• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বিশ্বকাপ এখন ইউরোকাপ

ট্রফি ইউরোপেই থেকে যাচ্ছে

সংরক্ষিত ছবি

ফুটবল

বিশ্বকাপ এখন ইউরোকাপ

  • রায়হানউদ্দিন রাসেল
  • প্রকাশিত ০৮ জুলাই ২০১৮

আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, কলম্বিয়া ও পেরুর বিদায়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের ল্যাটিন আমেরিকার শেষ ভরসা হয়ে ছিল ব্রাজিল। সেই ব্রাজিলও করল হতাশ। বেলজিয়ামের কাছে ২-১ গোলে হেরে ব্রাজিলের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে নিভে যায় ল্যাটিনদের শেষ প্রদীপ। অল ইউরোপিয়ান সেমিফাইনালের জন্য প্রস্তুত রাশিয়া বিশ্বকাপ। ট্রফি ইউরোপেই থেকে যাচ্ছে। ফলে বিশ্বকাপকে এখন অভিহিত করাই যায় ‘ইউরোকাপ’ নামে।

বিশ্বকাপের সব আসরে খেলা একমাত্র দল ব্রাজিল। সর্বোচ্চ পাঁচবার বিশ্বকাপ জেতা দলও তারা। ২০০২ সালে পঞ্চমবার বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলেছিল সেলেসাওরা। এরপর পেরিয়ে গেছে চারটি বিশ্বকাপ। কিন্তু ব্রাজিলের মিশন হেক্সা সফল হয়নি। সেটাও আবার ইউরোপীয় দলগুলোর কাছে হেরে। তিনবার বাদ পড়েছে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে, আর একবার সেমিতে। ২০০৬ সালে শেষ আটের লড়াইয়ে ফ্রান্সের কাছে ১-০ গোলে হেরে বিদায় নেয় তারা। পরের বার ২০১০ সালে নেদারল্যান্ডসের কাছে ২-১ গোলে হেরে যায় সেই কোয়ার্টার ফাইনালেই। এরপর ২০১৪ ঘরের মাঠের বিশ্বকাপ। এবার শেষটা হয়েছে বেশ করুণভাবে। সেমিতে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে ভঙ্গ হয় হেক্সা মিশন। আর এবার কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের কাছে হেরে বিদায় নিতে হলো ব্রাজিলকে।

রাশিয়া বিশ্বকাপ বাদে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের মোট ২০ আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ইউরোপ অঞ্চল শিরোপা জিতেছে ১১ বার এবং ল্যাটিন আমেরিকা অঞ্চল শিরোপা জিতেছে ৯ বার। এ ছাড়া আর কোনো অঞ্চলই শিরোপা জিততে পারেনি। তাই বিগত ৮৮ বছর ধরে লড়াইটা ইউরো ও ল্যাটিন আমেরিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। ১৯৯০ বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকান দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বকাপ জয়ের ক্ষেত্রে সমতাই ছিল। এরপর ১৯৯০ বিশ্বকাপ থেকে ২০১৮ বিশ্বকাপ পর্যন্ত সাতটির মধ্যে কেবল দুটি জিতেছে ব্রাজিল, আর বাকি পাঁচটিই গেছে কোনো ইউরোপিয়ান দেশের ঘরে। রাশিয়া বিশ্বকাপ তো নিশ্চিতভাবেই ইউরোপে থাকছে। কারণ টিকে থাকা সব দলই যে ইউরোপের।

বিশ্ব ফুটবলে ইউরোপের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে ক্লাব ফুটবল। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবল গত ২৫ বছরে এত বেশি উন্নতি করেছে যে অন্যান্য দেশের লিগগুলো যোজন-যোজন পিছিয়ে পড়েছে। মূলত চ্যাম্পিয়নস লিগের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টুর্নামেন্ট ইউরোপের ফুটবলকে অনেক বেশি শক্তিশালী করেছে।

এ ছাড়া বর্তমানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কোচরা বিশ্বের অনেক দেশে কোচিং করিয়ে থাকেন। অন্য দেশগুলোর ফুটবল সংস্কৃতির সঙ্গেও তাদের পরিচয় ঘটেছে। যেটি জাতীয় দলের ক্ষেত্রে ভীষণ কাজে দিচ্ছে। ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লিগের বড় দলগুলোর কোচরাই যেমন পর্তুগাল, স্পেন, জার্মানি, আর্জেন্টিনার মতো ফুটবল পরাশক্তির দেশগুলো থেকে এসেছেন। ব্রাজিলকে হারানো বেলজিয়ামের কোচ রবার্তো মার্টিনেজই যেমন স্প্যানিশ।

বিশ্বকাপের ইউরোপিয়ান অঞ্চল থেকে মোট ১৪টি দেশ অংশ নেয়। সেখান থেকে ২০০২ সালে ইউরোপের ৯টি দেশ নকআউট পর্বে খেলে। ২০০৬ সালে ১১টি, ২০১০ সালে সবচেয়ে কম ৬টি। আর ২০১৪ সালে খেলে ৭টি। আর এবার ২০১৮ বিশ্বকাপে নকআউট পর্বে খেলছে ১০টি দেশ।

রাশিয়া বিশ্বকাপে ল্যাটিন আমেরিকার প্রতিনিধি ছিল ৫ দল। এর মধ্যে একটি দল (পেরু) বিদায় নেয় প্রথম রাউন্ড থেকে। আর দুটি দল (আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া) বিদায় নেয় রাউন্ড অব সিক্সটিন থেকে। আর আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা দুই দল উরুগুয়ে এবং ব্রাজিল বিদায় নেয় শেষ আট থেকে। এর মাধ্যমে একটা বিষয় নিশ্চিত হয়ে গেল- বিশ্বকাপের ২১তম আসরের শিরোপা ইউরোপের ঘরেই যাচ্ছে, কেননা বিশ্বকাপে এখন টিকে থাকা সব দেশই ইউরোপ অঞ্চলের। আর ইউরোপের বিশ্বকাপ জয়ের সংখ্যাটা ১১ থেকে ১২তে উত্তীর্ণ হচ্ছে, এটাও নিশ্চিত। ফলে টানা চার আসর ধরে শিরোপা যাচ্ছে ইউরোপিয়ানদের ঘরে। একই সঙ্গে পতন ঘটছে ল্যাটিন সাম্রাজ্যের।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads