• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ফুটবলে ফিরছে সুদিন

লাল-সবুজের পতাকা হাতে নানা সাজে সমর্থন জানাচ্ছেন জাতীয় দলকে

সংগৃহীত ছবি

ফুটবল

ফুটবলে ফিরছে সুদিন

  • স্পোর্টস রিপোর্টার
  • প্রকাশিত ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নব্বই দশকের শেষদিকেও স্টেডিয়াম ভর্তি থাকত দর্শকে। সমর্থকদের চাপ সামলাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়মিত বেগ পোহাতে হতো। ঘরোয়া কিংবা আন্তর্জাতিক ফুটবল- কোনো ম্যাচেই গ্যালারি ফাঁকা থাকত না। নিয়মিত মারামারি হতো টিকেটের জন্য। নিজ নিজ দলের জয়-পরাজয় নিয়েও সংঘর্ষে লিপ্ত হতেন সমর্থকরা। মাঝেমধ্যে স্টেডিয়ামের বাইরের সেই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ত ঢাকা শহরের পাড়া-মহল্লায়। ফুটবল নিয়ে সেই উন্মাদনা শেষ হয়ে গেছে একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই। দর্শক বিমুখ হয়ে পড়েন। স্টেডিয়ামে যেনো আসাটাই বৃথা মনে করতেন। জাতীয় দলের ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন সমর্থকরা। অবশেষে সুদিন ফিরতে শুরু করেছে বাংলাদেশের ফুটবলে। মাঠেও আসতে শুরু করেছেন দর্শকরা। লাল-সবুজের পতাকা হাতে নানা সাজে গ্যালারিতে উপস্থিত হয়ে সমর্থন জানাচ্ছেন জাতীয় দলকে। চলতি সাফ সুজুকি কাপে গ্রুপপর্বে টানা দুই জয়ের পর স্টেডিয়ামে দর্শকদের ভিড় বাড়ছে ক্রমাগত।

সবশেষ ২০১৬ সালের অক্টোবরে এশিয়ান কাপের প্রাক-বাছাইয়ের ম্যাচে স্বাগতিক ভুটানের কাছে ৩-১ গোলে নাস্তানাবুদ হয়েছিল বাংলাদেশ। ভুটানের কাছে এমন পরাজয়ের পর ১৭ মাস আন্তর্জাতিক ফুটবলের বাইরে থাকতে হয় লাল-সবুজদের। এরপর বেশ কয়েকটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচে অংশ নিয়ে নিজেদের উন্নতিটা পরখ করেছিল বাংলাদেশ। তবে ফুটবলারদের ওপর আস্থা ফিরে আসে সদ্য সমাপ্ত এশিয়ান গেমসে। সেখানে কাতারের মতো শক্তিশালী দলকে ১-০ গোলে হারানোর পরই যেনো নতুন করে জেগে ওঠে দেশের ফুটবল। প্রথমবারের মতো এশিয়ান গেমসের গ্রুপপর্বের বাধা টপকে জায়গা করে নেয় দ্বিতীয় রাউন্ডে। তবে সে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল অনূর্ধ্ব-২৩ দল। কিন্তু সিনিয়র চার ফুটবলার ছিলেন এশিয়ান গেমসের দলে। অনূর্ধ্ব-২৩ দলের সেই সফলতার পরই ঘরের মাটিতে শুরু হওয়া সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দলকে সমর্থন জানাতে দল বেঁধে মাঠে ছুটে আসেন সমর্থকরা।

দর্শকদেরও নিরাশ করেননি জামাল-মামুনুল-সুফিলরা। প্রথম ম্যাচে অঘোষিত শত্রুতে পরিণত হওয়া ভুটানকে ২-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচেও জয়ের মুখ দেখে স্বাগতিকরা। চিরশত্রু পাকিস্তানকে হারায় ১-০ গোলে। টানা দুই জয়ের পর জাতীয় দলের ওপর আস্থাটা পুরোপুরি ফিরে পান সমর্থকরা। আন্তর্জাতিক এ টুর্নামেন্টকে ঘিরে প্রতিদিনই (বাংলাদেশের খেলার দিন) স্টেডিয়ামে দর্শকদের ঢল দেখা যায়। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের ম্যাচের দিন ছিল গ্যালারিভর্তি দর্শক। অনেকে আবার টিকেট না পেয়ে ফিরে গেছেন হতাশ হয়ে। কালোবাজারিতে টিকেটের ব্যবসাটা এখন বেশ রমরমা। ৫০ টাকার টিকেট বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। আর ভিআইপি টিকেট বিক্রি হচ্ছে গায়ের মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে। তবুও যেনো আপত্তি নেই কারো। প্রিয় দলের খেলা দেখতে প্রতি ম্যাচেই অতিরিক্ত মূল্যে টিকেট কিনে মাঠে প্রবেশ করছেন। এত দর্শক সমাগম দেখে কে বলবে বাংলাদেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে? জাতীয় পতাকা হাতে মাঠে আসা নবীন নামের এক কলেজছাত্র বলেন, ‘জাতীয় দল এখন বেশ ভালো খেলছে। মাঠে এসে দলকে সমর্থন জানানোটা আমাদের দায়িত্ব। আগের সেই বাংলাদেশ এখন আর নেই। খেলায় দারুণ উন্নতি হয়েছে। বন্ধুদের সঙ্গে সুদূর নরসিংদী থেকে ছুটে এসেছি।’ নবীনের মতো এমন অনেকেই এসেছেন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে। তাদের সব সমর্থন সার্থক হবে চলতি এ আসরের শিরোপা জয় করতে পারলে।

উল্লেখ্য, তৃতীয়বারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ আসরের আয়োজক হলো বাংলাদেশে। এর আগে ২০০৩ ও ২০০৯ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এ টুর্নামেন্ট। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আর ২০০৯ সালে সেমিফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই হয়তো বাংলাদেশ আবারো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads