• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

খেলা

ফাইনালে আবারো স্বপ্নভঙ্গ

শিরোপা ভারতের

  • মাহমুদুন্নবী চঞ্চল
  • প্রকাশিত ১৯ মার্চ ২০১৮

১৮তম ওভারে আশা জাগালেন মোস্তাফিজ। ১৯তম ওভারে যেন ডুবালেন রুবেল। সৌম্যের করা শেষ বলে দিনেশ কার্তিকের ছক্কা, হূদয় বিদীর্ণ করে দিল গোটা বাংলাদেশ শিবিরকে। তীরে এসে ডুবল তরি। অবিশ্বাস আর হতাশার দোলাচালে সবুজ জমিনে মুখ লুকালেন সৌম্য। সতীর্থরা টেনে তুললেও চোখের পানি আটকাতে পারেননি, ডুকরে কেঁদে উঠলেন। কলম্বোর প্রেমাদাসায় টাইগারদের করুণ মুখাবয়ব হূদয় এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিল ভক্ত-সমর্থকদের, শোকস্তব্ধ গোটা বাংলাদেশ।

ফাইনাল মানেই যেন কান্না, টাইগারদের স্বপ্নভঙ্গের চিরায়ত গল্প। মিরপুরে দেখা গেছে এমনটি চারবার। পঞ্চমবার প্রেমাদাসায়। ভেন্যু বদলালেও বদলায়নি ভাগ্য। ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি যেন গোটা বাংলাদেশ। আবারো জয়ের কাছে গিয়েও না পাওয়ার যন্ত্রণা। ফাইনাল নামক জুজুর কাছে অসহায় সাকিব-মুশফিকরা। নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল জন্ম দিল আরো একটি শোককাব্যের। যেখানে বাংলাদেশকে ৪ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জিতে নিয়েছে ভারত।

বাংলাদেশের করা ৮ উইকেটে ১৬৬ রানের জবাবে জয়ের জন্য ভারতকে খেলতে হয়েছে শেষ বলটি পর্যন্ত (১৬৮/৬)। শেষ বলে কার্তিকের ছক্কাটা না হলেই তো চিত্রনাট্য বদলে যেতে পারত। কিন্তু ক্রিকেট বিধাতা হয়তো আগেই লিখে রেখেছিলেন ভারতের জয়। না হলে বাংলাদেশের দুটি ওভারে কেন থাকবে এমন বৈপরীত্য। মোস্তাফিজ যেখানে টানা চার ডট বলে স্বপ্ন দেখালেন জয়ের, সেখানে পরের ওভারে রুবেল এসে অবিশ্বাস্যভাবে স্বপ্ন ভঙ্গ করলেন।

১৮ বলে ভারতের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৩৫ রান। ১৮তম ওভারে মোস্তাফিজ দিলেন মাত্র এক রান, সঙ্গে পেলেন এক উইকেট। কী অসাধারণ বোলিং! ১২ বলে ভারতের দরকার তখন ৩৪। ম্যাচ তখন বাংলাদেশের দিকে হেলে পড়েছে। ১৯তম ওভারে সদ্য মাঠে নামা দিনেশ কার্তিকের সামনে পড়ে রুবেল দিলেন ২২ রান (দুই ছক্কা, দুই চার)। ম্যাচ তখনই শেষ। তারপরও আশাটা বেঁচে ছিল টিমটিমে আলোয়, ৬ বলে তখনো যে দরকার ১২ রান। বল হাতে সৌম্য। প্রথমে দিলেন ওয়াইড। প্রথম বল ডট। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে একটি করে দুই রান। চতুর্থ বলে চার হাঁকিয়ে ম্যাচে উত্তেজনা আনলেন বিজয় শঙ্কর। তবে পঞ্চম বলে শঙ্কর আউট, দুর্দান্ত ক্যাচ মিরাজের। এরই ফাঁকে প্রান্ত বদলে স্ট্রাইকে আসা কার্তিকই সর্বনাশটা করলেন। শেষ বলে দরকার যখন ৫, তিনি হাঁকালেন ছক্কা। চ্যাম্পিয়ন ভারত। 

ব্যাট হাতে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ রান অধিনায়ক রোহিত শর্মার। ৪২ বলে করেছেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৫৬। তবে ফাইনালের ম্যাচসেরা কিন্তু দিনেশ কার্তিকই। কারণ মাত্র ৮ বলে তিনি অপরাজিত ছিলেন ২৯ রানে। যার মধ্যে তিন ছক্কা, দুই চার। আর তাই এর আগে দ্রুত ধাওয়ান (১০) ও সুরেশ রায়নাকে (০) বিদায় করেও সব প্রচেষ্টা বিফলে টাইগারদের। যাদের নিয়ে ভয় ছিল না। মিডল অর্ডারে সেই লোকেশ রাহুল (২৪) ও মনীষ পান্ডেই (২৮) ভারতকে রাখেন জয়ের কক্ষপথে। শেষটায় ঝড় তুলে আনন্দের রেণু ছড়িয়েছেন দিনেশ কার্তিক। বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে রুবেল দুটি, সাকিব, মোস্তাফিজ, নাজমুল ও সৌম্য নিলেন একটি করে উইকেট। ব্যাট হাতে শেষের দিকে ঝড় তোলা মিরাজ পাননি কোনো উইকেটের দেখা।

এর আগে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল ধীরলয়ে। আর সেটা পরিস্থিতি বুঝতেই। কিন্তু তারপরও ছন্দপতন। ওয়াশিংটন সুন্দরই প্রথম আঘাতটা হানলেন। যেখানে কাটা পড়লেন লিটন কুমার (৯ বলে ১১ রান)। ৩ দশমিক ২ ওভারে অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল স্লগ সুইপ করে ওড়াতে চেয়েছিলেন। ব্যাটের কানায় লেগে উঠে যাওয়া বল সহজেই লুফে নেন রায়না।

পরের ওভারেই ফিরলেন তামিমও (১৫)। ৪ দশমিক ২ ওভারে যুবেন্দ্র চাহালের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ভাগ্য খারাপ তার। লং অনে সীমানার খুব কাছে অবিশ্বাস্যভাবে ক্যাচ নেন শার্দুল ঠাকুর। শুরুর এ চাপ কাটাতে পারেননি সৌম্য সরকারও (২ বলে ১ রান)। তিনি এলেন আর গেলেন। চাহালের শিকার তিনিও। ৪ দশমিক ৬ ওভারে স্কয়ার লেগ ফিল্ডার বরাবর সৌম্যের সুইপ, শিখর ধাওয়ানের ক্যাচ।

চাহাল আতঙ্ক এড়ানোর চেষ্টা করলেন চতুর্থ উইকেটে মুশফিক-সাব্বির জুটি। স্কোর যখন বাড়তে শুরু করল তখন আবারো চাহালের আবির্ভাব। বিদায় বিশ্বস্ত ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। গুগলি বলেই হাঁকাতে চেয়েছিলেন বাউন্ডারি। কিন্তু ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ ক্যাচ নেন বিজয় শঙ্কর। ভাঙে চতুর্থ উইকেটে ৩৫ রানের জুটি। টানা তিন ম্যাচে দারুণ খেলা মুশফিক ফাইনালে করতে পারলেন মাত্র ৯ রান, ১২ বলে। নেই কোনো ছক্কা কিংবা চারের মার, ভাবা যায়?

পঞ্চম উইকেটে আশা ছিল ভালো কিছুর। সাব্বিরের সঙ্গে যোগ দিলেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু বিধি বাম। ভালো খেলতে খেলতে বাজে রানআউট মাহমুদউল্লাহ, যা ছিল ভীষণ দৃষ্টিকটু। ১৪ দশমিক ২ ওভারে শঙ্করের স্লোয়ার খেলতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। বল উইকেটকিপারের কাছে। কিন্তু ততক্ষণে নন স্ট্রাইকে থাকা সাব্বির চলে আসেন স্ট্রাইক প্রান্তে, এক প্রান্তে দুজন। হতভম্ব মাহমুদউল্লাহ। দৌড়াতেও চেষ্টা করেও থেমে গেলেন মাহমুদউল্লাহ। ততক্ষণে স্ট্যাম্প ভেঙে দিয়েছেন শঙ্কর। ১৬ বলে ২১ রান করে ফেরেন বাংলাদেশকে ফাইনালে ওঠানোর নায়ক মাহমুদউল্লাহ। ভাঙে ৩৬ রানের জুটি। তবে আক্ষেপের ইনিংসে সাকিব, তামিম ও মুশফিকের পর বাংলাদেশের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে এক হাজার রান পূর্ণ করেন মাহমুদউল্লাহ।

রিয়াদের বিদায়ের পর সাকিবের সঙ্গে জুটি গড়েন সাব্বির। এ জুটি থেকে আসে ২৯ রান। ৩৭ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে চতুর্থ ফিফটি স্পর্শ করেন সাব্বির। তবে বেশি দূর এগোতে পারেননি সাকিব। ব্যক্তিগত সাত রানে তিনিও রানআউট (১৬ দশমিক ৫ ওভারে)। সাব্বিরের সামনে হাতছানি দিচ্ছিল ক্যারিয়ার সেরা ৮০ রানের ইনিংস টপকানো। কিন্তু পারেননি তিনি। ৭৭ রানে উনাদকাটের বলে বোল্ড সাব্বির। ৫০ বলের দারুণ এ ইনিংসে সাব্বির হাঁকান সাতটি চার ও চারটি ছক্কা। শেষ ওভারে রানের গতি বাড়িয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। শার্দুল ঠাকুরের ওভারে তিনি নেন ১৮ রান। যার মধ্যে ছিল দুটি চার ও একটি ছক্কা। ১৯ রানে অপরাজিত মিরাজ।

দিন শেষে হারই নিয়তি, উঠল ইস, আহা, যদি-কিন্তুর রব। আরো কিছু রান যদি করা যেত। কেনই বা ওভাবে রানআউট হবে মাহমুদউল্লাহ। দরকারি সময়ে জ্বলল না কেন তামিম, মুশফিক, সাকিবের ব্যাট। ডেথ ওভারে প্রায় সময় ভালো করা রুবেল কি খুব বেশি স্নায়ুচাপে ছিলেন?

মাঝেমধ্যে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না। তবে হারের ক্ষত থেকে যায় দিনের পর দিন, বছরের পর বছর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads