• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
ক্রোয়েশিয়াকে থামিয়ে বিশ্বসেরা ফ্রান্স

ক্রোয়েশিয়া হারানোর পর ফ্রান্স দলের উচ্ছ্বাস

ছবি : ইন্টারনেট

ফুটবল

ক্রোয়েশিয়াকে থামিয়ে বিশ্বসেরা ফ্রান্স

  • স্পোর্টস ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১৫ জুলাই ২০১৮

আত্মঘাতী গোল, ভিডিও রিপ্লে দেখে দেওয়া পেনাল্টিতে গোল, গোলরক্ষকের মারাত্মক ভুলে গোল; আর দর্শনীয় সব গোল- রাশিয়া বিশ্বকাপ দেখল রোমাঞ্চকর এক লড়াই। দুর্দান্ত ক্রোয়েশিয়াকে থামিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতল ফ্রান্স। হূদয় ভাঙল প্রথম শিরোপার স্বপ্ন দেখা ক্রোয়েশিয়ার।

গোলরক্ষক হুগো লরিসের শেষ শট নেওয়ার আগেই স্টেডিয়ামে উচ্ছ্বাসের আভাস পাওয়া যায়। কয়েক সেকেন্ড ব্যবধানে রেফারি যখন লম্বা করে বাঁশি বাজান, গ্রিজমানরা আনন্দে ভোঁ দৌড় দেন, এক অপরকে জড়িয়ে ধরেন। সাইড লাইনে থাকা ফুটবলাররাও দৌড়ে মাঠে নেমে যান। কোচ দিদিয়ের দেশমের মুখে হাসি। জড়িয়ে ধরেন সহযোদ্ধাদের। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে লুঝনিকি স্টেডিয়াম মুখরিত হয়ে ওঠে। ফরাসি সমর্থকরা আনন্দের জোয়ারে ভাসে। নীল জার্সিধারীদের বাঁধভাঙা উল্লাস। এ তো দীর্ঘ ২০ বছর পর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার উল্লাস। রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্সের শিরোপা জয়ের উল্লাস।

এর আগে ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স যখন প্রথম শিরোপা জেতে, তখন দিদিয়ের দেশম ছিলেন দলের অধিনায়ক। এবার ফ্রান্সের কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ ট্রফি জিতলেন দেশম। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এ এক দারুণ ঘটনা।

যখন এক দল আনন্দে মাতোয়ারা, তখন স্টেডিয়ামে কারো চোখ ছলছল করে। কেউ মনমরা হয়ে ফ্যালফ্যাল নয়নে থাকিয়ে থাকে। কারো মুখে ভাষা নেই। লুকা মডরিচরাও নিস্তেজ হয়ে মাটিতে বসে পড়েন। কয়েকজন মাটিতে শুয়ে পড়েন। কেউ চোখের পানি সংবরণ করতে পারেননি। কারণ তাদের ইতিহাস গড়া হলো না। আরাধ্য সোনালি ট্রফিটি ছুঁয়ে দেখা হলো না। পুরো ৯০ মিনিট বীরের মতো লড়াই করেও ফ্রান্সের কাছে ৪-২ গোলে হারল ক্রোয়েশিয়া।

ম্যাচ শেষে সব খেলোয়াড়ের গলায় মেডেল পরিয়ে দেওয়া হয়। একে একে সব পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। সবশেষে ফিফা প্রেসিডেন্টের হাত থেকে ফ্রান্সের অধিনায়ক হুগো লরিস নেন বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি। সতীর্থদের সঙ্গে নিয়ে সেটি উঁচিয়ে ধরেন। তখন স্টেডিয়ামে মুহুর্মুহু আতশবাজিতে সৃষ্টি হয় অপরূপ আবহ। বিপরীত ছিল চোখে পড়ার মতো। মঞ্চের এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লুকা মডরিচদের চোখের জল গড়িয়ে পড়ে। তাদের সঙ্গে হয়তো একাত্মতা ঘোষণা করে আকাশও বইয়ে দেয় বৃষ্টিধারা। সবাইকে ভিজিয়ে করে দেয় একাকার। সব রঙ এক করে দিয়ে সবাইকে যেন চার বছর পরের কাতার বিশ্বকাপের আগমনী বার্তা জানিয়ে দেয়।

মডরিচ-রাকিটিচকে বলা হয় ক্রোয়েশিয়ার নতুন সোনালি যুগের রাজা। তাদের হাত ধরে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলে ১৯৯১ সালে স্বাধীন হওয়া দেশটি। ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলে তৃতীয় হয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের আগে কোচ ড্যালিচ বলেছিলেন, সবকিছু দিয়ে লড়াই করবেন তারা। শিষ্যরা তার কথার ব্যত্যয় ঘটাননি। তবে ভাগ্যকে দোষারোপ করতে পারে। ম্যাচটিতে সবচেয়ে বেশি বল দখলে রাখা, বেশি পাস নেওয়া, মুহুর্মুহু আক্রমণ করেও জয়ের দেখা পায়নি। উল্টো আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ে। সেটি শোধ করতে পারলেও পেনাল্টি থেকে বাঁচতে পারেনি। শেষ দিকে পগবা আর এমবাপেকে আটকাতে পারেনি। ফলে বীরের মতো লড়াই করলেও হারতে হলো তাদের।

এ বিশ্বকাপে ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশমের কৌশলের কাছে সবাই হার মানল। প্রতিপক্ষকে বল রাখার সুযোগ দেন। উমতিতির নেতৃত্বাধীন রক্ষণভাগ চীনের মহাপ্রাচীরের মতো গড়ে তোলেন। গতিদানব কিলিয়েন এমবাপেকে দারুণ কাজে লাগান। মাঝ মাঠ থেকে পাওয়া বল নিয়ে দুরন্ত গতিতে আক্রমণ চালান ১৯ বছর বয়সী এ তারকা। আর সেট পিসে জাদু দেখান গ্রিজমান। তাতে আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ও বেলজিয়ামের পর ক্রোয়েশিয়াও পরাস্ত হলো।

এদিন খেলার ১৮ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে অসাধারণভাবে বল পাঠান গ্রিজমান। সেটি হেড করে ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেন ক্রোয়েশিয়ার মানজুকিচ। তবে বলটি জালে জড়িয়ে যায়। তার আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ১০ মিনিট পর পেরিসিচ গোলটি শোধ করে দেন। এবার ফ্রি-কিক থেকে বল পান মানজুকিচ। সেটি পেয়ে ভিদা এগিয়ে দেন পেরিসিচের দিকে। দুর্দান্ত শটে সেই বল জালে পাঠান এ তারকা।

খেলার ৩৪ মিনিটে ফের সেট পিস থেকে গোলের সুযোগ পায় ফ্রান্স। এবার কর্নার থেকে উড়ে আসা বল পেরিসিচের হাতে লাগে। ভিএআরের সহায়তায় পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। সেটি গোলে পরিণত করেন গ্রিজমান।

২-১ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও হাল ছাড়েনি ক্রোয়েশিয়া। বিরতির পরও সেটি বজায় থাকে। তবে খেলার ৫৯ মিনিটে এমবাপে বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন। তার পাস দেওয়া বল পান পগবা। এই মিডফিল্ডারের শট নেওয়া বলটি ডিফেন্ডার ভিদার গায়ে লেগে ফিরে যায়। পুনরায় বলটি শট নিয়ে জালে পাঠান পগবা।

খেলার ৬৫ মিনিটে ক্রোয়েশিয়ার কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন এমবাপে। হার্নান্দেজের পাস থেকে পাওয়া বল ২৫ গজ দূর থেকে শট নিয়ে জালে পাঠান এমবাপে। এবারের বিশ্বকাপে এটি তার চতুর্থ গোল। খেলার ৬৯ মিনিটে গোলরক্ষক হুগো লোরিসের ভুলে একটি গোল শোধ করে দেন মানজুকিচ। তাতে তাদের হার এড়ায়নি।

জমকালো সমাপনী অনুষ্ঠান : ফাইনালের আগে লুঝনিকি স্টেডিয়ামে নাচ-গানের জমকালো আয়োজনে হয় রাশিয়া বিশ্বকাপের সমাপনী অনুষ্ঠান। বিশ্বকাপের অফিসিয়াল থিম সং ‘লিভ ইট আপ’ গাইলেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গীতশিল্পী নিকি জ্যাম, হলিউডের অভিনেতা-র্যাপার উইল স্মিথ ও কসোভোর সঙ্গীতশিল্পী এরা ইস্ত্রেফি। ড্রাম বাজান ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী ফুটবল তারকা রোনালদিনিয়ো। বিশ্বকাপের ট্রফি নিয়ে আসেন জার্মানির সাবেক বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ফিলিম লাম। ছিল পারফরমারদের মনোহর ডিসপ্লেও।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads