• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
সেরা সাফল্যের পরও আফসোস

তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ধরাশায়ী করার পর বেলজিয়াম ফুটবল দলের উৎসব

ছবি : ইন্টারনেট

ফুটবল

সেরা সাফল্যের পরও আফসোস

  • স্পোর্টস ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১৬ জুলাই ২০১৮

শুরু থেকেই রাশিয়া বিশ্বকাপে বেহাল অবস্থা। প্রথম রাউন্ডে জার্মানি, দ্বিতীয় রাউন্ডে স্পেন ও আর্জেন্টিনা আর কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের বিদায়। অর্থাৎ সেমির আগে বিদায় নেয় প্রায় সব ফেভারিট। এবার বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের সুবর্ণ সুযোগ ছিল বেলজিয়ামের। কিন্তু সেমিতে ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নেয় তারা। আর ইংল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়ে তৃতীয় হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় হ্যাজার্ড-লুকাকুদের, যা নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা সাফল্য। এরপর এত কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে না পারার আফসোসে পুড়ছে দলটি। এই সুযোগ ভবিষ্যতে না পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে।

গুরুত্বহীন হলেও এই ম্যাচে শক্তিশালী একাদশ নামিয়েছিল দুই দল। রোমাঞ্চ ছড়ায় না এমন এক ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারায় বেলজিয়াম। ফলে তৃতীয় হয়ে বিশ্বকাপ থেকে অন্তত ২৪ মিলিয়ন ডলারের প্রাইজমানি পেয়েছে দলটি। আর চতুর্থ হওয়ায় ইংল্যান্ডের ঝুলিতে গেছে ২২ মিলিয়ন ডলার।

শুধু বেলজিয়াম নয়, এই ম্যাচে জেতার প্রয়োজন ছিল রোমেলু লুকাকুরও। রাশিয়া বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার হ্যারি কেনের সঙ্গে লড়াইয়ে ছিলেন ম্যানইউর এই স্ট্রাইকার। সর্বোচ্চ ৬টি গোল করে কেন ছিলেন শীর্ষে। আর চার গোল করে তালিকার পরের নামটি ছিল লুকালুর। কিন্তু তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে গোলের দেখা পাননি কেউ। ফলে কোনো হেরফের হয়নি সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকার।

ইংলিশদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান দখলে করে সমর্থকদের আফসোসটা আরো বাড়াল বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের এই দলটি। ব্রাজিলের মতো তারকা-নির্ভর ও শক্তিশালী দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়ে প্রত্যাশার পারদটা অনেক উঁচুতে নিয়ে গিয়েছিল হ্যাজার্ড-ডি ব্রুইনেরা। কিন্তু সেমিতে অনেক চেষ্টা করেও ভাঙতে পারেনি ফরাসিদের রক্ষণভাগ। না হলে গতকালের ফাইনালে তাদেরই দেখার আশা করেছিল অনেকে। শেষ পর্যন্ত সান্ত্বনার এক পুরস্কার নিয়ে ঘরে ফিরতে হলো।

সান্ত্বনা নয়তো কী! নকআউট পর্বের প্রতিটি ম্যাচেই জয়ের পর বাঁধাভাঙা উদযাপন ছিল নিয়মিত ব্যাপার। কিন্তু সেন্ট পিটার্সবার্গে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ শেষ হওয়ার পর এর ছিটেফোঁটাও ছিল না। মুটোবদ্ধ দুই হাত ঝাঁকিয়ে বেলজিয়ামের কোচ রবার্তো মার্টিনেজ এক সহকারীকে জড়িয়ে ধরেন, এই যা! খেলোয়াড়রা নিরুত্তাপ হাত মেলালেন, পুরো মাঠ ঘুরে সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে যান। ভাবটা এমন, তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ জেতার পর আবার উদযাপনের কী আছে! আবার হারলেই বা হতাশায় ভেঙে পড়ার কী আছে?

হতাশা যা, তা সেমিফাইনালেই পাওয়া শেষ। বিশ্বকাপ ফাইনালের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার পর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটা খেলতে কতটা আগ্রহ থাকবে ফুটবলারদের, সে নিয়ে কথা তো আর কম হয়নি! প্রতি চার বছর পর পরই হয়। তবে বেলজিয়ামের জন্য ম্যাচটা ছিল ইতিহাস গড়ার। বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বোচ্চ সাফল্য পাওয়ার। পেয়েছে বেলজিয়াম। এর আগে বিশ্বকাপে একবারই সেমিফাইনালে খেলেছিল তারা, ১৯৮৬ বিশ্বকাপে সেবার হয়েছিল চতুর্থ।

তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে গোল উৎসবের অপেক্ষায় যারা ছিলেন, তাদের অবশ্য একটু হতাশই হতে হয়েছে। ১৯৭৪ বিশ্বকাপের পর এই প্রথম কোনো তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে হয়েছে তিন গোলের কম। দুটি গোলই বেলজিয়াম পেয়েছে এই বিশ্বকাপে নিজেদের ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ফেলা পাল্টা আক্রমণে। ৪ মিনিটে মনিয়েরের পা থেকে আসে প্রথম গোলটি। নিজেদের গোলকিক থেকে চার পাসের পাল্টা আক্রমণে। তাতেও রেকর্ড। মনিয়ের এই বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের দশম ভিন্ন গোলদাতা। তাতে ১৯৮২ সালে ফ্রান্স ও ২০০৬ সালে ইতালির গড়া রেকর্ড ছুঁয়েছে বেলজিয়াম। ৮২ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি আসে হ্যাজার্ডের কল্যাণে। মাঝমাঠে বল দখলে নিয়ে কেভিন ডি ব্রুইনের দারুণ এক পাস থেকে বল পায় বেলজিয়াম অধিনায়ক। পরে নির্ভুল শটে ২-০ এর লিড পায় বেলজিয়াম।

দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমাণত্মক হয়ে ওঠা ইংল্যান্ড চেষ্টা কম করেনি। ৭০ মিনিটে এরিক ডায়ারের বুদ্ধিদীপ্ত চিপ গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন বেলজিয়ান ডিফেন্ডার টবি অলডারভেইরেল্ড। সে হিসাব অবশ্য বেলজিয়ামও করতে পারে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ডি ব্রুইনের থ্রু ধরে ইংলিশ গোলরক্ষক পিকহোর্ডকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন রোমেলু লুকাকু। যে গোলটা হলে তার গোল্ডেন বুট জয়ের সম্ভাবনা আরো একটু উসকে যেত।

ম্যাচটা তো ছিল হ্যারি কেন আর লুকাকুর গোল্ডেন বুটের লড়াইও। ওই মিসের ৪ মিনিট পর লুকাকুকে উঠিয়ে নেন বেলজিয়াম কোচ। আর হ্যারি কেন পুরো ম্যাচে মাঠে থাকলেও ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। দু’বার গোলের সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।

এ ম্যাচে আরো একবার নিজের জাত নিয়েছেন বেলজিয়ামের গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়া। প্রমাণ করেছেন কেন তাকে বলা হয় সময়ের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক। ইংল্যান্ডের সাতটি প্রচেষ্টা রুখে দেন তিনি। সব মিলিয়ে এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোল সেভ করার রেকর্ড তার দখলে। সাত ম্যাচে ২৭টি সেভ করেছেন কর্তোয়া। আর শেষ তিন ম্যাচে ২০টি সেভ করেন তিনি।

ব্যক্তিগত এবং দলীয়ভাবে সেরা নৈপুণ্য প্রদর্শন করেও আক্ষেপে পুড়ছেন বেলজিয়ামের ফুটবলাররা। সঙ্গে যোগ হয়েছে ফাইনালে খেলতে না পারার আফসোস।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads