• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
ইংলিশ ফুটবলে ‘ব্রেক্সিট প্রভাব’

প্রতীকী ছবি

ফুটবল

ইংলিশ ফুটবলে ‘ব্রেক্সিট প্রভাব’

  • স্পোর্টস ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯

আর মাত্র ৪৩ দিন পর ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ছাড়বে গ্রেট ব্রিটেন। বিশেষজ্ঞরা ব্রিটেনের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়াটিকে বলছেন ‘ব্রেক্সিট’। এই ইস্যুটি যেমন গ্রেট ব্রিটেনের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রভাব ফেলবে ঠিক সেভাবেই এই ইস্যুটি থেকে বাদ পড়বে না ইংল্যান্ডের ফুটবলও। আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে বলতে হবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এই ‘ব্রেক্সিট’র প্রভাব পড়বে বিস্তর ভাবেই।

সম্প্রতি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ ‘ব্রেক্সিট’র প্রভাবে কতটুকু লাভবান কিংবা ক্ষতির মুখে পড়বে ইংলিশ ফুটবল তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছে। সেখানে অবশ্য দেখানো হচ্ছে ক্ষতির তুলনায় এই ইস্যুতে লাভটাই বেশি হবে ইংলিশ ফুটবলের জন্য। তবে অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেছেন ‘ব্রেক্সিট’ ইস্যুতে বেশ ক্ষতির মুখেই পড়তে যাচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। আর সেই সঙ্গে পুরো ইংল্যান্ডকে কিছুটা ক্ষতিও গুনতে হতে পারে।

ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন মনে করছে ‘ব্রেক্সিট’ ইংলিশ ফুটবলের জন্য সাপে বর হয়েই আসছে। ব্রেক্সিটের ফলে ইংল্যান্ডের বাইরের দেশগুলোর ফুটবলারদের ইপিএলে খেলার সুযোগে আসবে বেশ কড়াকড়ি। আর এটাকে বেশ স্বাদরেই গ্রহণ করতে চলেছে ইংলিশ ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থাটি। এফএ বলছে, ‘ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন হলে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে দেশের ফুটবলারদের গুরুত্ব বাড়বে। এতে ইংল্যান্ডের ফুটবলাররা ইংলিশ ক্লাবগুলোতে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে। আর শেষ পর্যন্ত এতে উপকৃত হবে ইংল্যান্ড জাতীয় দলই।’

তবে ‘এফএ’র সঙ্গে একমত হতে পারছে না ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের আয়োজকরা। তারা বলছে, ‘ব্রেক্সিট হয়ে গেলে ইংল্যান্ডের ফুটবল যে উপকৃত হবে এমন কোনো প্রমাণ নেই। এতে প্রিমিয়ার লিগের ক্ষতি হবে বলেই মনে করেছেন তারা।’

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে ক্লাবগুলোতে ইংল্যান্ডের ফুটবলারদের সংখ্যা ছিল মোট ফুটবলারদের প্রায় ৭০ ভাগ। যেখানে চলতি মৌসুমে অর্থাৎ ২০১৯-২০ মৌসুমে এই সংখ্যা কমে এসেছে ৩৩ ভাগে। এতে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে ইংলিশ লিগে ইংল্যান্ডের ফুটবলাররাই যেন উপেক্ষিত হচ্ছেন। যেখানে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা ছিল ইংল্যান্ডের ফুটবলারদেরই ঠিক সেখানেই ইংলিশ ফুটবলাররা জায়গা হারাচ্ছেন আন্তর্জাতিক ফুটবলারদের কাছে। আর তাই তো ‘এফএ’ মনে করছে ‘ব্রেক্সিট’ ইস্যুতে সর্বোপরি লাভবান হবে ইংল্যান্ডের ফুটবলাররাই। আর এখানেই বিপরীত অবস্থানে দাঁড়িয়েছে ‘প্রিমিয়ার লিগ’। তারা বলছে এর কোনো সত্যতা নেই যে ‘ব্রেক্সিট’ হলে ইংলিশ ফুটবলাররা লাভবান হবে। আর তারা শঙ্কা জানিয়েছে এই বিষয়টি ঘটলে প্রিমিয়ার লিগ নিজেদের জৌলুস হারাবে।

‘ব্রেক্সিট’কে সামনে রেখে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে ইংলিশ ‘এফএ’। আর তাই তো চলতি মৌসুমেই নিজেদের একাডেমির বাইরে এর আগে ১৭ জন ফুটবলার রাখতে পারলেও এবার থেকে সর্বোচ্চ ১২ জন ফুটবলার রাখতে পারবে। এ কারণেই ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড পল পগবাকে নিজেদের একাডেমির ফুটবলার হিসেবেই রেজিস্ট্রেশন করাতে পেরেছে। নিয়ম অনুযায়ী ২১ বছর বয়সের আগে কোনো ফুটবলার যদি ইংলিশ ক্লাবের সঙ্গে কমপক্ষে তিন বছরের চুক্তি করে তবে সেই ফুটবলারকে নিজেদের একাডেমির হিসেবেই গণ্য করতে পারবে। আর এই নিয়মেই ফ্রান্সের ফুটবলার হওয়া স্বত্বেও পল পগবাকে নিজেদের একাডেমির ফুটবলার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করাতে সক্ষম হয়েছে রেড ডেভিলরা।

ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্যানুসারে প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ ধনী ফুটবল ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ২০১৬-১৭ মৌসুমে রেড ডেভিলদের ক্লাবের মূল্য দাঁড়িয়েছিল সাড়ে চার বিলিয়ন ইউরো। কেবল সেটাই নয়; বিশ্বের সব থেকে ধনী ২০ ক্লাবের মধ্যে ৮টি ক্লাবই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের। এদের মধ্যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়া আরো রয়েছে আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার সিটি, চেলসি, লিভারপুল এবং টটেনহ্যাম হটস্পার্সও।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কমিটি ভাবছে ‘ব্রেক্সিট’র কারণে এই লিগ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হারাবে। এবং সেইসঙ্গে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে হারাবে অর্থও। অর্থাৎ সর্বোপরি ইংলিশ লিগ নিজেদের জৌলুস হারাবে ‘ব্রেক্সিট’ ইস্যুতে এমনটাই বলছেন ‘প্রিমিয়ার লিগ’র আয়োজক কমিটি।

‘ব্রেক্সিট’র আগে পর্যন্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্যান্য দেশগুলোর ফুটবলারদেরও ইংলিশ ফুটবলারদের মতোই সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হতো। ইংল্যান্ডের ফুটবলার ঠিক যেমনভাবে কাজের অনুমতি পেতেন, ইইউ’র ফুটবলাররাও ঠিক সেভাবেই পেতেন সুবিধাসমূহ। তবে এরপর বদলে যাবে এই হিসাব।

ইংলিশ লিগের দলগুলো ‘ব্রেক্সিট’ ইস্যুতে যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন বছর দুয়েক আগে থেকেই। এর মধ্যে ‘দ্য সান’ পত্রিকায় ২০১৭ সালেই প্রকাশিত হয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ৮৮ মিলিয়ন ইউরোর ক্ষতি মুখে পড়েছে সে বছরই। অর্থাৎ বর্তমান সময়ে এই ক্ষতি আরো বাড়তে পারে বলেই জানিয়েছে পত্রিকাটি। আর ব্রিটিশ পত্রিকা মিরর জানিয়েছে গেল দলবদলের মৌসুমে অন্যান্য বারের থেকে খরচ কম করেছে ২২৫ মিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ এরপর থেকে আরো কমে আসবে ইংলিশ ক্লাবগুলোর খরচ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads