• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
‘হ্যান্ড অব গড’ ও ম্যারাডোনার স্বীকারোক্তি

এখনো তর্ক বাধে ম্যারাডোনার সেই হ্যান্ড অব গডের গোল নিয়ে

সংরক্ষিত ছবি

ফুটবল

‘হ্যান্ড অব গড’ ও ম্যারাডোনার স্বীকারোক্তি

  • স্পোর্টস ডেস্ক
  • প্রকাশিত ০২ জুন ২০১৮

১৯৮৬ ফুটবল বিশ্বকাপ মানেই ম্যারাডোনার আবির্ভাব। এক কিংবদন্তির পথচলা শুরু। রূপকথার মতো দলকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করানো। অতঃপর ইতিহাসের পাতায়। যদিও দিয়েগো ম্যারাডোনার ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি ঘটেছিল নিষিদ্ধ মাদক সেবনের দায়ে, যা এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। ম্যারাডোনা যে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি নন্দিত, সেটি ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপে। আর তুমুল সমালোচিতও এই বিশ্বকাপের কারণে। এই বিশ্বকাপেই দেখা মিলেছে হ্যান্ড অব গডের, যা ম্যারাডোনার ভাষ্য। তবে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা এখনো মনে করে এটা ছিল ম্যারাডোনার জোচ্চুরি। তাদের ভাষ্যমতে, হাত দিয়ে গোল করে ম্যারাডোনা দলকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন সেমিফাইনালে।

সেই বিশ্বকাপের ম্যাচ নিয়ে কথা হয়েছে অনেক। এখনো হয়। তর্ক বাধে ম্যারাডোনার সেই হ্যান্ড অব গডের গোল নিয়ে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে হ্যান্ড অব গোলের উদ্ভব। যে ম্যাচে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড। সেই ম্যাচে আর্জেন্টিনা ২-১ গোলে পরাস্ত করেছিল ইংলিশ শিবিরকে। আর্জেন্টিনার হয়ে দুটি গোলই করেছিলেন ম্যারাডোনা। এর মধ্যে একটি গোল শতাব্দীর সেরা, ফিফার জরিপ অনুযায়ী। অন্যটি তেমনই বিতর্কিত গোটা শতাব্দী ধরেই। যেখানে অনেকটা লাফিয়ে উঠে মাথার উপর হাত নিয়ে বলটিকে জালে জড়িয়েছিলেন ম্যারাডোনা। অনেক চেষ্টা করেও তা নাগালে আনতে পারেননি ইংলিশ গোলরক্ষক পিটার শিলটন। তাৎক্ষণিকভাবে ইংলিশ ফুটবলাররা এই গোলের প্রতিবাদ করলেও রেফারি আলি বিন নাসার তা আমলে নেননি। তিনি বাজান গোলের বাঁশি। শেষের দিকে গ্যারি লিনেকার একটি গোল করলেও হার এড়াতে পারেনি ইংল্যান্ড। বিদায় নিতে হয় কোয়ার্টার ফাইনালের মঞ্চ থেকে। তারপর থেকে ম্যারাডোনার প্রতি সাপে নেউলে সম্পর্ক ইংলিশদের।

দীর্ঘদিন পর সেই হ্যান্ড অব গড নিয়ে কথা বলেছেন ম্যারাডোনা। রবার্ট পায়ার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যেখানে বেশ সরল স্বীকারোক্তিই তিনি করেছেন। বলেছেন, এখনকার মতো প্রযুক্তি বিশেষ করে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) যদি তখন থাকত, নিশ্চিত আমি গ্রেফতার হতাম। কারণ ৮০ হাজার মানুষের সামনে এটা করা সম্ভব হতো না।

যদিও সেই ম্যাচের সময় ম্যারাডোনা দাবি করেছিলেন এটা হেডই ছিল। তবে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে কিছুটা ভোল পাল্টে ফেলেন তিনি। যেখানে তিনি বলেন, আমি অল্প হেডই করেছিলাম, সঙ্গে ছিল ঈশ্বরের হাতের হালকা ছোঁয়া। সেই কাহিনী এবার পরিষ্কার করেই বললেন ম্যারাডোনা। প্রথম প্রশ্ন ছিল এমন, যদি ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ভিএআর (ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি) থাকত, তাহলে আর্জেন্টিনা ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচটিতে কী ঘটত? ম্যারাডোনা কোনো রাখঢাক না রেখেই কৌতুকের সুরে বলেন, ‘আমি গ্রেফতার হয়ে যেতাম। কারণ ৮০ হাজার লোকের (স্টেডিয়ামে আগত দর্শক) সামনে আপনি চুরি করতে পারতেন না।’ পরের অংশটুকু আরো মজার করে বলেছেন ম্যারাডোনা, ‘আমি বাঁ হাতটা আস্তে আস্তে ওঠালাম, মাথার ঠিক পাশেই, টিক টিক। ফেনউইক  (টেরি) চেঁচিয়ে বলল, হাত, কীভাবে হাত দিয়ে গোল। আমি তাকে বললাম, গোল।’

গোটা সাক্ষাৎকারে ম্যারাডোনা সাবলিলভাবেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। উপস্থাপক ম্যারাডোনার কিছু উত্তরে তো হেসেই খুন। ম্যারাডোনা সাক্ষাৎকারে এটাও উল্লেখ করেন, ওই ম্যাচে আমার ক্যারিয়ার সেরা গোলও কিন্তু আছে। কথা সত্য। মাঝমাঠ থেকে একক প্রচেষ্টায় ধাপে ধাপে কয়েকজনকে কাটিয়ে গোল করেছিলেন ম্যারাডোনা। যে ফিফার সমীক্ষায় শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ গোল হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।

কিন্তু সেই ম্যাচের এক হ্যান্ড অব গডই সব যেন থমকে দিয়েছিল। আশির দশক শেষে এখনো সেই গোল নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় ওঠে। আর্জেন্টিনাকে সাপোর্ট করতে গিয়ে তর্ক বাঁধলে প্রতিপক্ষ মনে করিয়ে দেয় সেই হ্যান্ড অব গডের কথা। তখন ম্যারাডোনার সব কীর্তি যেন হাওয়ায় মিশে যাওয়ার উপক্রম। কিন্তু কোটি ভক্তের কাছে ম্যারাডোনা তো জীবন্ত কিংবদন্তিই। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads