• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
বেলজিয়ামে ব্রাজিলের বিদায়

ম্যাচ শেষে এভাবেই হতাশায় ভেঙে পড়েন ব্রাজিলের ফুটবলাররা

ছবি : ইন্টারনেট

ফুটবল

বেলজিয়ামে ব্রাজিলের বিদায়

  • স্পোর্টস রিপোর্টার
  • প্রকাশিত ০৭ জুলাই ২০১৮

হলো না হলুদ উৎসব। দেখা মিলল না সাম্বা ছন্দের। উল্টো কাজান অ্যারিনায় শোকস্তব্ধ সেলেকাও শিবির। হতাশায় মুখ লুকালেন নেইমার। কস্তা, জেসুস, মার্সেলোদের শরীরটা যেন মিশে যেত চাইল কাজানের সবুজ গালিচায়। বিশ্বাস-অবিশ্বাস আর বিরূপ ভাগ্যের দোলাচালে বিষণ্নতায় কাতর কোচ তিতে। গ্যালারিতে ভক্তদের কান্নার রোল। বিশ্বকাপ মঞ্চ থেকে বিদায়ের মুহূর্ত যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না তাদের। কিন্তু পাশেই তখন বৃত্তাকার হয়ে জয়োৎসবে মত্ত বেলজিয়াম। সোনালি প্রজন্মদের কী বাঁধভাঙা উল্লাস। এমন উৎসব তাদেরই মানায়। গত ৫৫ বছর যাদের বিরুদ্ধে জয়হীন ছিল বেলজিয়াম সেই ব্রাজিলকে ২-১ গোলে হারিয়ে ৩২ বছর পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নাম লিখিয়েছেন লুকাকু, ব্রুইনে, কোম্পানিরা।

এই কাজান অ্যারিনায় কয়েক দিন আগেই বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে বিদায় নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। গতকাল বিদায় নিল ব্রাজিলও। মেসি, রোনালদো, ইনিয়েস্তা, সুয়ারেজের পর বিশ্বকাপ থেকে ঝরে পড়ল আরো একটি নক্ষত্র- নেইমার। টপ ফেভারিটের তকমা সঙ্গে নিয়েও পারল না পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। গতবার ঘরের মাঠে সেমিতে উঠলেও এবার কোয়ার্টার ফাইনালেই মিশন শেষ হয়ে গেল পেলের উত্তরসূরিদের।

ব্রাজিলের বিদায়ে ১২ বছর পর রাস্তা পরিষ্কার হলো অল ইউরোপ ফাইনালের। শেষবারের মতো দুটি ইউরোপের দল ফাইনাল খেলেছিল ২০০৬ বিশ্বকাপে (ফ্রান্স-ইতালি)। ইউরোপের বাইরে থাকা ল্যাটিন আমেরিকার দুটি দল কোয়ার্টার পর্যন্ত ছিল চলমান বিশ্বকাপে। গতকাল প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে বিদায় নিয়েছে উরুগুয়ে, এরপর ব্রাজিল। সেমিফাইনালে বেলজিয়াম মুখোমুখি হবে ফ্রান্সের।  

কাজান অ্যারেনায় শুরু থেকেই ম্যাচে ছিল বারুদে উত্তাপ। ছিল আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের পসরা। সাত মিনিটেই প্রথম গোলের দেখা পেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য। নেইমারের কর্নার কিকে কোনোমতে পা লাগিয়েছিলেন থিয়াগো সিলভা। কিন্তু বল উঁচু হয়ে ফিরে আসে পোস্টে লেগে। একটুর জন্য জাল খুঁজে পায়নি বল। মিনিট চারেক পর আরেকটা কর্নার কিকে বল পেয়েও মাত্র ১০ গজ দূর থেকে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি পাওলিনহো। 

অন্যদিকে রক্ষণ ঠিক রেখে আক্রমণ চালায় বেলজিয়ামও। ১২ মিনিটে দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন ফেলাইনি। কিন্তু তার শট মিরান্ডার পায়ে লেগে লক্ষ্যভ্রষ্ট। মিনিটখানেক পরই ব্রাজিল শিবিরে ভর করে হতাশার সুর। আত্মঘাতী গোল। বেলজিয়ামের কর্নার কিকে হেড দিয়ে বিপদমুক্ত করতে গিয়ে ব্যর্থ ফার্নান্দিনহো। বল মাথায় লাগাতে পারেননি, পরিবর্ততে বল তার হাতে লেগে জড়ায় নিজেদেরই জালে। ১-০তে লিড তখন বেলজিয়ামের। 

এক গোল হজমের পর আক্রমণের গতি বাড়ায় ব্রাজিল। কিন্তু গোল যেন সোনার হরিণ। ২৬ মিনিটে ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরা রিয়াল ডিফেন্ডার মার্সেলোর শট প্রতিহত করেন বেলজিয়াম গোলরক্ষক কোর্তোয়া। তবে ৩১ মিনিটে ব্রাজিল শিবিরে শেল হয়ে বেধেন ডি ব্রুইনে। মাঝ মাঠ থেকে লুকাকু যেন দুর্দমনীয়। একক প্রচেষ্টায় গতি আর কৌশলকে কাজে লাগিয়ে বল নিয়ে চলে আসেন ব্রাজিলের ডি বক্সের কাছে। পাস দেন সতীর্থ ডি ব্রুইনের উদ্দেশ্যে। ভুল করেননি ব্রুইনে। মাপা শটে লক্ষ্যভেদ। পোস্টের কাছ দিয়ে বল জালে। ব্রাজিল গোলরক্ষক এলিসন পাখির মতো ঝাঁপিয়েও ব্যর্থ। ২-০তে এগিয়ে বেলজিয়াম।

আক্রমণের ধার যেন বেড়ে যায় তখন ব্রাজিলের। কিন্তু সব আক্রমণই যেন মিইয়ে যায় বেলজিয়ামের রক্ষণভাগে কিংবা কোর্তোয়ার দক্ষতার কাছে। ৩৬ মিনিটে যেমন জেসুসের হেড চলে যায় বারের ওপর দিয়ে। পরের মিনিটে কুতিনহোর বাঁকানো শট। হতে পারত গোল। কিন্তু চিতার মতো এক লাফ দিয়ে প্রতিহত করলেন বেলজিক গোলরক্ষক। হা-হুতাশ সেলেকাও শিবির। ৪১ মিনিটে গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল বেলজিয়াম। বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি-কিকে আবার ব্রুইনে। কিন্তু তার নেওয়া শট দক্ষতার সঙ্গে ফিস্ট করে এলিসন বল পাঠিয়ে দেন বারের ওপর দিয়ে। ২-০ গোলের অগ্রগামিতা নিয়েই প্রথমার্ধের বিরতিতে যায় বেলজিয়াম।

দ্বিতীয়ার্ধের গোলের জন্য মরিয়া ব্রাজিল কী না করেছে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বেলজিয়ামের দুর্ভেদ্য রক্ষণভাগ। কখনো বা কোর্তোয়ার জাদুকরি সেভ। তাই বলে হাল ছেড়ে দেননি নেইমাররা। ৭৬ মিনিটে আসে কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। বাঁ প্রান্ত থেকে কুতিনহোর কৌশলী ক্রস, রেনাতো অগাস্তোর মায়াবী হেড, বল পোস্টে বাতাস লাগিয়ে জড়ায় জালে। কোর্তোয়া ঝাঁপিয়ে পড়েও নাগাল পাননি। ব্যবধান কমে আসে ২-১-এ। ম্যাচে ফেরার আভাস ব্রাজিলিয়ান শিবিরে। গ্যালারিতে ধুক ধুক করে কাঁপছে ভক্তদের হূদয়।

৮১ মিনিটে ফিরমিনোর একটি শট চলে যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে। ৮৪ মিনিটে নেইমারের ক্রসে সম্ভাবনা জেগেছিল গোলের। তবে কুতিনহোর দৃষ্টিকটু শট হূদয় বিদীর্ণ করে ব্রাজিল ভক্তদের। অতিরিক্ত সময়েও আশায় বুক বেঁধেছিল সবাই। ৯৪ মিনিটে নেইমারের একটি শট চলে যায় বারের একটু ওপর দিয়ে। পরের মিনিটে কর্নার কিকে ফিরমিনোর হেডও তাই।

গোল মিসের মহড়ায় এবার ব্রাজিলও ছিটকে পড়ল বিশ্বকাপ থেকে। বেলজিয়ামের গতির ফুটবলের কাছে চূর্ণ হলো ব্রাজিলের হেক্সা জয়ের স্বপ্নও।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads