ফুটবল ম্যাচ দেখতে অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করে ব্যাপক নজর কেড়েছে ইরানের বেশ ক’জন নারী। মুখে নকল দাড়ি-গোঁঁফ, মাথায় পরচুলা লাগিয়ে পুরুষের পোশাক পরে প্রিয় দল পার্সপোলিসের পতাকা গায়ে জড়িয়ে তারা খেলা দেখতে গিয়েছিল। খুব মনোযোগ দিয়ে না দেখলে তারা যে নারী, তা বোঝা ছিল কঠিন ব্যাপার। তেহরানের আজাদি স্টেডিয়ামে গত শুক্রবার ঘটেছে ঘটনাটি।
এই মেয়েদের একজন স্থানীয় একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছে, সে এ নিয়ে তিনবার এভাবে মাঠে ঢুকে খেলা দেখেছে। সে বলেছে, গুগুলে গিয়ে টিউটোরিয়াল দেখে মেকআপের নানা রকম কায়দা শিখেছি ছদ্মবেশ নেওয়ার জন্য। সে জানায়, এর আগে একবার মাঠে খেলে দেখতে গেলে তাকে নিরাপত্তা কর্মীরা ঢুকতে দেয়নি। তারপর সে এমন বুদ্ধি বের করেছে এবং অন্যদেরও উৎসাহিত করেছে। কঠোর শরিয়াহ আইন দ্বারা পরিচালিত রাষ্ট্রব্যবস্থার দেশ ইরানে নারীদের মাঠে গিয়ে খেলা দেখা আইনত নিষিদ্ধ না হলেও এক অর্থে স্বীকৃত নয়। নারীদের মাঠে না ঢোকাই সেখানে স্বাভাবিক। মাঠে যাওয়ার পর ঢুকতে দেওয়া হয়নি এমন ঘটনা রয়েছে। এমনকি মাঠে খেলা দেখতে যাওয়ার জন্য শাস্তির মুখেও পড়তে হয়েছে নারীদের।
২০১৪ সালে একজন ব্রিটিশ ইরানি অ্যাক্টিভিস্ট মাঠে ঢুকে পুরুষদের ভলিবল ম্যাচ দেখার চেষ্টা করলে তাকে আটক করা হয়। ২০১৮ সালে মাঠে ঢুকে খেলা দেখার চেষ্টা করার কারণে ৩৫ নারীকে আটক করা হয়। তবে ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের আগে নারীরা মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে পারতেন। গত ফেব্রুয়ারিতে অবশ্য একবার নারীদের মাঠে ঢোকার অনুমতি মিলেছিল। তবে তাদের পুরুষদের থেকে আলাদা বসতে হয়েছিল।
ছদ্মবেশী এক নারীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- আটক হওয়ার কোনো ভয় তার মধ্যে ছিল কি না? এ প্রশ্নের জবাবে সে জানায়, ‘কেন আমি চিন্তিত হব? মাঠে গিয়ে আমি কোনো অপরাধ করিনি। আইনে নারীর মাঠে যাওয়াকে অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। তবে কয়েকজন নারীকে এর আগে তারা ধরেছে। মাঠে আর যাবে না বলে তাদের মুচলেকাও দিতে হয়েছে।’ নিরাপত্তা রক্ষীদের চোখ কীভাবে ফাঁকি দিল সেই প্রশ্নের জবাবে আরেকজন জানায়, ‘আমরা দুটি গেট দিয়ে দল করে যখন ঢুকেছি তখন কেউ টেরই পায়নি। তবে স্টেডিয়ামে বসার পর অবশ্য অনেকেই বুঝে গিয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো তারা ম্যাচজুড়ে আমাদের দিকে কোনো মন্তব্য করেনি। বরং কেউ কেউ এসে আমাদের সঙ্গে সেলফি তুলেছে।’
ইরানে যতদিন পর্যন্ত মেয়েদের মাঠে গিয়ে খেলা দেখা স্বীকৃত না হবে ততদিন পর্যন্ত এই কাজ চালিয়ে যাবে বলে ওই মেয়েরা জানায়।
