• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
ফুটবল মহাযজ্ঞের ফাইনাল আজ

আজ ফাইনালের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ফুটবল মহাযজ্ঞের

সংরক্ষিত ছবি

ফুটবল

ফুটবল মহাযজ্ঞের ফাইনাল আজ

  • রায়হানউদ্দিন রাসেল
  • প্রকাশিত ১৫ জুলাই ২০১৮

রাশিয়ার মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে গত ১৪ জুন শুরু হয়ে ছিল ফুটবলের মহাযজ্ঞের। নানা ঘটনা, অঘটন আর রেকর্ড জন্ম দিয়ে ৩১ দিন পর আজ ফাইনালের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই মহাযজ্ঞের। অল-ইউরোপিয়ান এই ফাইনালে লড়বে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া। শুরুর মতো শেষটাও হবে লুঝনিকি স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় শুরু হবে দু’দলের মহারণ। ক্রোয়েশিয়ার সামনে অপেক্ষা করছে ইতিহাস। জিতলে প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরবে ক্রোয়াটরা। আর ফ্রান্সের সামনে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি ছুঁয়ে দেখার হাতছানি।

ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশমকে ডাকছে কিংবদন্তিদের রেকর্ড। প্রথমে ফুটবলার এবং পরে কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্ব আছে কেবল দুজনের। তাদের একজন জার্মানির কিংবদন্তি ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ার, আরেকজন ব্রাজিলের মারিও জাগালো। ফ্রান্সের কোচ দেশমের সামনেও রয়েছে এক সুযোগ। ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে হারাতে পারলেই ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবেন ফরাসি এই কোচ।

ফাইনালের একাদশ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিশ্বকাপ জিততে উসাইন বোল্টের গতিতে ছুটে যাওয়া কিলিয়ান এমবাপে এবং নিখুঁত নিশানার আঁতোয়া গ্রিজম্যানের ওপরই বড় ভরসা দিদিয়ের দেশমের। বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে যাওয়া দলটির সেন্টার ফরোয়ার্ড অলিভার জিরুড, ৬ ম্যাচে গোল করতে পারেননি একটিও। তবু পরিসংখ্যানে বিভ্রান্ত না হয়ে শিরোপার লড়াইয়ে চেলসির স্ট্রাইকারকে একাদশে রাখবেন ফ্রান্সের কোচ। কারণ প্রতিপক্ষের বক্সের ভেতর ডিফেন্ডারদের ব্যস্ত রেখে গ্রিজম্যান এবং এমবাপের জন্য গোলের সুযোগ তৈরিতে বড় ভূমিকাই রেখে চলেছেন তিনি।

ফ্রান্সের আক্রমণভাগের সবচেয়ে সফল গ্রিজম্যান। ৬ ম্যাচে ৪৮০ মিনিট খেলে এই তারকা গোল করেছেন ৩টি এবং অ্যাসিস্ট ২টি। এরপর প্রতিভার আলো ছড়াচ্ছেন এমবাপে। বিশ্বকাপে ৩ গোলের ২টি আর্জেন্টিনার রক্ষণকে গতিতে পরাস্ত করে। এক আত্মঘাতীসহ রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্স ফুটবলাররা করেছেন ৯ গোল। এতে গ্রিজম্যান ও এমবাপের পর রক্ষণের খেলোয়াড়দের ভূমিকা বেশি। রাফায়েল ভারন, স্যামুয়েল উমতিতি আর বেঞ্জামিন পাভার্ড এই তিনজনই নাম তুলেছেন স্কোরশিটে। তবে ফাইনালে গোল করতে হলে দিতে হবে বড় পরীক্ষা। বিশ্বকাপে অন্তত সংখ্যায় রক্ষণে সবচেয়ে ভালো যে ক্রোয়েশিয়াই।

১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলতে না পারার কষ্ট এখনো পোড়ায় ক্রোয়েশিয়ানদের। সেই কষ্ট এবার দূর করেছেন লুকা মডরিচ-ইভান রাকিটিচরা। মাত্র ৪২ লাখ জনসংখ্যার দেশটি রাশিয়ায় ঘটিয়েছে ফুটবলের বিপ্লব। বিশ্বকাপের ফাইনালে দ্য ব্লেজার্সরা। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে আজ শিরোপা নির্ধারণী লড়াইয়ে সেই ফ্রান্সের সামনে ক্রোয়েশিয়া। মহারণের আগে ঘুরেফিরেই আসছে ’৯৮-এর স্মৃতি। প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে নেমে সেমিফাইনালে পৌঁছে সবাইকে চমকে দেয় ক্রোয়েশিয়া। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ ছিল সেবারের স্বাগতিক ফ্রান্স। ম্যাচের শুরুতে লিড নিলেও পরে আর তা ধরে রাখতে পারেনি ক্রোয়াটরা। ২-১ গোলের হারের স্মৃতি এখনো জ্বলজ্বলে দলের ফুটবলারদের হূদয়ে।

তাই অনেকের কাছে ফাইনাল ম্যাচটি ক্রোয়েশিয়ার কাছে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতোই- ট্রফি জয়ের সঙ্গে প্রতিশোধ। বিশ্বকাপের ফাইনাল নিশ্চিত করার পর থেকেই ক্রোয়েশিয়াজুড়ে চলছে উৎসব। আর সেই উৎসব আরো বাড়াতে ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার ভরসার নাম লুকা মডরিচ। দলের যোগ্য নেতার মতো মডরিচ দলকে ফাইনালে তুলতে রেখেছেন দারুণ ভূমিকা। রাশিয়া বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি দৌড়ানো (৬৩ কিমি) খেলোয়াড়টিও মডরিচ। গোল করেছেন দুটি, করিয়েছেন একটি। সবচেয়ে বেশি তিনবার ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন তিনি। আর এ কারণে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল জিততে পারেন তিনি। তাকে বেশ ভালোভাবেই সঙ্গ দিয়েছেন ইভান রাকিটিচ, মারিও মানজুকিচ ও ইভান পেরিসিচ। তিনজনই গোল করেছেন দুটি করে। গোলরক্ষক ড্যানিয়েল সুবাসিচের অবদানও কম নয়। রাউন্ড অব সিক্সটিনে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেন এবং কোয়ার্টার ফাইনালে রাশিয়াকে টাইব্রেকে রুখে দিয়েছিলেন মোনাকোর এই গোলরক্ষক। সুতরাং ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালেও তারাই মূল ভারসা দলের কোচের।

ফাইনালে আসতে বিশ্বকাপে নতুন রেকর্ড গড়েছে ক্রোয়েশিয়া। নকআউট পর্বে তিন ম্যাচেই অতিরিক্ত সময়ে শেষ করেছে তারা। সেই হিসেবে পুরো এক ম্যাচ বেশি খেলেছে তারা। স্বাভাবিকভাবে ফুটবলারদের ক্লান্তি ভর করার সম্ভাবনা বেশি। এখানেই নিজের কৌশল সাজিয়েছেন ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম, ‘ক্রোয়েশিয়া টানা তিন ম্যাচ ১২০ মিনিট করে খেলেছে। কাজেই তারা অনেক ক্লান্ত। আর আমি এই জায়গায়ই বেশি জোর দিয়েছি। আমাদের প্রথম টার্গেট থাকবে তাদের দলের ফুটবলারদের আরো ক্লান্ত করা। এরপর নিজেদের খেলা উপহার দেওয়া।’

কিন্তু ব্যাপারটি আড়াল করে গেছেন ক্রোয়েশিয়ার বাস্তববাদী কোচ জ্লাতকো দালিচ, ‘১৯৯৮ বিশ্বকাপে প্রথম তিন ম্যাচে আমি ফ্রান্সের সমর্থক ছিলাম। সব ক্রোয়েশিয়ানের মনে আছে ওই ম্যাচের কথা। থুরামের জোড়া গোলে আমরা ২-১ ব্যবধানে হেরেছিলাম। এটা এমন একটা বিষয় ছিল গত ২০ বছরেও কেউ ভোলেনি। আমার মনে আছে, যখন সুকার গোল করেছিল, আমরা উৎসব শুরু করেছিলাম। কিন্তু খুব দ্রুতই আমরা দুই গোলে পিছিয়ে যাই। ফাইনালে দু’দলই তাদের সেরাটা মেলে ধরতে চাইবে। প্রতিশোধ নিয়ে ভাবছি না আমরা। এটা ফুটবল, এটা খেলা। তবে টুর্নামেন্টের ফাইনালে সেরা ম্যাচটি খেলার জন্য আমরা প্রস্তুত হচ্ছি।’

কাগজে-কলমে এবং অতীত ইতিহাস বিবেচনা করলে ফাইনালের ফেভারিট ফ্রান্সই। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা নেই বলে তাদের ওপর চাপ কিছুটা কম। যদি প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডও হতো, তাহলেও ভয়ে থাকত দেশমের দল। প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়ার বলেই হয়তো একটু নির্ভার। যদিও পল পগবা-গ্রিজম্যানরা কয়েকবারই বলেছেন, তারা ক্রোয়াটদের হালকাভাবে নিচ্ছেন না। ফ্রান্স কিছুটা নির্ভার থাকলেও দালিচের দল কিন্তু চাপেই আছে। একে ফাইনালে ওঠার, তার ওপর আছে প্রতিপক্ষ ফ্রান্সের সামলানোর চাপ। সব মিলিয়ে রোমাঞ্চকর এক ফাইনালের অপেক্ষায় ফুটবলবিশ্ব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads