ম্যাচ শেষে জার্মানদের দেখে মনে হচ্ছিল পুরো দুনিয়াটা যেন ভেঙে পড়েছে তাদের মাথার ওপর। নিজেরাই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে বিদায় হয়ে গেছে তাদের এবং তা বড় করুণভাবে। বুধবার রাশিয়ার কাজানে ঘটেছে সেই অবিশ্বাস্য ঘটনা। কিন্তু কেন জার্মানি? সেই জার্মানি যারা ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপ থেকে জিতেছিল শিরোপা।
এফ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে খেলার ইনজুরি টাইমে দুই গোল হজম করে তারা। প্যানিক হয়ে গিয়েছিল একটি গোলের জন্য। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোল পায়নি পাঁচটি পরিবর্তন নিয়ে এ ম্যাচে খেলতে নামা জার্মানরা। বিশ্বকাপের তিন দেখায় জার্মানির বিপক্ষে এই প্রথম জয় পেল কোরিয়ানরা। আর ১৯৩৮ বিশ্বকাপের পর প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেওয়া জার্মানরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
জার্মান মিডিয়ার দাবি, দল গঠনে দুর্বলতা ছিল জোয়াকিম লো’র। এমনিতে জার্মান দলে ভালো ফুটবলারের অভাব নেই। কিন্তু দল গঠনে নানা সমস্যা চোখে পড়েছে। ম্যানচেস্টার সিটির লেরয় সানেকে স্কোয়াডে না নেওয়াটা বড় ভুল ছিল। আর সদ্য ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা ম্যানুয়েল ন্যয়ারের বদলে বার্সেলোনার গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগানকে না খেলানোও ছিল ভুল।
অভিজ্ঞ ফুটবলারদের ব্যর্থতা জার্মানির বিদায়ের অন্যতম কারণ। গতবারের বিশ্বকাপজয়ী জার্মান দলের দুটি বড় নাম ছিল ফিলিম লাম ও বাস্তেইন শোয়েনস্টাইগার। একজন ছিলেন ফুলব্যাক ও অন্যজন মিডফিল্ডার। অভিজ্ঞ এই দুই ফুটবলার পুরো দলটিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু এবারের জার্মান দলে সেই ধরনের নেতা ছিলেন না। লো’র হাতে টনি ক্রুস, সামি খেদিরা, ম্যাটস হামেলস, মেসুত ওজিল ও থমাস মুলারদের মতো অভিজ্ঞ ফুটবলাররা ছিলেন। কিন্তু কেউই সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি। জার্মান কোচ নিজেও কাঠগড়ায় তুলেছেন দলের অভিজ্ঞ ফুটবলারদের।
মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণে সৃষ্টিশীল ফুটবলারের অভাব ছিল জার্মান দলে। এবার বড় দলগুলোকে খুব ভোগাচ্ছে কাগজে-কলমে ছোট দলগুলো। শুধু আটকে রাখার মনোভাব নিয়ে মাঠে নেমে রুখে দিচ্ছে তারা। এমন অবস্থায় প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ ভাঙার জন্য যে ধরনের ড্রিবলার ও সৃষ্টিশীল ফুটবলার প্রয়োজন, তা জার্মান দলে নেই।
বিশ্বকাপের আগে থেকেই একজন ভালো স্ট্রাইকারের অভাব দেখা দেয় জার্মান স্কোয়াডে। বিশ্বকাপের আগে তারা প্রীতি ম্যাচে ব্রাজিলের কাছে ১-০ গোলে এবং প্রস্তুতি ম্যাচে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরে যায়। তখন থেকেই জার্মানির বর্তমান দলকে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছিল।
পুরনো খেলোয়াড়দের রিপ্লেসমেন্ট এখনো পায়নি জার্মানি। এই জার্মান দলের অধিকাংশ ফুটবলারই নতুন। তাদের অধিকাংশের বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। আর নতুনদের মধ্যে অনেকেই দলের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেননি। যার প্রভাব প্রথম ম্যাচেই দেখা যায়। অথচ এই দলটা নিয়েই কনফেডারেশনস কাপ জিতেছিলেন কোচ জোয়াকিম লো।
বাংলায় একটা প্রবাদ বাক্য আছে, ‘অহঙ্কার পতনের মূল’। বর্তমান জার্মান দলেও ছিল অহঙ্কারবোধ। এই দলের মধ্যে একটা অহমিকা কাজ করেছে- আমরা যেকাউকে হারাতে পারি। আমরা অজেয়। আমাদের সামনে কেউ দাঁড়াতে পারবে না। আর এটাই সবচেয়ে বড় কাল হয়ে দাঁড়ায় জার্মানির জন্য।
মূলত এই কারণগুলোর জন্যই বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের এই ভরাডুবি। তবে আরেকটা তথ্য দিতেই হয়। এ পর্যন্ত কনফেডারেশনস কাপ জিতে কোনো দলই পরের বিশ্বকাপে শিরোপা জিততে পারেনি। জার্মানি সেই ধারাটাই অব্যাহত রাখল।