• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

ফুটবল

কাঁদছে বিশ্ব

প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে মরদেহ থাকবে তিন দিন

  • তারিক আল বান্না
  • প্রকাশিত ২৭ নভেম্বর ২০২০

বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাডোনা নেই। পরপারের তালিকায় যুক্ত হয়েছে তার নাম। হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো রূপকথার নায়ক ম্যারাডোনা। যার গুণের বর্ণনা লিখে শেষ করা যায় না। যার ফুটবল জাদুতে মুগ্ধ সারা বিশ্ব। সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি এই ম্যারাডোনা। ‘আমি খুব অসুস্থ অনুভব করছি’-এটাই ছিল মৃত্যুর আগে ম্যারাডোনার মুখ থেকে বের হওয়া জীবনের শেষ কথা। সবাইকে শোকে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন ছিয়াশির বিশ্বকাপের মহানায়ক দিয়াগো ম্যারাডোনা। তার মৃত্যুতে কাঁদছে গোটা ফুটবল বিশ্ব। আর্জেন্টিনা থেকে ইতালি, বাংলাদেশ থেকে স্পেন, কিউবা থেকে ফিলিস্তিন-সবখানেই শোকের মাতম। ফুটবল রাজপুত্রের বিদায়ে তার নিজের দেশ আর্জেন্টিনায় তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ। তার কফিন আপাতত আর্জেন্টিনার  রাজধানী বুয়েনাস আয়ার্সের প্রেসিডেন্ট ভবন ‘ক্যাসা রাসোদা’র সামনে রাখা হয়েছে। সেখানে অগণিত ভক্ত শেষবারের মতো বিদায় জানাচ্ছে তাকে কফিনে রাখার পর থেকে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তাকে ওখানেই রাখা হবে। সেখানে উপস্থিত লোকজনের চোখে ছিল পানি।

এর আগে, ম্যারাডোনার মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর হাজার হাজার শোকগ্রস্ত মানুষ নেমে এসেছিল বুয়েন্স আয়ার্স এবং ইতালির নেপলসের রাস্তায়। তারা এমনভাবে শোক জানাচ্ছিল, যেন নিজের কোনো আপনজন হারিয়ে গেছে। ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলিকে খ্যাতির চূড়ায় তুলে দিয়েছিলেন এই ম্যারাডোনা। বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচগুলো চলাকালীন পুরো ইউরোপের স্টেডিয়ামগুলোতে নেমে এসেছিল পিনপতন নিস্তব্ধতা।

কয়েক দিন আগেই সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছিলেন ম্যারাডোনা। নিজ বাড়িতে বুধবার স্থানীয় সময় বিকালে হঠাৎ করেই বুকে ব্যথা শুরু হয় আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তির। এরপর হাসাপাতালে নেওয়ারও সুযোগ মেলেনি। তার প্রিয় বন্ধু কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো যে তারিখে মৃত্যুবরণ করেছিলেন ঠিক একই তারিখে অনন্তের পথে পাড়ি জমান ম্যারাডোনা। হঠাৎ এভাবে চলে গেলেন ম্যারাডোনা, কিংবদন্তির আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না ফুটবল দুনিয়া। নানা ঘাত-প্রতিঘাত নিয়েই ছিল ম্যারাডোনার জীবন। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের ঘরে জন্ম তার। এটা সৃষ্টিকর্তারই ইশারা। ফলে ছোটবেলা থেকেই তার সংগ্রামী জীবন। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত প্রতিভার সঠিক ব্যবহার করেছেন বলেই তিনি সবার কাছে পরিচিত, প্রিয় ম্যারাডোনা। মানুষের জীবনে ভুল কিছু হতেই পারে। ম্যারাডোনার জীবনেও হয়েছে। তিনি ড্রাগ আসক্ত ছিলেন, এ কথা মিথ্যে নয়। কিন্তু এটাই সবকিছু নয়। তিনি ফুটবলশৈলীর যে ছাপ রেখে গেছেন তার তুলনা হয় না। ফুটবল জাদুতে মুগ্ধ করেছেন বিশ্ববাসীকে। কী অসাধারণই না ছিল তার খেলার স্টাইল, প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা বুঝতেই পারত না কী হতে কী হয়ে যায়, কী অঘটন ঘটিয়ে ফেলেন তিনি! এসব দর্শকদের মনে কী যে ছোঁয়া দিয়ে গেছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। একজন ফুটবল খেলোয়াড়ের জন্য এত ভালোবাসা, কখনো কেউ দেখেনি, কেউ ভবিষ্যতেও দেখবে না। তাই ম্যারাডোনার মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু তিনি আছেন এবং থাকবেন। তাকে শারীরিকভাবে আর দেখা যাবে না এই পৃথিবীতে, তবে সবকিছুই থেকে যাবে।     ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলিতে ১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত প্রায় সাত বছর খেলেছেন ম্যারাডোনা। কিংবদন্তির এমন বিদায়ে শোকাহত তার ক্লাব। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘শহর ও ক্লাবের জন্য অনেক বড় এক ধাক্কা। আমরা শোকাহত। মনে হচ্ছে একজন মুষ্টিযোদ্ধা ছিটকে গেলেন। আমরা স্তম্ভিত। সব সময় আমাদের হূদয়ে থাকবে, দিয়াগো।’

ম্যারাডোনার দেশ আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন টুইটারে শোক জানিয়েছে এভাবে, ‘আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ক্লদিও তাপিয়ার মাধ্যমে আমাদের কিংবদন্তি দিয়াগো আরমান্দো ম্যারাডোনার মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আপনি সব সময় আমাদের হূদয়ে থাকবেন।’ স্বদেশি ক্লাব বোকা জুনিয়র্সে দুই দফায় ১৯৮১-৮২ এবং ১৯৯৫-৯৭ মৌসুমে খেলেছেন ম্যারাডোনা। তারা শোক জানিয়েছে এভাবে, ‘অশেষ ধন্যবাদ। অমর দিয়াগো।’

আর্জেন্টাইন ক্লাব নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজে ম্যারাডোনা খেলেছেন ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে। তারাও ঘরের ছেলেকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ। ক্লাবটি লিখেছে, ‘কিছু বলার ভাষা নেই। ওপারে ভালো থাকবেন দিয়াগো।’

লা লিগার ক্লাব বার্সেলোনাতেও খেলেছেন ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত। তারা লিখেছে, ‘এফসি বার্সেলোনা আমাদের ক্লাবের খেলোয়াড় এবং বিশ্ব ফুটবলের আইকন দিয়াগো আরমান্দো ম্যারাডোনার মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে। ওপারে ভালো থাকবেন দিয়াগো। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ।’

লা লিগার আরেক সফল ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ শোক জানিয়ে লিখেছে, ‘রিয়াল মাদ্রিদ এবং এর প্রেসিডেন্ট বিশ্ব ফুটবলের কিংবদন্তি দিয়াগো আরমান্দো ম্যারাডোনার মৃত্যুতে গভীর শোক জানাচ্ছে। ‘তার পরিবার, বন্ধু, ক্লাব এবং সব ফুটবল ভক্ত বিশেষ করে আর্জেন্টিনার, তাদের জন্য সমবেদনা। তিনি অসংখ্য ভক্তকুল রেখে গেছেন। বিশ্বজুড়ে লাখো ভক্তের কাছে কিংবদন্তি তিনি।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads