• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
ফুটবলে দুরবস্থার অনুসন্ধান হোক

ফাইল ছবি

ফুটবল

ফুটবলে দুরবস্থার অনুসন্ধান হোক

  • তারিক আল বান্না
  • প্রকাশিত ০১ জানুয়ারি ২০২০

একসময় আমাদের এই বাংলাদেশ ছিল ফুটবলের আখড়া, ঢাকা লিগের বড় বড় ম্যাচ কিংবা জাতীয় দলের কোনো প্রদর্শনী অথবা টুর্নামেন্টের ম্যাচে ৫০ হাজারের মতো দর্শক অনায়াসেই হতো বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে। এমনও ঘটনা ছিল, হাজার হাজার দর্শক টিকিট কেটেও গ্যালারিতে প্রবেশ করতে না পেরে বাসায় ফিরে যেত। একটা সম্ভাবনা ও জনপ্রিয়তা ছিল এদেশের ফুটবলের। সেটার কিছুই এখন অবশিষ্ট নেই ফুটবলের। এমন কেন হলো, তার জন্য অনুসন্ধান চালানো উচিত একটি নিরপেক্ষ কমিটির তত্ত্বাবধানে।

ফুটবলকে কেউ কেউ ‘মৃতপ্রায়’ খেলা হিসেবে মনে করে। কষ্ট থেকে হোক কিংবা ক্ষোভ থেকে হোক সেটা মনে করা অন্যায় কিছুই নয়। কিন্তু সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে ফুটবল মৃতপ্রায় খেলাই শুধু নয় পুরোপুরিভাবে মৃত হয়ে পড়েছে বললে ভুল বলা হবে না। সর্বশেষ সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমস ফুটবলে বাংলাদেশের চরম বাজে ফলাফল হতাশ করে সবাইকে। বাংলাদেশ ফাইনালেই উঠতে পারেনি।

এসএ গেমস ফুটবল হলো বিশ্বের সবচেয়ে মানহীন টুর্নামেন্টের একটি। বিশ্বকাপ, অলিম্পিক, ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ, ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইউরোপীয় ইউরোপা লিগ, কোপা আমেরিকা, কোপা লিবার্তাদোরেস, আফ্রিকান নেশন্স কাপ, আফ্রিকান ক্লাব কাপ, এশিয়ান কাপ, এশিয়ান ক্লাব কাপ, কনকাকাফ কাপ, এশিয়ান গেমস ফুটবল ইত্যাদি প্রায় শ খানেক আসর রয়েছে, যার প্রতিটি এসএ গেমস ফুটবলের তুলনায় অনেক বেশি বেশি মানসম্মত। বলা যায়, এসবের ধারের কাছে তো ভালোই যোজন যোজন দূরে অবস্থান এসএ গেমস ফুটবলের। আর সেই এসএ গেমস ফুটবলের ফাইনালেই উঠতে ব্যর্থ আমরা। তাহলে কী এটা স্পষ্ট, বিশ্ব ফুটবলের কোনো অবস্থানেই নেই বাংলাদেশ। এসএ গেমস ফুটবলে কিংবা সাফ (সাউথ এশিয়ান ফুটবল টুর্নামেন্ট) ফুটবলে প্রথমে সেরা হতে হবে। তারপর এশিয়ান গেমস ফুটবল কিংবা এশিয়ান কাপের দিকে চোখ দিতে হবে। এসএ গেমস ফুটবলেই যদি ভালোর না করা যায়, এশিয়ান গেমস বা এশিয়ান কাপ তো চিন্তাই করা যায় না। 

অথচ একসময় হোলগার ওবারম্যানের মতো বিশ্বখ্যাত বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে একসময় দারুণ উচ্চাশা পোষণ করেছিলেন। ১৯৯৫ সালে জার্মানির এই ফুটবল পণ্ডিত ঢাকা লিগে মোহামেডান ও ওয়ারী ক্লাবের খেলা দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বসে। তিনি জানতেন, এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্লাব মোহামেডান ও আবাহনী। এই দুদলের খেলায় গ্যালারি উপচে পড়ত দর্শকে। কিন্তু মোহামেডান ও ওয়ারী ম্যাচেই সেদিন ছিল ৪০ হাজারের বেশি দর্শক। ম্যাচের পরদিন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে এক অনুষ্ঠান শেষে ওবারম্যান মন্তব্য করেন, জার্মানির সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ ও বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ম্যাচেও ২৫-৩০ হাজারের বেশি দর্শক হয় না। তিনি আরো বলেন, ‘এমন ফুটবল জনপ্রিয়তার দেশ বাংলাদেশের খেলাটিতে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এ দেশ ফুটবলে এগিয়ে যাবেই।’ কিন্তু ওবারম্যানের কথা বাস্তবে কিছুই প্রতিফলন ঘটেনি। উল্টো আরো অবনতি ঘটেছে।

ফুটবল র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একেবারেই তলানিতে অবস্থান করছে। ১৯২ নম্বরে শুরু হরে ১৮৭ নম্বরে বছর শেষ করেছে। এটাতে কিন্তু উন্²তি বোঝায় না। যাইহোক, এটা তো হওয়ার কথা ছিল না। তবে কেন হলো তা খতিয়ে দেখা দরকার। বাংলাদেশ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা কখনো অর্জন করতে পারবে কি না, তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহই জানে। অথচ চার বছর পর পর বিশ্বকাপ ফুটবলের চূড়ান্ত আসর এলে সারা বাংলাদেশে যে কি জোয়ার পড়ে যায় তা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। এদেশের মানুষ একটা মাস শিহরণের মধ্যে উৎসবের আবেশে কাটায়। বিশ্বকাপ ফুটবল এলে বাংলাদেশে টিভি ক্রয়-বিক্রয় অনেক বেড়ে যায়। স্কুল-কলেজে ছুটির আমেজ লক্ষ করা যায় একটি মাস ধরে। এতেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের ফুটবলের প্রতি আকর্ষণ না থাকলেও ফুটবলের ব্যাপারে ভালোবাসা বিন্দুমাত্রও নষ্ট হয়নি আমাদের। আর তাই জরুরি হয়ে পড়েছে, ফুটবলের দুরবস্থার কারণ খুঁজে বের করা।

স্পষ্টভাবে কারণ খুঁজে পেলেই ফুটবলে উন্²তির পথ বের করা যাবে। এটা অনেকটাই রোগ খুঁজে বের করে চিকিৎসা করার মতোই। কেউ কেউ মনে করেন, অর্থাভাবে বাংলাদেশ ভালো বিদেশি কোচ আনতে পারছে না বলেই ফুটবলে এগিয়ে যেতে পারছে না। ক্যামেরুন, নাইজেরিয়া, আইভরিকোস্ট, সেনেগালের মতো দেশ বিশ্বকাপে দাপটের সঙ্গে খেলে প্রমাণ করেছে, অর্থের অভাবে ফুটবলে এগিয়ে না যাওয়ার যুক্তি পুরোপরি ভুল। কেউ আবার উচ্চতাকে সামনে নিয়ে আসেন। কিন্তু জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া প্রমাণ করেছে, এটাও কোনো অজুহাত নয়। তা ছাড়া, পেলে ও ম্যারাডোনা কিন্তু একেবারেই খাটো টাইপের মানুষ। কিন্তু তারা বিশ্ব ফুটবলে কোন জায়গায় রয়েছে, সেটা সবাই জানে। কেউ হয়তো ভাবতে পারে, শারীরিক শক্তি কম থাকায় বাংলাদেশ ভালো করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ইতালি কিন্তু চারবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। তারা কিন্তু শারীরিক শক্তি কখনই প্রয়োগ করে না।

আসলে বাংলাদেশ কেন ফুটবলের সেই চমৎকার পজিশন থেকে বিচ্যুতি হলো, কেন আমাদের দর্শকরা মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচেও আকর্ষণ পায় না, কেন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না আমাদের জামাল ভূঁইয়ারা, কেন বড় কোনো ম্যাচ খবরের গুরুত্বপূর্ণ শিরোনাম হয় না-এসবের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করতে হবে। আর এ দায়িত্বটা তাদেরই, যারা ফুটবলকে পরিচালনা করেন। একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই সমাধান পাওয়া যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এদেশের মানুষ ফুটবলকে অত্যন্ত ভালোবাসে। কিন্তু ফুটবল থেকে তারা কিছুই পায় না। যারা বারবার ফুটবলের বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য অনেক সাধনা করেন, তারা পদে বসে ভুলেই যান, তাদের কিছু করণীয় রয়েছে।  

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads