• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
আবাহনীর সামনে কোরীয় ক্লাব 

ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের লোগো

ফাইল ছবি

ফুটবল

আবাহনীর সামনে কোরীয় ক্লাব 

  • স্পোর্টস রিপোর্টার
  • প্রকাশিত ০৩ জুলাই ২০১৯

বাংলাদেশের ফুটবলকে বহুদিন পর গৌরবময় অবস্থানে নিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। এএফসি কাপের সেরা আটে পৌঁছেছে বাংলাদেশে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপাধারী এ দলটি। আন্তঃআঞ্চলিক সেমিফাইনালে আবাহনীর প্রতিপক্ষ উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ ক্লাব। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে ম্যাচ দুটি অনুষ্ঠিত হবে আগস্টে।

এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ স্পোর্টস ক্লাব, সংক্ষেপে ৪.২৫ এসসি নামেই পরিচিত উত্তর কোরিয়ার এ ক্লাবটি। এএফসি কাপের নকআউট পর্বে এই ক্লাবটিকেই পেয়েছে বাংলাদেশের ক্লাব আবাহনী। গতকাল মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে হয়েছে এএফসি কাপের নকআউট পর্বের ড্র।

এর আগে আবাহনী ‘ই’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথমবারের মতো এএফসি কাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে ইতিহাস গড়েছে। নকআউট পর্বে প্রতিপক্ষ কারা হয়, সেটাই ছিল দেখার। প্রথমবারের মতো এএফসি কাপের দ্বিতীয় পর্ব বা আন্তঃআঞ্চলিক সেমিফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে আবাহনী লিমিটেড। সেখানে আবাহনীর প্রতিপক্ষ কারা হচ্ছে, তা জানার অপেক্ষাতেই ছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। সেটা চূড়ান্ত হয়েছে। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে আগামী ২১ আগস্ট ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে প্রথম লেগ ম্যাচটি। ফিরতি লেগ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ২৮ আগস্ট উত্তর কোরিয়ায়।

এত দিন এএফসি কাপে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে একক রাজত্ব ছিল ভারতীয় ক্লাব বেঙ্গালুরু এএফসির। ২০১৭ সাল থেকে এই অঞ্চলের ক্লাবগুলোকে এএফসি কাপের প্রথম পর্বে নিজেদের মধ্যে খেলার সুযোগ করে দেয় এশিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা। প্রথম দুবারই চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল বেঙ্গালুরু। এবারই ভারতের দুই ক্লাবকে পেছনে ফেলে তাদের রাজত্ব দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশের আবাহনী। ৬ ম্যাচে ৪ জয় ও ১ ড্রয়ের বিপরীতে একটি ম্যাচ হেরে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিনিধিরা।

এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ ক্লাবের পারফরম্যান্স ছিল আরো দুর্দান্ত। ৬ ম্যাচে ৫ জয়ের বিপরীতে তারা ম্যাচ হেরেছে মাত্র একটি। ঘরোয়া লিগে ১১ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া কোরিয়ান ক্লাবটিতে নেই কোনো বিদেশি খেলোয়াড়। প্রথম পর্বে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬ গোল করেছেন স্ট্রাইকার কিম ইউ সং।

এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ বাংলাদেশের ফুটবলে খুব অপরিচিত প্রতিপক্ষ নয়। এই দলটির বিপক্ষে অতীতে জয়ের রেকর্ড আছে। ১৯৮৮ সালে সে সময়ের এশিয়ান ক্লাব কাপ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনাল পর্বে এই এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। মালয়েশিয়ার পাহাংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ম্যাচটি। মোহামেডানই ১৯৯০ এশিয়ান ক্লাব কাপের চূড়ান্ত পর্বে গোলশূন্য ড্র করেছিল উত্তর কোরীয় ক্লাবটির সঙ্গে। ১৯৯১ সালের জুলাইয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত পর্বে এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ তৃতীয় হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার ওই ক্লাবকে পেয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ৬ বারের চ্যাম্পিয়নরা। এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ স্পোর্টস ক্লাবটি উত্তর কোরিয়ার ঘরোয়া ফুটবলে অন্যতম সেরা দল।

এর আগে, দারুণ খেলে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) কাপের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের গ্রুপপর্ব পার হয় আবাহনী। তারা গ্রুপের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক ভারতের মিনেরভা পাঞ্জাবকে হারিয়ে দ্বিতীয় পর্বে উঠে যায় বাংলাদেশের  চ্যাম্পিয়নরা। গুয়াহাটির ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে ‘ই’ গ্রুপের নিজেদের শেষ ম্যাচে মিনেরভাকে ১-০ গোলে হারায় আবাহনী। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের তৃতীয় সারির টুর্নামেন্ট প্রেসিডেন্টস কাপে ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত খেলা পাঁচ আসরে গ্রুপপর্ব পেরুতে পারেনি আবাহনী। এরপর ২০১৭ ও ২০১৮ সালে খেলা এএফসি কাপেও একই অবস্থা ছিল তাদের।

অ্যাওয়ে ম্যাচে মানাং মারশিয়াংদি ক্লাবের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের গ্রুপপর্বের মিশন শুরু আবাহনীর। পরের ম্যাচে ঘরের মাঠে মিনারভা পাঞ্জাবের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে জনপ্রিয় দল আবাহনী। তৃতীয় ম্যাচে আহমেদাবাদে চেন্নাইয়ানের বিপক্ষে দুর্দান্ত ফুটবল খেললেও ভাগ্যবিড়ম্বিত আবাহনী ১-০ গোলে হেরে ফিরেছে। এর পর আবাহনী ফিরতি পর্বে ৩-২ গোলে চেন্নাইয়ানের বিপক্ষে জয় পায়। আবাহনী হোম ম্যাচে ৫-০ গোলের বড় জয় পায় মানাং মারশিয়াংদির বিরুদ্ধে।

কোচ মারিও লেমোসের তত্ত্বাবধানে আবাহনী যে দারুণ উন্নতি করেছে, এএফসি কাপের নকআউট পর্বে উঠায় সেটাই প্রমাণ হলো। ঐতিহ্যবাহী দল ঢাকা আবাহনী এখন ফুটবলের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। একবার অপর ঐতিহ্যবাহী দল ঢাকা মোহামেডান এশিয়ান ক্লাব পর্যায়ে শেষ আটে উঠে মহাদেশের সেরা দলের কাতারে চলে গিয়েছিল। সেসব সাফল্য এখন অনেকটাই ইতিহাস হয়ে আছে। নতুন করে সাফল্য দেখা যাচ্ছে না। উল্টো জাতীয় দলভিত্তিক হোক কিংবা ক্লাবভিত্তিক হোক, আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের অবস্থান নাই বললেই চলে। এমন অবস্থায় ঢাকা আবাহনীর এবারের অর্জন নতুন করে স্বপ্ন দেখাবে বাংলাদেশের ফুটবলমোদীদের।

পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোসের সুদক্ষ কোচিংয়ে আবাহনী এখন এশিয়ার অন্যতম সেরা দলে পরিণত হতে চলেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads