কবিরুল ইসলাম, ইন্দোনেশিয়া থেকে
জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন করা হয়েছিল এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত এশিয়ান গেমসের। ঠিক একইভাবে বিশাল আয়োজনের মধ্য দিয়ে পর্দা নামল ১৮তম এ গেমসের। গতকাল জাকার্তার গেলোরা বুনকার্নো মেইন স্টেডিয়ামে রাতের আঁধারে বিউগলের করুণ সুরে বিদায় জানানো হয় এবারের আসরকে। ১৯৬২ সালে প্রথমবার এশিয়ান গেমস আয়োজন করেছিল এশিয়ার দরিদ্র রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া। ৫৬ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজক হয়ে অতীতের সব আয়োজনকে পেছনে ফেলার একটা তাড়না ছিল ইন্দোনেশিয়া অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের। দেশটির দুটি শহর জাকার্তা ও পালেম্বাংয়ে আয়োজন করা হয় এবারের আসরটি। এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত এ ক্রীড়া মহাযজ্ঞকে ঘিরে ইন্দোনেশিয়ানরা মেতে উঠেছিলেন উৎসবে। বিশেষ করে জাকার্তা ও পালেম্বাংয়ের মানুষগুলো এশিয়ান গেমসকে কেন্দ্র করে অর্ধমাস জুড়ে মেতে উঠেছিলেন আনন্দে। গেমস শেষ হওয়ায় এখন তাদের মনে ভর করেছে বিষাদের কালো ছায়া। তবে এ কষ্টের মধ্যেও আনন্দ খুঁজে পাচ্ছেন ইন্দোনেশিয়ানরা। কারণ, পুরো আয়োজনটি শুরু থেকে শেষ অবধি সফলতার সঙ্গেই শেষ করতে পেরেছেন তারা।
‘এনার্জি অব এশিয়া’ স্লোগানকে সামনে রেখে গত ১৭ আগস্ট শুরু হয়েছিল এবারের এশিয়ার পদক লড়াই। ৪৫টি দেশের সাড়ে ১১ হাজার অ্যাথলেট ৪০টি ডিসিপ্লিনে মোট ৪৬৫টি ইভেন্টে স্বর্ণপদকের লড়াইয়ে অংশ নেন ১৮তম এ আসরের। জাকার্তা কনভেনশন সেন্টার (জেসিসি) স্পোর্টস অ্যারিনায় ছিল মূল আয়োজন। বিশেষ করে সাঁতার, অ্যাথলেটিকস, হকি, জুডো, রেসলিংয়ের মতো জনপ্রিয় ইভেন্টগুলো অনুষ্ঠিত হয় এখানে। পালেম্বাংয়েও বেশ কয়েকটি ইভেন্ট হয়। তবে উৎসবটা বেশি ছিল জেসিসিকে ঘিরে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ টিকেট কেটে সারা দিনের জন্য পরিবার-পরিজন নিয়ে চলে আসতেন খেলা দেখতে। শুধু খেলা দেখাই নয়, আগত দর্শকদের জন্য আয়োজকরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রেখেছিলেন প্রতিদিন। এক মঞ্চে পপসঙ্গীত, অন্যদিকের মঞ্চে চলত ঐতিহ্যবাহী নৃত্যানুষ্ঠান। দর্শকরা নিজেদের পছন্দমতো মঞ্চের সামনে চলে যেতেন। স্থানীয়রা লাখ লাখ রুপিয়া খরচ করে চলে আসতেন খেলা দেখতে। আজ থেকে আর দর্শকের পদচারণায় মুখরিত থাকবে না জেসিসি স্পোর্টস অ্যারিনা। রাস্তায়ও থাকবে না সাধারণ মানুষের ভিড়। দেশি-বিদেশি তারকা খেলোয়াড় আর পর্যটকদের এ মিলন মেলা ভেঙে যাওয়ায় বেদনা ভর করেছে সিজু হেলমি নামের ছাত্রের মনে, ‘আমার জন্মের পর এমন আয়োজন আর দেখিনি। প্রথমবারের মতো বিশাল এ আয়োজন দেখতে পেরে দারুণ আনন্দিত ছিলাম আমি। দিনগুলো যেন চোখের পলকে কেটে গেল। প্রতিদিন আসতাম খেলা দেখতে। সঙ্গে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা তো ছিলই। এখন আর জেসিসিতে আসা হবে না। হাজার লোকের ভিড় ঠেলে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করা হবে না। কথাগুলো মনে পড়তেই কষ্ট লাগছে। তবে আমরা এ কষ্টের মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাচ্ছি। কারণ, পুরো এশিয়া তথা বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে পেরেছি যে আমরাও পারি।’
এবারের গেমসকে সফল করতে প্রায় ৬ হাজার কর্মকর্তার সঙ্গে কাজ করেছেন প্রায় ১৩ হাজারের মতো ভলান্টিয়ার। যাদের কাজ ছিল অ্যাথলেট থেকে শুরু করে আগত দর্শকদের সহযোগিতা করা। এ কাজটি তারা করেছে বিনা পারিশ্রমিকে। অভিজ্ঞতা অর্জনের সঙ্গে দেশের সুনাম রক্ষা করাই ছিল ভলান্টিয়ারদের মূল লক্ষ্য। সদ্য এমবিবিএস কমপ্লিট করা ভিয়ানাও ছিলেন ভলান্টিয়ারদের দলে। তিনি বলেন, ‘আমরা গেমস শুরু হওয়ার প্রায় মাস দুয়েক আগেই কাজ শুরু করি। আমাদের বিভিন্ন ট্রেনিং করানো হয়েছিল। প্রতিদিন আমরা সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করেছি। কোনো ক্লান্তি ভর করেনি মনে। আগামীকাল (আজ) থেকে আর এভাবে কাজ করা হবে না- ভাবতেই খারাপ লাগছে। বলতে পারেন বিষাদের কালো ছায়া নেমে এসেছে মনে। তবুও এ কষ্টকে মেনে নিয়ে আগামীতে আরো আয়োজনের স্বপ্ন দেখছি আমরা।’