• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
‘ভিশন ২০২২’ যখন প্রহসন!

ফুটবল একাডেমি উদ্বোধন করেও তা চালু রাখতে পারেন বাফুফে

সংরক্ষিত ছবি

ফুটবল

‘ভিশন ২০২২’ যখন প্রহসন!

  • রায়হানউদ্দিন রাসেল
  • প্রকাশিত ১৯ জুলাই ২০১৮

শেষ হয়েছে স্বপ্নের বিশ্বকাপ। ২০ বছর পর হারানো গৌরব উদ্ধার করেছে ফ্রান্স। দ্বিতীয়বার বিশ্বসেরা হওয়ার উৎসব এখনো করছে ফরাসিরা। ফেভারিটদের পেছনে ফেলে উত্থান ঘটেছে নতুন নতুন ফুটবল শক্তির। এজন্য ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে রাশিয়া বিশ্বকাপ। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবল স্বপ্ন, বিশ্বকাপ স্বপ্ন কবে পূরণ হবে তা কেউ জানে না। দেশের ফুটবলের যে বেহাল দশা তাতে ‘ভিশন টোয়েন্টি টু’ স্বপ্ন থাকছে প্রহসনের মধ্যেই।

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ কিংবা এসএ গেমসের ফাইনালে খেলা যেখানে স্বপ্ন, সেখানে বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন দেখা আর ছেঁড়া কাঁথার নিচে শুয়ে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখা একই কথা। কিন্তু গত চার বছর ধরে এই স্বপ্নটি দেখছেন বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। ২০১৪ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে কোনো এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘ভিশন টোয়েন্টি টু’। অর্থাৎ ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপে খেলার পরিকল্পনা নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। আবার রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার আগে পুরনো কথা মনে করিয়ে দেন তিনি। কিন্তু গত চার বছরেও নিতে পারেননি কোনো পরিকল্পনা। ফুটবল একাডেমি উদ্বোধন করেও তা চালু রাখতে পারেননি।

এদেশের মানুষের প্রাণের খেলা ফুটবল গত দশ বছর ধরে দিশাহীন। সবশেষ প্রকাশিত ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯৪তম। অথচ পাশের দেশ ভারত ৯৭তম স্থানে। এমনকি বাংলাদেশের আগে রয়েছে মালদ্বীপ (১৫০), নেপাল (১৬১) ও ভুটান (১৮৩)। একটু পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের র্যাঙ্কিং ছিল ১১০। ফুটবলের উন্নয়নে কার্যকর ও সঠিক কোনো পরিকল্পনা না থাকার কারণে বর্তমানে এই শোচনীয় অবস্থা।

দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নতুন খেলোয়াড় তৈরিতে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, উল্টো খেয়ালখুশি মতো একের পর এক কোচ বদল করেছে। গত কয়েক বছরের ফুটবল কার্যক্রম বিশ্লেষণে দেখা যায় মূলত ৯টি কারণে অবনতি ঘটেছে দেশের ফুটবলের- ১. তৃণমূল পর্যায়ে ফুটবলের দিকে নজর না দেওয়া, ২. ফুটবল একাডেমি না থাকা, ৩. মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে কোনো ফুটবল লিগ আয়োজন না করা, ৪. জেলা লিগ নিয়মিত না হওয়া, ৫. ফুটবলার তৈরিতে ক্লাবগুলোর অনীহা, ৬. বয়সভিত্তিক লিগ না হওয়া, ৭. সময় না দিয়ে যখন তখন কোচ বদল, ৮. দীর্ঘমেয়াদি সঠিক কর্মপরিকল্পনার অভার এবং ৯. খেলোয়াড়দের পরিশ্রম ও লড়াকু মানসিকতার অভাব।

ইউরোপে উন্নত ক্লাবগুলো ভালো খেলোয়াড় তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমাদের দেশের ক্লাবগুলো এ ব্যাপারে তেমন গুরুত্ব দেয় না। আবার ক্লাবের ওপর ফেডারেশনও কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না। একটা সময় মোহামেডান-আবাহনীর মতো ক্লাবকে ঘিরে ফুটবল মাঠে ছিল কত উন্মাদনা আর স্বপ্ন। বড়ই দুঃখের কথা, এদেশের খেলোয়াড়দের এখন আর সঠিকভাবে পরিচর্যা হয় না। ফুটবলে সেভাবে আসে না সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ ও পৃষ্ঠপোষকতা। যারা আসে একবারের বেশি বিনিয়োগ করার আগ্রহ দেখায় না।

এশিয়ার দেশ জাপান ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বকাপ জেতার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলছে। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপে। জাপান দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলেছে। শুধু তাই নয়, রাউন্ড অব সিক্সটিনে শক্তিশালী বেলজিয়ামের বিপক্ষে লড়াই করে শেষ মিনিটের গোলে ৩-২ ব্যবধানে হেরে যায়। এভাবে চললে লক্ষ্যের আগেই বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি ছুঁয়ে ফেলতে পারবে জাপান।

এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ফুটবলের উন্নয়নে নতুন নতুন সব পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। সেখানে বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ‘ভিশন টোয়েন্টি টু’ ঘোষণা দিয়েই শেষ করেছেন তার কাজ। ঘোষিত কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে মাথাব্যথা নেই বাফুফের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads