জাদুকরি ফুটবলে ম্যাচের শুরুতেই গোল আদায় করে নিলেন লিওনেল মেসি। খানিক বাদে প্রতিপক্ষের ভুলে যেন উপহার পেলেন আরেকটি। আর দ্বিতীয়ার্ধে অসাধারণ এক গোলে সব অনিশ্চয়তার ইতি টানলেন ফিলিপে কুতিনহো। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে উঠল বার্সেলোনা। ক্যাম্প ন্যুয়ে মঙ্গলবার রাতে শেষ আটের ফিরতি পর্বে ৩-০ গোলে জিতে এরনেস্তো ভালভারদের দল। দুই লেগ মিলিয়ে ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে শেষ চারের টিকেট পায় পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা। গত বুধবার প্রথম লেগে ১-০ গোলে জিতেছিল তারা।
চলতি মৌসুমে ঘরের চেয়ে প্রতিপক্ষের মাঠে বেশি সফল ইউনাইটেড। আগের রাউন্ডে পিএসজির মাঠে লিখেছিল ঘুরে দাঁড়ানোর দুর্দান্ত এক গল্প। আগের তিন আসরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়া বার্সেলোনাকে ক্যাম্প ন্যুয়ে শুরুতেই চেপে ধরেছিল ইংলিশ দলটি।
প্রথম মিনিটেই এসেছিল সুযোগ। রক্ষণ ভেঙে ডি-বক্সে ঢুকে মার্কাস রাশফোর্ডের চিপ শট ক্রসবারে ছোঁয়া লেগে চলে যায় বাইরে। পরের ১০ মিনিটে বার্সেলোনার রক্ষণে প্রবল চাপ তৈরি করে অতিথিরা।
চতুর্থ মিনিটে রক্ষণের দুর্বলতায় বার্সেলোনার ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন জেসি লিনগার্ড। এ যাত্রায় শেষ মুহূর্তে বিপদমুক্ত করেন গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে স্টের স্টেগেন।
১০ মিনিটে ইউনাইটেড ডি-বক্সে ফ্রেডের পায়ে লেগে ইভান রাকিটিচ পড়ে গেলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। তবে পরে ভিএআরের সাহায্যে সিদ্ধান্ত পাল্টান তিনি।
অসংখ্য বিপদ থেকে বার্সেলোনাকে বাঁচানো মেসিই আবার ত্রাতা। চার মিনিটের ব্যবধানে দু’বার বল জালে পাঠিয়ে অধিনায়ক থামান ইউনাইটেডের দাপট। জোড়া গোলে এই টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে নিজের ছয় বছরের গোলখরা কাটান মেসি।
১৬ মিনিটে ডান দিকে মিডফিল্ডার অ্যাশলে ইয়ংয়ের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে একজনকে কাটিয়ে কিছুটা আড়াআড়ি এগিয়ে বাঁ পায়ের ট্রেডমার্ক শটে পোস্ট ঘেঁষে জাল খুঁজে নেন আর্জেন্টাইন তারকা।
গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়ার অবিশ্বাস্য ভুলে দ্বিতীয় গোল পায় বার্সেলোনা। নিজেদের সীমানায় ফ্রেড বল হারালে তা ধরে খানিকটা এগিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের দুর্বল শট নেন মেসি। তাতে তেমন কোনো বিপদের শঙ্কা ছিল না। কিন্তু বল স্পেনের ডি গিয়ার হাতের নিচ দিয়ে চলে যায় গোললাইন পেরিয়ে।
আসরে মেসির এটি সর্বোচ্চ দশম ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ইতিহাসে ১১০তম গোল। চলতি মৌসুমে সব মিলিয়ে ৪৫ গোল করলেন মেসি।
বিরতির ঠিক আগে আবারো মেসি জাদু। মাঝমাঠে প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে ছুটলেন। দুজনকে কাটিয়ে ডি-বক্সে জর্ডি আলবাকে দিলেন পাস। আর স্প্যানিশ এই ডিফেন্ডারের দূরের পোস্টে বাড়ানো ক্রসে সার্জি রবের্তোর নেওয়া শট ডি গিয়ার মুখে লাগলে সে যাত্রায় কোনোমতে রক্ষা পায় অতিথিরা।
৬১ মিনিটে কুতিনহোর দুর্দান্ত গোলে শেষ চারের টিকেট প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় স্বাগতিকদের। মাঝমাঠ থেকে মেসির ক্রস পেয়ে আলবা কাটব্যাক করেন। আর বল ধরে কয়েক পা এগিয়ে ডান পায়ের দূরপাল্লার বাঁকানো শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার।
নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে অ্যালেক্সিস সানচেজের হেড টের স্টেগেন ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দিলে বড় ব্যবধানে হার নিয়ে ফেরে ইউনাইটেড।
ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতায় তাদের বিপক্ষে টানা চতুর্থ জয়ের আনন্দে মাঠ ছাড়ে বার্সেলোনা। সেই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কোয়ার্টার ফাইনালের গেরো কাটে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের।
