গত ২৬টি বছর কোনো শিরোপা নেই। একটি শিরোপার আশায় ভুবুক্ষ হয়ে রয়েছে আর্জেন্টিনার ফুটবল সমর্থকরা। সময়ের সেরা, কারো কারো মতে সর্বকালের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি থাকার পরও ট্রফি ক্যাবিনেটে একটি শিরোপা তুলতে পারল না ডিয়েগো ম্যারাডোনার দেশ আর্জেন্টিনা। বেলো হরিজন্তের স্টাডিও মিনেইরোয় বাংলাদেশ সময় আগামীকাল বুধবার ভোর ৬টায় চলতি কোপা আমেরিকা আসরের প্রথম সেমিফাইনালে স্বাগতিক ব্রাজিলের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। লাতিন আমেরিকা তথা বিশ্ব ফুটবলের দুই পাওয়ার হাউসের ম্যাচটি ঘিরে দৃষ্টি এখন ক্রীড়ামোদীদের।

আর্জেন্টিনার হতাশাটা আরো বাড়ে, টানা তিনটি বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেও তাদের শিরোপার নাগাল পাওয়ায়। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালের পর ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি লিওনেল মেসির দল।

২০১৮ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে। এবার আবারো কোপা আমেরিকা। ব্রাজিলে চলমান এই আসরের শুরু থেকেই খুবই বাজে অবস্থা আর্জেন্টিনার। কলম্বিয়ার কাছে হেরে শুরু। এরপর প্যারাগুয়ের সঙ্গে করেছে ড্র। শেষ ম্যাচে এশিয়া থেকে আমন্ত্রিত প্রতিনিধি কাতারকে হারিয়ে কোনোমতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে লিওনেল মেসির দল।

কোয়ার্টার ফাইনালে ভেনিজুয়েলাকে ২-০ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে লা আলবিসেলেস্তেরা। কিন্তু সেমিতেই সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি আর্জেন্টিনা। স্বাগতিক ব্রাজিলের সামনেই পড়তে হয়েছে তাদের।

দুই বিশ্বসেরার মুখোমুখিতে কে জিতবে? নিশ্চিত অর্থেই দুইভাগ হয়ে পড়েছে পুরো ফুটবল বিশ্ব। কথার খই ফুটছে দুই দেশের সমর্থকদের মুখে। কোথাও কোথাও বিরোধপূর্ণ অবস্থাও তৈরি হয় কিংবা হাতাহাতি পর্যন্ত লেগে যায় দুই দেশের সমর্থকদের মধ্যে। যদিও দিন শেষে ৯০ মিনিটের একটি লড়াই এবং অবধারিতভাবে একদল জিতবে এবং একদলকে হারতেই হবে। জয়-পরাজয় নির্ধারণ না হলে টাইব্রেকারের মাধ্যমে হলেও নির্ধারণ করা হবে।

কিন্তু যে আর্জেন্টিনা গ্রুপ পর্বে রীতিমতো ধুঁকছিল, তারাই কিনা টানা তৃতীয়বারের মতো কোপা আমেরিকার ফাইনালের সামনে দাঁড়িয়ে। ম্যাচ যত যাচ্ছে, আর্জেন্টিনা তত ধারাল হচ্ছে। ভেনিজুয়েলার বিপক্ষেই দেখা গেছে সেটা। ২-০ গোলে লিওনেল মেসিরা হারিয়েছেন মহাদেশীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের। ওই ম্যাচেই বোঝা গেছে, লা আলবিসেলেস্তেরা কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন।

ভেনিজুয়েলাকে হারানোর পর লিওনেল মেসি মুখ ফুটে বললেন, এখন পর্যন্ত নিজের সেরাটা খেলতে পারেননি। নিজের সেরা কোপা আমেরিকা এখনো হচ্ছে না বলে হতাশাও প্রকাশ করলেন মেসি।

ভেনিজুয়েলার বিপক্ষে ম্যাচের পর তিনি বললেন, ‘এটা এখনো আমার সেরা কোপা আমেরিকা হতে পারেনি।’ মেসির কথায় বোঝা যাচ্ছে, এখনো তার সেরা খেলাটা খেলতে বাকি। সেই সেরাটা কি তবে খেলবেন ব্রাজিলের বিপক্ষেই?

ব্রাজিলকে কি তবে আরেকটি মিনেইরেজ্জো লজ্জা উপহার দেবেন লিওনেল মেসিরা? এই সেই মিনেইরো স্টেডিয়াম, যেখানে ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ব্রাজিলকে জার্মানি ৭ গোল দিয়েছিল। ৭-১ গোলের সেই লজ্জায় ডোবা ব্রাজিল এখন পর্যন্ত কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি আন্তর্জাতিক ফুটবলে।

চির প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে কোনোভাবে এবার যদি আর্জেন্টিনা হারিয়ে দিয়ে উঠে যেতে পারে কোপা আমেরিকার ফাইনালে, তাহলে বলেই দেওয়া যায়, সম্ভবত এবার আর ট্রফি মিস হচ্ছে না। ২৬ বছরের খরা কাটিয়ে হয়তো ট্রফি ক্যাবিনেটে শোভা পাবে আরো একটি শিরোপা। গ্রহের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসিরও কাটবে অন্তত একটি শিরোপা জয়ের আক্ষেপ।

তার আগে ব্রাজিলকে হারাতে হবে। তাতে হয়তো ফাইনালে দেখা হয়ে যেতে পারে চিলির সঙ্গে। যাদের কাছে আগের দুই আসরের ফাইনালে হারতে হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। কারণ, অপর সেমিফাইনালে যে মুখোমুখি চিলি-পেরু। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত চমক দেখানো দল পেরু কি পারবে চিলিকে হারিয়ে ফাইনালে উঠতে? পারলে তো সেটা হবে সবচেয়ে বড় চমক। না পারলে আবারো ফাইনালে উঠবে চিলি।

তবে ব্রাজিলের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে মাঠ নিয়ে অভিযোগ মেসির। তিনি বলেন, ‘মাঠ সত্যিই আমাদের জন্য খুব কঠিন। মাঠের অবস্থা ভালো ফুটবল খেলার জন্য উপযোগী নয়। প্রতিটি মাঠের অবস্থাই খুব খারাপ।’

মেসি বিশ্বাস করেন, তার দলের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হচ্ছে প্রেসিং ফুটবল এবং কাউন্টার অ্যাটাক। তিনি বলেন, ‘আমরা ডিফেন্সে কোনো জায়গাই ছেড়ে দিচ্ছি না প্রতিপক্ষকে। আমরা সব সময়ই গোলের খুব কাছাকাছি থাকছি। একই সঙ্গে আমরা সব সময়ই সুযোগ খুঁজি কাউন্টার অ্যাটাকে কীভাবে দ্রুততার সঙ্গে ফাঁক-ফোকর বের করা যায়।’