• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

মাসুক আহমদ

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ফুটবল

অখ্যাত ফুটবলার থেকে খ্যাতিমান কোচ

  • কবিরুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ১২ মে ২০১৮

সিলেট থেকে ফিরে

নিজে খুব ভালো ফুটবলার ছিলেন না। খেলেছেন সর্বোচ্চ জেলা লিগে। অখ্যাত সেই ফুটবলার এখন দেশের বিখ্যাত কোচ। বলা হচ্ছে, সিলেটের নিভৃতচারী, প্রচারবিমুখ ফুটবল কোচ মাসুক আহমদের কথা। যার হাত ধরে জাতীয় দলে খেলেছেন গোলরক্ষক আমিনুল হক, সিলেটের ইয়ামিন মুন্না, ওয়াহেদ ও তকলিছ আহমদ। ওয়াহেদ ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে প্রবাস জীবন বেছে নিলেও মুন্না আর তকলিছ এখনো স্ব-মহিমায় আলো ছড়াচ্ছেন ঢাকার মাঠে। আর আমিনুল হক অবসর নিয়েছেন অনেক আগেই। শুধু এ চার তারকা ফুটবলারই নন, মাসুক আহমদের অনেক শিষ্যই এখন নিয়মিত খেলছেন ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে। জাতীয় দলে সুযোগের অপেক্ষায় আছেন আরো বেশ কয়েকজন ফুটবলার।

১৯৫৮ সালের ১৯ এপ্রিল সিলেট শহরের চন্দনটুলায় জন্ম নেওয়া মাসুক আহমদ ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রেমে পড়ে যান। নিজ প্রতিভায় জায়গা করে নিয়েছিলেন স্থানীয় ক্লাব ইউনাইটেডে। মাত্র পাঁচ বছর পেশাদার ফুটবলার হিসেবে ক্যারিয়ার এগিয়েছিল মাসুক আহমদের। ইনজুরির কারণে খুব বেশিদূর এগোতে না পারলেও মাঠের প্রতি তার যে ভালোবাসা, সেটা তাকে দমাতে পারেনি। আবারো ছুটে যান ফুটবল মাঠে। তবে এবার আর খেলোয়াড় হিসেবে নয়, ফুটবলার তৈরির কারিগর হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের কোচিং ট্রেনিং শেষ করেই নিজ জেলায় একাডেমি খুলে বসেন মধ্যবিত্ত পরিবারের মাসুক। তথাকথিত পেশাদারি একাডেমি নয়, একেবারেই অলাভজনক একটি ফুটবলার তৈরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেন নিজ উদ্যোগে। প্রথম দিকে নিজে খুঁজে খুঁজে ফুটবলারদের এনে ভর্তি করাতেন। এখন তার একাডেমি এতটাই বিস্তৃত হয়েছে যে, প্রায় দু’শ’ ফুটবলার নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিচ্ছে তার একাডেমি থেকে। ১৯৮৬ সালে শুরু হওয়া এ একাডেমিটি আজ সিলেটের সবচেয়ে নামকরা ফুটবলার তৈরির হ্যাচারি।

ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা তাকে এতটাই মোহাবিষ্ট করে রেখেছিল যে, নিজে সংসারী হওয়ার চিন্তা করার সময়টুকুও পাননি। অবশেষে সংসারী হয়েছেন, তবে সেটা ২০০৭ সালে। ৪৯ বছর বয়সে বিয়ে করা মাসুক আহমদের সংসার আলোকিত করেছে এক মেয়ে ও এক ছেলে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সুখের সংসার হলেও পরিবারকে সময় সেভাবে দিতে পারেন না ষাটোর্ধ্ব এ ফুটবল কোচ। ক্ষুদে ফুটবলারদের মাঝে খুঁজে ফেরেন আনন্দ। নিজের আত্মতৃপ্তির জায়গা খুঁজতে গিয়ে সিলেটের এ কোচ বলেন, ‘আমার হাত ধরে এখন যারা জাতীয় দল কিংবা ঢাকার বিভিন্ন লিগে ফুটবল খেলছে তারা যখন মিডিয়া কিংবা বিভিন্ন আলোচনায় ওস্তাদ হিসেবে আমার নাম স্মরণ করে তখনি আসলে আমি তৃপ্তি পাই। ফুটবল আমার সন্তান। আর ওরা সবাই আমার পরিবার। আমি টাকাপয়সার মধ্যে কোনো সুখ খুঁজি না। ফুটবলের মধ্যেই নিজের আনন্দ পাই। প্রতিদিন মাঠে না আসলে, এই ফুটবলারদের সঙ্গে সময় না কাটালে আমার শান্তি নেই।’

নিজের একাডেমি সম্পর্কে মাসুক আহমদ বলেন, ‘এখানে কোনো ভর্তি ফি নেই। যারা দরিদ্র তাদের আমি নিজ খরচে শেখাই। আর যারা একটু সচ্ছল, তারা ৫০০ কিংবা ১ হাজার টাকা দিয়ে যায় বল কেনার জন্য। তবে এখানে বাঁধাধরা কোনো ভর্তি ফি নেই। আর মাসিক কোনো ফিও নেওয়া হয় না। আমার ক্লাবের সভাপতি জামাল প্রতি মাসে বল দিয়ে যায়। আর আমার সাবেক ছাত্র ইয়ামিন মুন্না, ওয়াহেদ ও তকলিছ প্রতি মাসেই আমাকে কিছু না কিছু টাকা জোগান দিচ্ছে। তাদের সহযোগিতাতেই এগিয়ে যাচ্ছে একাডেমি।’ তৃণমূলের ফুটবলারদের নিয়ে কাজ করা এ কোচ আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা আসলে স্পন্সর খুঁজে পাই না। ফুটবলে এখন আর সেভাবে স্পন্সর আসে না। যদি প্রাইভেট কোম্পানিগুলো তাদের হাত প্রসারিত করত, তাহলে সিলেট থেকে আরো অনেক ফুটবলার বেরিয়ে আসত। যারা জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখতে পারত।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads