও চিন্তা করতে হবে। সব মিলিয়ে একটা কিছু করতে হবে।

 

বাংলাদেশের খবর : ক্রিকেটারদের সাংসারিক জটিলতা, মিডিয়ার চাপ?

মাশরাফি : আমি সব সময় চেষ্টা করি খেলা বাদে তাদের (পরিবার) সময় দিতে। তাদের প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে চেষ্টা করি। আর সাংসারিক জটিলতা কমবেশি সবারই আছে। তবে তারকাদের ক্ষেত্রে বেশি হয়। ডানে-বাঁয়ে তাকান, অনেক ফ্যামিলিতে দেখবেন এমন সমস্যা। এটা দুঃখজনক। কিন্তু সবকিছুই সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। অনেকে হয়তো শেষ পর্যন্ত পারে না, ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এমন ঘটনা সমাজে বেশি ঘটছে। তবে আমার কাছে আমার পরিবার অনেক বড়। খেলা হয়তো আগামীকাল থাকবে না, কিন্তু আমার পরিবার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার সঙ্গে থাকবে। আমার জন্য বড় বিষয় হলো তাদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা।

 

বাংলাদেশের খবর : ক্রিকেটার হবেন, এমন স্বপ্ন ছিল শৈশবে?

মাশরাফি : আসলে তা নয়। আমি সিজনাল প্লেয়ার ছিলাম। শীতের সময় ক্রিকেট-ব্যাডমিন্টন খেলতাম। অন্য সময়ে অন্যটা। মানে সবই খেলতাম। তবে একটা পর্যায়ে গিয়ে মনে হয়েছে ক্রিকেটটা ভালো খেলছি। তখনই ক্রিকেটে আসা।

 

বাংলাদেশের খবর : ক্রিকেটার না হলে কোন পেশা বেছে নিতেন?

মাশরাফি : (হেসে) আসলে এটা বলা খুব কঠিন। হয়তো বা পড়ালেখা করতে হতো বাবা-মায়ের চাপে। তারপর ছোটখাটো কোনো চাকরি করতাম। তা না হলে নড়াইলেই ব্যবসাপাতি করতে হতো। এ ছাড়া মনে হয় না আমার দ্বারা আর কিছু সম্ভব হতো।

 

বাংলাদেশের খবর : নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন কেমন চলছে?

মাশরাফি : সবে শুরু। সবার সহযোগিতা পেলে ভালো কিছু হবে। অনেক কিছুই চলমান, যা এখনই বলার মতো নয়। তবে ওইগুলো হলে আশা করি মানুষ অনেক উপকৃত হবে।

 

বাংলাদেশের খবর : বাংলাদেশের আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফর নিয়ে কতটা আশাবাদী আপনি?

মাশরাফি : শ্রীলঙ্কার মাটিতে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। কিন্তু এমন আশা করছি না যে, ওখানে গিয়ে আমি চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসব। কারণ রিসেন্ট পারফরম্যান্স যদি দেখেন, দল প্রেশারে আছে। সুতরাং প্রেশার কাটিয়ে উঠে ভালো খেলাটা খুব জরুরি। আমি অতটুকুই আশা করছি। তবে দল যদি চ্যাম্পিয়ন হয় সেটা বড় প্রাপ্তি হবে। সবার অন্তত ভালো ক্রিকেট খেলা উচিত।

 

বাংলাদেশের খবর : ২০১৫ সালের পর ঘরের মাঠে দুর্দান্ত বাংলাদেশ। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সিরিজে ছন্নছাড়া টাইগার শিবির। হাথুরুসিংহের না থাকাটাই কি মূল কারণ? 

মাশরাফি : কেউ যদি তা মনে করে, তাও ঠিক। আবার ঘরের মাঠে আমরা ভালো খেলতে পারিনি, এটাও ঠিক। এখানে আসলে আমার আলাদাভাবে বলার কিছু নেই। তবে ঘরের মাঠেও কিন্তু আমরা প্রায় বছরখানেক কিংবা দেড় বছর পর এসে খেললাম। শুরুটা আমরা ভালো করেছিলাম। প্রথম তিন ম্যাচে জয়। কিন্তু একটা ম্যাচে ৮০-তে অল আউট হওয়ার (৮২ রানে অল আউট) পর আমার কাছে মনে হয়েছে সেটা একটা ধাক্কা ছিল। তারপর ফাইনালে সাকিবের ইনজুরি মিলিয়ে কিছুটা ছন্দপতন। তবে চিন্তার কিছু  নেই। সময়ের সঙ্গে এটা হয়েছে, এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।

 

বাংলাদেশের খবর : নতুন পত্রিকা বাংলাদেশের খবরের কাছে আপনার প্রত্যাশা কেমন থাকবে? 

মাশরাফি : অবশ্যই বাংলাদেশের খবর পত্রিকার জন্য আমার শুভকামনা থাকবে। আশা করি সব খেলাধুলা কাভার করবেন। শুধু ক্রিকেট নয়, অন্যান্য স্পোর্টসে যারা আছে, বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে, আমাদের সবার দায়িত্ব তাদের সহযোগিতা করা। আপনারাও আশা করি করবেন। ভালো ভালো পজিটিভ নিউজ ইনশাল্লাহ আপনারা দেবেন, যাতে প্লেয়াররা অনুপ্রাণিত হয়ে মাঠে পারফর্ম করতে পারে। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads