• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ড্র নয়, বড় জয়ই আসত

সংগৃহীত ছবি

ফুটবল

ড্র নয়, বড় জয়ই আসত

  • স্পোর্টস ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১৭ অক্টোবর ২০১৯

সবই ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। বিশ্ব ফুটবল র্যাংকিংয়ে ভারতের তুলনায় ৮৩ ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশ। কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ভারত। ভারতের প্রায় ৭০ হাজার দর্শকের বিপরীতে বাংলাদেশের দর্শক মাত্র কয়েকশ। ম্যাচের রেফারি বাংলাদেশকে বঞ্চিত করেন দুটি নিশ্চিত পেনাল্টি থেকে, কয়েকবারই উল্টো ফাউলের বাঁশি বাজান তিনি। ভাগ্য ভালো না থাকায় বাংলাদেশের একটি আক্রমণ থেকে বল ভারতের বারে লেগে প্রতিহত হয়। বাংলাদেশের আরো একটি নিশ্চিত গোল ভারতের রক্ষণভাগের জনৈক খেলোয়াড় লাইন থেকে ফিরিয়ে দেন। এত কিছু একসঙ্গে বাংলাদেশের বিপক্ষে না থাকলে শুধু জয়ই নয়, বড় ব্যবধানে জিততে পারত। কিন্তু রেকর্ডে লেখা থাকবে, ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর কলকাতায় অনুষ্ঠিত ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপ ও ২০২৩ সালের এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে ‘ই’ গ্রুপে দুই দলের ম্যাচটি ১-১ ড্র হয়েছে।

জামাল ভুঁইয়ারা প্রমাণ করলেন ফুটবলে বাংলাদেশ হারিয়ে যায়নি। নতুন করে আন্তর্জাতিক ফুটবলে আলোর রেখা দেখা গেল তাদের অসামান্য নৈপুণ্যে। ভারতের ভাগ্য ভালো যে, তারা নিশ্চিত হার থেকে রক্ষা পেয়েছে। বাংলাদেশের ফুটবলাররা আরো প্রমাণ করলেন, বিশ্ব র‍্যাংকিংই বড় কথা নয়। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে মাঠে নামলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ভালো ফলাফল করতে সক্ষম হবে।

আনন্দিত-হতাশ জেমি ডে : শক্তিশালী ভারতের মাঠ থেকে পয়েন্ট নিয়ে ফেরার আনন্দ আছে জেমি ডের। তবে শেষ দিকে গোল খেয়ে জয়বঞ্চিত হওয়ায় হতাশাও আছে বাংলাদেশ কোচের। ম্যাচ শেষে শিষ্যদের প্রশংসা করলেও হাতছাড়া হওয়া সুযোগ নিয়ে হতাশার কথা জানান বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে। ‘ভারতের বিপক্ষে আমরা দুর্দান্ত খেলেছি। ছেলেরা ভালোভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে এবং প্রথমার্ধে এগিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে কয়েকটা ভালো সুযোগ তৈরি করেছিল। শেষ মুহূর্তে গোল খাওয়ায় আমিও হতাশ। কেননা তিন পয়েন্ট পাওয়ার জন্য আমরা যথেষ্ঠ করেছিলাম। যদি পেছনে ফিরে বলি, ভারতে এসে ৭০ হাজার দর্শকের সামনে আমরা জয়ের আশা করিনি। পরিবেশ ছিল চমৎকার এবং আমি সত্যিই ছেলেদের আজকের রাতের পারফরম্যান্সে গর্বিত। আমরা ভারতের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে ৮৫ ধাপ (আসলে ৮৩ ধাপ) পিছিয়ে। তাদের মাঠে এত দর্শকের সামনে ড্র নিয়ে ফেরা চমৎকার ব্যাপার। কিন্তু তিন পয়েন্ট না পাওয়ায় হতাশ। ম্যাচে সাত মিনিট বাকি থাকতে সেট পিস থেকে গোল খেয়ে আমি হতাশ। হতাশ আমরা দ্বিতীয়ার্ধে দুটি গোল বঞ্চিত হওয়ার কারণেও। একটা সেভ হলো গোললাইন থেকে, অন্যটা ক্রসবারে লাগল। অবশ্য আমরাও গোললাইন থেকে একটা সেভ করেছি। সব মিলিয়ে বলল, ড্র ম্যাচের সঠিক ফল।’

আশরাফুলকে ম্যাচসেরা বললেন স্টিমাচ : বাংলাদেশের বিপক্ষে ড্রয়ের পর খুব বেশি সন্তুষ্ট দেখা গেল না ভারতকে। দলটির কোচ থেকে শুরু করে অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী হতাশা জানিয়েছেন ম্যাচের পর। তবে বাংলাদেশের গোলরক্ষককে নিয়ে প্রশংসা ঝরেছে ভারতের কোচ ইগর স্টিমাচের কণ্ঠে। ভারত বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করলেও তা প্রতিহত হয়েছে বাংলাদেশের গোলকিপার আশরাফুল ইসলাম রানার অসাধারণ নৈপুণ্যে। ম্যাচের পর রানার পারফরম্যান্সে মুগ্ধ স্টিমাচ বললেন, ‘দর্শকরা খেলা উপভোগ করেছেন। আমরা খুশি নই। প্রচুর সুযোগ তৈরি হয়েছে কিন্তু আমরা গোল করতে পারিনি। আমার মতে বাংলাদেশের গোলকিপারই ম্যাচসেরা।’ ভারতের কোচ অবশ্য আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে নিয়ে। ম্যাচশেষে তিনি জানান, ‘জানতাম ওরা ৯ জন মিলে রক্ষণ সামলাবে। গোল করা কঠিন হবে এটা বলে দিয়েছিলাম। প্রথমার্ধে আমরা আগ্রাসী ছিলাম না। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ভুল শুধরে নিলেও সুযোগ নষ্ট করেছি।’ টুইটারে হতাশা জানিয়েছেন ভারতের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীও, ‘সল্টলেকে যে আবহ ছিল সেখানে আমরা তেমন কোনো পারফরম্যান্স উপহার দিতে পারিনি। পুরো ড্রেসিং রুমই হতাশ ছিল। যে সুযোগগুলো পেয়েছি তা কাজে লাগাতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’

সাদ বললেন গোলটি স্মরণীয় থাকবে : সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে সিলেটের সেই ফাইনালে টাইব্রেকারে গোল পেয়েছিলেন সাদ উদ্দিন। চার বছর আগে টাইব্রেকারে যে ভারতের সঙ্গে গোল করেছিলেন, তাদের বিপক্ষে মঙ্গলবার বিশ্বকাপ বাছাইতেও গোলের দেখা পেলেন অসাধারণ দক্ষতায়। ম্যাচের ৪২ মিনিটে জামাল ভুঁইয়ার ফ্রি-কিকে গোলকিপার গুরপ্রীত সিং পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে ফ্লাইট মিস করেছিলেন। এরপর সাদ উদ্দিনের দুর্দান্ত হেডে বল জড়ায় জালে। সাদ বলেন, ‘ভারত আমাদের চেয়ে র্যাংকিংয়ে বেশ এগিয়ে। তাদের বিপক্ষে এক পয়েন্ট পাওয়াটাও বড় সাফল্য। তবে আমরা যদি তিন পয়েন্ট পেতাম তাহলে অনেক ভালো লাগত। কিন্তু তারপরেও কোনো আক্ষেপ নেই। পয়েন্ট নিয়ে দেশে ফিরে আসতে পারছি, এটাই বড় কথা। কোচ আমাকে যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানে খেলিয়েছেন। আমি তার আস্থার প্রতিদান দিয়েছি। এত দর্শকের সামনে আগে খেলিনি। তবে কোনো চাপ নেইনি। কোচ বলেছে ম্যাচটি উপভোগ করতে। নিজের সেরাটুকু দিতে। সবাই মিলে সেটাই করেছি। আর আমার জাতীয় দলের ক্যারিয়ারে এই প্রথম গোল প্রাপ্তি। কলকাতার এই মাঠে এত দর্শকের সামনে গোলটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads